Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Madhyamik Examination 2024

হার না মানা জেদে মাধ্যমিকের দোরগোড়ায়

সিউড়ির ‘শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট ফর সাইটলেস’-এর পড়ুয়ারা গত কয়েক বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় নজরকাড়া ফল করেছে। এ বার আগের থেকেও ভাল ফল করতে চাইছে এই তিন জন।

প্রস্তুতিতে মগ্ন বাবলু, আয়ুব ও মুস্তাসিন।

প্রস্তুতিতে মগ্ন বাবলু, আয়ুব ও মুস্তাসিন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৫
Share: Save:

জন্ম থেকেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মুস্তাসিন ওয়াসিম, খয়রাশোল ব্লকের পাঁচড়ার আইয়ুব মিঞা এবং রাজনগর ব্লকের ভবানীপুরের বাবলু মাহারার দৃষ্টিশক্তি নেই। তার পরেও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে প্রাথমিক থেকে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে তিন জনেই এ বার মাধ্যমিকের দোরগোড়ায়।

জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে চিন্তা ও ভয় রয়েছে তিন জনের মনেই। তবে সে সবকে উপেক্ষা করে মাধ্যমিকে ভাল ফল করার আশায় পড়াশোনায় ডুব দিয়েছে তারা। সহযোগিতা করছেন শিক্ষকরাও। পাঠ্যবিষয় ও তার আলোচনা রেকর্ড করে দেওয়া হয়েছে তিন পড়ুয়াকে। সেগুলি শুনে শুনে এবং ব্রেল পাঠ্যবই পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

সিউড়ির ‘শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট ফর সাইটলেস’-এর পড়ুয়ারা গত কয়েক বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় নজরকাড়া ফল করেছে। এ বার আগের থেকেও ভাল ফল করতে চাইছে এই তিন জন। ১৯৯০ সালে সিউড়ির ডাঙ্গালপাড়ায় দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের জন্য স্থাপিত হয় এই স্কুল। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে বহু দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা এখানে আসেন পড়াশোনা করতে। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর ছাড়পত্র রয়েছে এই স্কুলের। নবম ও দশম শ্রেণির দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা সিউড়ি শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়, তবে তাদের পড়ানোর দায়িত্বও থাকে এই স্কুলের শিক্ষকদের উপরেই।

বর্তমানে এই স্কুলে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মোট ৫৪ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জন পড়ুয়া এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দাস জানান, পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য ব্রেলে লেখা পাঠ্যবই রয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই, প্রস্তুতিতে সুবিধার জন্য প্রত্যেকটি ক্লাস অডিয়ো রেকর্ড করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি চালিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি সারছে পরীক্ষার্থীরা। সন্দীপ বলেন, “স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়, পাঠ্যবইয়ের সংখ্যাও কম। তবে তারই মধ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। গত কয়েক বছর আমাদের স্কুল থেকে মাধ্যমিকে বেশ ভাল ফলাফল হয়েছে। এ বারও সেই ধারা বজায় রাখতে সচেষ্ট তারা।”

পরীক্ষার্থী বাবলু বলে, “আমরা তিন জনে এক সঙ্গেই হস্টেলে এবং ক্লাসরুমে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বই ও রেকর্ডিং ছাড়াও যখনই প্রয়োজন হয় আমরা শিক্ষকদের সহযোগিতা পাই। দশম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি, আমরা স্কুলের নাম রাখতে পারব।”

বীরভূম জেলা স্কুলে সিট পড়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বারও পড়ুয়াদের যাতায়াতের দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসনই। প্রশাসনের তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri Blind Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE