Advertisement
E-Paper

ঘরে বসে থাকতে কষ্ট, এলাকায় জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছেন ছাত্রী

তরুণী বড়জোড়া-সহ আশপাশের এলাকায় ওষুধের দোকানে, কখনও আবার জনবহুল এলাকা থেকে রাজনৈতিক দলের অফিসে জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছেন নিখরচায়।

তারাশঙ্কর গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২১ ০৭:০৬
‘হাতিয়ার’ নিয়ে বড়জোড়ার পূজা মণ্ডল।

‘হাতিয়ার’ নিয়ে বড়জোড়ার পূজা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

বছর কুড়ির এক তরুণীকে রাস্তায় শববাহী গাড়িতে জীবাণুনাশক ছড়াতে দেখে অবাকই হয়েছিলেন বাঁকুড়ার বড়জোড়ার পথচলতি মানুষজন। এক-আধ দিন নয়, গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে ওই তরুণী বড়জোড়া-সহ আশপাশের এলাকায় ওষুধের দোকানে, কখনও আবার জনবহুল এলাকা থেকে রাজনৈতিক দলের অফিসে জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছেন নিখরচায়। বড়জোড়ার বাসিন্দা, আসানসোলের বি বি কলেজের প্রাণিবিদ্যার প্রথম সিমেস্টারের ছাত্রী পূজা মণ্ডলের এই কাজের প্রশংসা করছেন বাসিন্দারা।

হঠাৎ এমন কেন উদ্যোগ? পূজার কথায়, ‘‘করোনার সময় মানুষের কষ্ট দেখে ঘরে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকতে মন ছটফট করছিল। তাই ফোন করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধারকে বলি, আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। এ ভাবে বাড়িতে বসে অন্যের কষ্ট দেখতে পারছি না।’’ তিনি জানান, এরপরে নিজেই প্রস্তাব দেন, বড়জোড়া ব্লকের ওষুধের দোকান, জনবহুল এলাকা জীবাণুনাশক করবেন তিনি। তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে সংগঠনের এক জন করে সদস্য রোজ পূজার সঙ্গে থাকেন। সংগঠনের তরফেই জীবণুনাশক যন্ত্র ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বড়জোড়া, হাটআশুড়িয়া, ঘুটগড়িয়ার বিভিন্ন ওষুধের দোকান, জনবহুল এলাকায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবাণুনাশক ছড়িয়ে যাচ্ছেন। লোকজন জমায়েত করেন বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকটি কার্যালয়েও তিনি জীবাণুনাশক ছড়িয়েছেন।

তাঁর এই উদ্যোগে আপ্লুত বড়জোড়ার এক ওষুধ ব্যবসায়ী সোমনাথ পাল বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কত রকম রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা আসেন। তাই করোনা-যুদ্ধে আমরা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করছি। অথচ এই প্রথমবার কেউ ওষুধের দোকানগুলি জীবাণুনাশ করার কথা ভাবলেন। এক জন ছাত্রী যখন এগিয়ে আসেন সমাজের কাজে, তখন ভরসা পাই আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হাতেই আছে।’’ বড়জোড়ার হাটআশুড়িয়ার একটি ওষুধ দোকানের কর্মচারী সিরাজুল মণ্ডল বলেন, ‘‘এক তরুণী স্বেচ্ছায় দোকান জীবাণুনাশক করতে এসেছেন দেখে অবাক হয়েছিলাম। আমাদের সুরক্ষার কথা নতুন প্রজন্ম ভাবছে, এটা মনে শান্তি দেয়।’’

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পূজা আমাদের জানিয়েছিলেন তিনি রাস্তায় নেমে কাজ করতে চান। যদিও তিনি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই আমাদের সঙ্গে নানা সামাজিক কাজে যুক্ত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাঁকে বলেছিলাম, রাস্তায় নেমে কাজ করতে হলে বাবা-মায়ের অনুমতি নিতে হবে।’’ বাধা দেননি তাঁরাও। পূজার মা টুম্পা মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়ে এই বয়স থেকেই মানুষের জন্য কাজ করতে চায়, এর থেকে গর্বের কী হতে পারে। সকালে অনলাইনে প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা দিয়ে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত জীবাণুনাশক করে। আবার রাতে পড়াশোনা করছে। ওকে বলেছি নিজের সুরক্ষার কথা যেন না ভোলে।’’ বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্ম সামাজিক কাজে এগিয়ে আসছে, এটা শুভ লক্ষণ।’’ পূজার কথায়, ‘‘বাড়ি বসে মানুষের কষ্ট দেখার থেকে তাঁদের জন্য কিছু কাজ করলে মনে শান্তি আসে। তবে একটি মেয়ের সামাজিক কাজে নামা এখনও একটা লড়াই। এ লড়াই জারি থাকবে।’’

coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy