আবর্জনায় ভরেছে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর। —নিজস্ব চিত্র।
কখনও ঝাড়ুদার থাকে তো ঝাঁটা থাকে না, আবার কখনও ঝাঁটার সংস্থান হলে ঝাড়ুদারেররা হাত গুটিয়ে নেন। এর ফলে সাফাই সঙ্কটে ভুগছে নানুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র!
কার্যত এই জোড়াতালি দিয়েই চলছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিস্কার–পরিচ্ছন্নের কাজ। পরিস্থিতি এমনই যে, রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। অভিযোগ, স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও হেলদল নেই। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই নয়, বাম আমল থেকেই রাজ্যের বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ডাক্তার-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পদ ফাঁকা রয়েছে। আমরা তা একে একে পূরণ করছি। নানুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
শুধু ঝাড়ুদারই নয়, এর আগেও ২০১২ সালে টানা ২৪ দিন ঝাঁটার অভাবে সাফাই বন্ধ ছিল ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ওই সময় ঝাঁটা কেনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্লার্ক বদলি হওয়ার পর তাঁর স্থলে দীর্ঘ দিন কেউ যোগ না দেওয়ায় ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ রয়েছেন ৪ জন ঝাড়ুদার। বছর দশেক আগেই তাঁরা একে একে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু সেই জায়গায় আজও কোনও স্থায়ী ঝাড়ুদার নিয়োগ করা হয়নি। তিনজনকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করে কাজ চালানো হচ্ছে। এর ফলে শুধু সাফাই নয়, চাপ পড়ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনাতেও। ওইসব অস্থায়ী ঝাড়ুদারদের সব মিলিয়ে মাসে বেতন বাবদ দিতে হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। এ জন্য আলাদা করে কোনও টাকা মেলে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালন বাবদ পাওয়া মুক্ত তহবিল থেকেই তা দিতে হয়।
ঘটনা হল, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র মুক্ত তহবিল বাবদ পায় বছরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সেই টাকাতেই সারা বছর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছোটখাটো সংস্কারের কাজ, কাগজ, আসবাব পত্র কেনা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা, মাসিক বৈঠকের চা-বিস্কুট-সহ অন্যান্য খরচ চালাতে হয়। তাই ঝাড়ুদারদের বেতন মেটাতে গিয়ে কোপ পড়ে ওইসব বরাদ্দে। সব দিক সামলাতে গিয়ে কোপ পড়ে ঝাড়ুদারদের বেতনে। তখন হাত গুটিয়ে নেন ঝাড়ুদাররা। আর তার ফলে দিনের দিন আবর্জনার পাহাড় জমে কার্যত নরক হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর। গত নভেম্বর মাসেই ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ অর্থাভাবে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বেতন বন্ধ হয়ে যায় ওইসব অস্থায়ী ঝাড়ুদারদের। বকেয়া বেতনের দাবিতে তাঁরাও কাজ বন্ধ করে দেন।
পাকুরহাঁসের হারাধন ঘোষ, সাওতার মৈয়ত্রী মজুমদাররা বলেন, ‘‘ওইসময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী নিয়ে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। দুর্গন্ধে আমাদেরই দমবন্ধ অবস্থা হয়েছিল। তাই রোগী নিয়ে বোলপুরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম।’’ ঝাড়ুদার কবিতা হাজরা, রক্ষাকর হাজরা এবং সঞ্জীব হাজরারা জানান, কাজ বন্ধ না করে আমাদের কোনও উপায় ছিল না। এমনিতেই যৎসামান্য বেতনে আমাদের কাজ করতে হয়। তার উপরে মাসের পর মাস বেতন না পেলে আমাদের তো ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুকিয়ে মরতে হবে। সরকার তো আমাদেরই স্থায়ীভাবে নিয়োগ করতে পারে। তাহলে আমরা একটু ভালভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাফাইয়েরও কোনও সমস্যা হয় না।
ব্লক প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশ্য সাময়িকভাবে ওই সমস্যা মিটেছে। ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে ২ জন ঝাড়ুদারকে জবকার্ডে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্লক প্রশাসনেরই কর্মীদের একাংশ। তাঁদের মতে, একজন ঝাড়ুদারের নির্ধারিত মাসিক বেতন ৩ হাজার টাকা। সেই হিসাবে তাঁর বছরে পাওনা হয় ৩৬ হাজার টাকা। কিন্তু ১ জন মজুরকে বছরে সর্বাধিক কাজ দেওয়া যায় ১০০ দিন। সেই হিসাবে ওই কাজ বাবদ তার সর্বাধিক প্রাপ্য হয় প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ টাকা।
এ ভাবে কত দিন?
ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্থায়ী ঝাড়ুদার নিয়োগ ছাড়া ওই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। অন্যান্য ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতোই আমরাও সমহারেই মুক্ত তহবিলের টাকা পাই। অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র যখন সমস্ত টাকা পরিচালন বাবদ খরচ করতে পারে তখন আমাদের আরও একজন ঝাড়ুদার এবং একজন আয়াকে মাসে প্রায় দেড় হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। এরপর যদি সব ঝাড়ুদারকেই বেতন মেটাতে হয় তাহলে তো স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানোটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ আশিসবাবু বলেন, ‘‘অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণের বিষয়টি আইন সাপেক্ষ। তাই খোঁজ না নিয়ে ওই বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy