নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজ্যের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। যে যে জেলাগুলিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, বীরভূম নেই সেই তালিকায়। কিন্তু, আবহাওয়ার মতিগতি বোঝা ভার! তাই ধান পেকে গিয়ে থাকলে চাষিদের সেটা দ্রুত কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছে জেলা কৃষি দফতর।
প্রশ্ন হল, সত্যিই যদি কার্তিকের শেষ লগ্নে বৃষ্টি হয় তাহলে কি ফসল ঘরে তোলার মতো পরিস্থিতিতে আছেন চাষিরা? জেলার চাষি ও কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সেটা সম্ভব নয়। কারণ, প্রথম দিকে কৃপন ও বিলম্বিত বর্ষার কারণে এমনিতেই ধান রোয়া শেষ করতে করতে অগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক হয়ে গিয়েছিল। ধান রোয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৮ হাজার হেক্টর থাকলেও চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ জমিতে। এখনও জেলার অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমির ধান পরিণত হয়নি।
ধান কাটা শুরু হলেও সেটা গতি পেতে আরও সাত-দশ দিন অপেক্ষার প্রয়োজন। এই সময়ে সামান্য বৃষ্টিপাতে ক্ষতি বিশেষ হওয়ার নয় বলেই চাষিদের মত। তাঁদের ভয় দমকা হাওয়াকে। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা শিবনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘বীরভূমে নিম্নচাপের প্রভাব পড়ার কথা নয়। এ পর্যন্ত ৭ শতাংশ জমিতে ধান কাটা হয়েছে। শুধু বৃষ্টি হলে চিন্তার কিছু নেই।’’
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন আন্দামান সাগরে তৈরি হয়েছিল নিম্নচাপ অঞ্চল। এই নিম্নচাপের প্রভাবে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনার কিছু অংশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সঙ্গে বইতে পারে দমকা হাওয়া। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমানের কিছু অংশেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। বীরভূমকে সেই তালিকায় রাখা হয়নি।
কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর গড়াতেই মেঘে ছেয়েছে জেলার আকাশ। শান্তিনিকেতন আবাহাওয়া অফিসার ইনচার্জ বিষ্ণুপদ কোনাইয়ের মতে, নিম্নচাপের খুব একটা প্রভাব পড়ার কথা নয় এই জেলায়। তবে, বৃহস্পতি ও শনিবার মেঘলা আকাশ থাকার পাশাপাশি জেলায় হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে শুক্রবার। তবে নিম্নচাপের জেরে যে জেলাগুলি প্রভাবিত হতে পারে সরকারের তরফে সেই সব জেলার চাষিদের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আলু চাষের প্রস্ততি পিছিয়ে দিতেও বলা হয়েছে। জমিতে সার প্রয়োগ না-করতে এবং জমিতে যাতে বৃষ্টির জল না-জমে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এতেই কিছুটা চিন্তিত বীরভূমের চাষিদের একাংশ। মুরারই ১ ব্লকের কনকপুরের চাষি রাকেশ শেখ বলেন, ‘‘৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন মোবাইলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়। সেটা দেখে ইতিমধ্যেই তিন বিঘা জমির ধান কেটে নিয়েছি। বাকি জমির ধান উপরওয়ালার ভরসায়।’’ তবে উল্টো কথা বলছেন খয়রাশোলের ডেমুরিয়ার চাষি শিবশঙ্কর পাল। বৃহস্পতিবার পুকুর থেকে পাম্পের সাহায্য জল তুলে ধান খেতে সেচ দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দিকে বৃষ্টি ঠিকমতো হয়নি বলে মাত্র দু’বিঘা জমি চাষ করেছিলাম। এখনও দিন দশেক লাগবে বাকি ধান ঘরে তুলতে। জমি শুকিয়েছে বলে সেচ দিচ্ছি। এই সময় বৃষ্টি হলে ক্ষতি নেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)