জখম: হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
একটি বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে সালিশি বসেছিল গ্রামে। আর সেই তা দেখতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হলেন এক মহিলা।
বৃহস্পতিবার রাতে বোলপুর থানার ঘিদহ গ্রামের ঘটনা। অভিযোগ, সালিশি চলাকালীন বচসার জেরে মেয়ের বাড়ির লোকেরা আচমকা গুলি চালিয়ে দেন। সেই গুলি পাশেই একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদা বিবি নামে ওই মহিলার পা ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনার পরেই দুই পরিবারের পুরুষেরা গ্রামছাড়া। জখম মহিলা বর্তমানে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মহিলার ডান হাঁটুর নীচে গুলি লেগেছে। আপাতত তিনি বিপদমুক্ত। ঘটনায় মহিলার পরিবার এখনও পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের চেষ্টা ও অস্ত্র আইন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে ঘিদহ গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা দানেশ শেখের ছেলে উজ্জ্বলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পশ্চিমপাড়ার ওসমান শেখের মেয়ে আশা খাতুনের। বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। সম্প্রতি দুই পরিবারের সদস্যেরা নিজেদের মধ্যে সালিশিতে বসে বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয়। এমনকী, বিয়ের সময় খরচ হওয়া দু’ লক্ষ টাকা মেয়ের পরিবারকে ফিরিয়ে দিতেও উজ্জ্বলের পরিবার সম্মত হয় বলে দাবি। সেই মোতাবেক বৃহস্পতিবার গ্রামেই ছিল দুই পরিবারের চূড়ান্ত সালিশি। ওই বৈঠকের গ্রামবাসীর একাংশের উপস্থিতিতে আশার পরিবারের হাতে ওই টাকা তুলে দেওয়ার কথা ছিল পাত্র পক্ষের। ওই সালিশি দেখতে গিয়েই মাহমুদা গুলিবিদ্ধ হন।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, ওই দিনের সালিশিতে পরিবারিক সমস্যার কথা জানিয়ে টাকা মেটানোর জন্য আরও দিন দশেক সময় চায় উজ্জ্বলের পরিবার। তা শুনেই খেপে ওঠে পাত্রীপক্ষ। অভিযোগ, কথা কাটাকাটি শুরু হতে না হতেই আচমকা গুলি চালিয়ে দেওয়া হয়। সালিশি দেখতে কাছেই একটি গাছের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পূর্বপাড়ার বধূ মাহমুদা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি লুটিয়ে পড়েন। দেখা যায় তাঁর পায়ে গুলি বিঁধে রক্ত ঝরছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পাত্রীর এক সম্পর্কিত দাদু কামু মল্লিক (এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের মতো নানা অপরাধের ঘটনায় অভিযুক্ত) আচমকা পিস্তল থেকে গুলি চালান। অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে চালানো গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মাহমুদার হাঁটুতে গিয়ে লাগে।
রাতেই গুলিবিদ্ধ মাহমুদাকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার হাসপাতাল চত্বরে জখম মহিলার মাসিশাশুড়ি নাজিবা বিবি বলেন, ‘‘অনেকের মতো মাহমুদাও সালিশি দেখতে দাঁড়িয়েছিল। কোথা থেকে কী হল, কী করে গুলি এসে লাগল, আমরা বুঝতে পারিনি।’’ কে গুলি চালিয়েছে? মাহমুদার দাবি, ‘‘কে কোথা থেকে গুলি করল জানি না।’’ পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়ে এ দিন গ্রামে উভয় পরিবারের কোনও পুরুষকেই দেখা যায়নি। বাড়িতে থাকা মহিলারা ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতেও রাজি হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy