অলিম্পিক দিবসে কাশীপুরে পদযাত্রা। রবিবারের নিজস্ব চিত্র।
খো খো, কবাডি, বক্সিং, তিরন্দাজির মতো খেলাতেও ফুটবল-ক্রিকেটের মতো কেরিয়ার গড়া যায়। রবিবার পুরুলিয়ার কাশীপুরে শ’য়ে শ’য়ে জড়ো হওয়া ক্রীড়াপ্রেমী তরুণ প্রজন্মের কাছে সে বার্তাই দিলেন বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা।
এ বছর অলিম্বিক দিবস পালনের জন্য সারা রাজ্যের মধ্যে কাশীপুরকেই বেছে নেওয়া হয়। রবিবার সেই উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের খেলোয়াড় ও ক্রীড়ানুরাগীরা জড়ো হয়েছিলেন পঞ্চকোটরাজ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। দিনভর নানা অনুষ্ঠান চলল।
এ দিন সকালে বৃষ্টির ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে কয়েক হাজার মানুষ এসেছিলেন। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, মশাল দৌড়ের মাধ্যমে এই দিবস উদ্যাপনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক চন্দন রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে এত দূরে এখানে এত খেলোয়াড়, ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ পেয়ে সত্যি ভাল লাগছে। আমরা ভবিষ্যতে এখানে আরও কর্মসূচি নিতে চাই।’’ তিনি তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘বক্সিং, খোখো, কবাডি-সহ আরও যে সব খেলাধুলো রয়েছে তাতে আগ্রহী হলে আপনারা এগিয়ে আসুন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমরা সহায়তা করব।’’
সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় (বাবুন) বলেন, ‘‘খেলাধুলোর জন্য একটা পরিবেশ প্রয়োজন। সেটা কিন্তু এখানে রয়েছে।’’ তাঁরা জানান, খেলোয়াড় থেকে ক্রীড়াপ্রেমী সব মানুষজনের মধ্যে উৎসাহ জোগাতেই জেলায় জেলায় এই দিনটিতে (২৮ ফেব্রুয়ারি) তাঁরা নানা কর্মসূচি নিয়ে আসছেন। সংস্থার আর এক সদস্য ভারতশ্রী তুষার শীল বলেন, ‘‘বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে ৪৩টি খেলা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও খেলাধুলোয় উৎসাহী। এখন রাজ্য সরকারের ক্রীড়ানীতি বিধানসভায় পাশ হয়। খেলাধুলোয় কেরিয়ার গড়া যায়। প্রতিভা থাকলে সেই প্রতিভাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’’ এ জন্য তিনি অভিভাবকদের আহ্বান জানান।
স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিষয়ক কমিটির সদস্য স্বপন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘আমরা কয়েকমাস আগে এই এলাকা থেকেই তিন শতাধিক মহিলা ফুটবল দল ও তার থেকেও বেশি পুরুষ দল নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা করেছি। গ্রামের পর গ্রাম থেকে মেয়েরা বেরিয়ে এসে নিজেরা দল গড়ে ফুটবল খেলতে মাঠে নেমেছে। এখানে ফুটবল প্রায় আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে।’’ তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কাশীপুরে মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখানে তাঁরা প্রশিক্ষণ পেয়ে আরও ভাল খেলতে পারবেন।’’ প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার কার্তিক শেঠ জানিয়ে যান, কম বয়েসি খেলোয়াড়রা ফুটবলে উৎসাহী হলে তিনি প্রশিক্ষণ দিতে আসবেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখান থেকে প্রতিভা খুঁজে কলকাতার মাঠে খেলারও ব্যবস্থা করব।’’ একই আশ্বাস দিয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
অনুষ্ঠানের পরে প্রাক্তন খেলোয়াড়, সংস্থার কর্তারা এবং এলাকার খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমী মানুষজনদের নিয়ে একটি বিরাট পদযাত্রা বের হয়। ১০০টি ক্লাবকে ফুটবলও দেওয়া হয়। পদযাত্রায় থাকা কালীদহ গ্রামের পুরুষোত্তম রাজোয়াড়, ডহতলার নরেন হাঁসদা, শিউলিবাড়ির মালতী টুডু, মণিকা মুর্মুরা বলেন, ‘‘এ রকম একটা দিবস পালনে আমরা আগে কখনও যোগ দিইনি। এতমানুষ খেলাধুলো ভালবাসেন দেখে নিজেরা খুব ভাল খেলার উৎসাহ পেলাম।’’
কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘এই জেলার মেয়ে পিঙ্কি প্রামাণিক অ্যাথলিটে জাতীয় স্তরে পরিচিত নাম। সম্প্রতি জেলার আর এক মেয়ে সোমা কর্মকারও চিনে ওয়ার্ল্ড স্কুল গেমসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এক সময়ে এই জেলা খেলাধুলোয় অগ্রণী ছিল। আমরা সেই পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy