Advertisement
০৬ মে ২০২৪
বন্ধ করতে হল ওভার হেড তারের বিদ্যুৎ সংযোগ, ট্রেন চলাচল ঘণ্টা খানেকের জন্য ব্যাহত বাঁকুড়ায়

ট্রেনের ছাদে চড়ে কুড়ুল হাতে নাচ যুবকের

এ দিকে দৌড়তে দৌড়তে ওই যুবক স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা আপ খড়্গপুর আদ্রা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের একেবারে ইঞ্জিনের উপরে উঠে পড়েন। হইচই পড়ে যায় স্টেশনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০২:৩০
Share: Save:

প্ল্যাটফর্মের ভিতরে হাতে কুড়ুল নিয়ে দৌড়ে চলেছেন সুঠাম চেহারার এক যুবক। তার পিছনে আওয়াজ তুলে ছুটছেন রেল পুলিশের কর্মীরা। আততায়ী নয়, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবক। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকুড়া প্ল্যাটফর্মে প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে সবাইকে ব্যাতিব্যস্ত করে, ট্রেন লেট করিয়ে ফের পরিবারের কাছে ফিরেছেন তিনি।

ওই যুবককে কুড়ুল নিয়ে দৌড়তে দেখে প্রাথমিক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যাত্রীরা। অনেকেই ভেবেছিলেন, আততায়ী। খড়্গপুর়-আদ্রা ট্রেনে স্বামী পরেশ দত্তর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন আঁচুড়ির বধূ সুপ্রিয়া দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘এক ঝলক দেখে বোঝার উপায় ছিল না ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন।’’

এ দিকে দৌড়তে দৌড়তে ওই যুবক স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা আপ খড়্গপুর আদ্রা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের একেবারে ইঞ্জিনের উপরে উঠে পড়েন। হইচই পড়ে যায় স্টেশনে। এর পরে ওই যুবক কী করেন তা ভেবে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার যোগাড় উপস্থিত লোকজনের। ভয়ে ট্রেনের ভিতর থেকেও বেরিয়ে পড়েন অনেক যাত্রী।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে ওই যুবক পরনের টি-শার্ট খুলে ফেলেন। ট্রেনের ইঞ্জিনের উপরে কুড়ুল হাতে নিয়ে শুরু হয় নানা অঙ্গভঙ্গী আর নৃত্য।

ততক্ষণে রেল পুলিশ আর যাত্রীরা বুঝে ফেলেছেন এই সমস্ত নিতান্তই পাগলের কাণ্ডকারবার। যাঁরা ভয়ে ছিটকে পালিয়েছিলেন, একটু একটু করে তাঁদের অনেকেই ইঞ্জিনের সামনে জটলা করেন।

এ দিকে হিমশিম খাচ্ছেন রেল পুলিশের কর্মীরা। প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘‘উতরো ভাই, উতরো’’ বলে চলে সাধ্য সাধনা। কিন্তু যাঁকে সাধাসাধি, তিনি স্পষ্ট কথায় জানিয়ে দেন, ট্রেন আগে চলুক, তার পরে সে নামার ব্যাপারে না হয় ভাবনা চিন্তা করা যাবে!

বেগতিক বুঝে ট্রেনের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন চালক। ওভার হেড তারে বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়। খবর যায় দমকলে। প্রায় মিনিট পনেরো কেটে যায় এ ভাবেই। চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে আরপিএফ-এর ওসি বিনোদকুমার সিংহ আর জিআরপি-র ওসি অনন্ত মাইতির।

এমন সময় পড়িমড়ি করে স্টেশনে ঢোকেন আর এক যুবক। জানান, তাঁর নাম বিদ্যুৎ হাড়ি। ইঞ্জিনের উপরে চ়ড়ে বসে রয়েছেন যিনি, তিনি তাঁর ভাই। মানসিক ভারসাম্যহীন। বিদ্যুৎ দাবি করেন, ভাইকে বুঝিয়ে নামিয়ে আনবেন। মই এনে তাঁকে ট্রেনের ছাদে তোলা হয়।

বিদ্যুৎ ট্রেনের ছাদে উঠতেই তাঁর ভাই ওভার হেড তার ধরে ঝুলতে শুরু করেন। তখনও তাঁর এক গোঁ— কিছুতেই নামবেন না। নীচের ওঁৎ পেতে ছিলেন জিআরপি আর আরপিএফ-এর কর্মীরা। মওকা বুঝে তার ঝাঁকাতে শুরু করেন তাঁরা। টাল সামলাতে না পেরে টুপ করে নীচে পড়ে যান ওই যুবক। তবে চোট লাগেনি। তাঁকে ধরে ফেলেন জিআরপি আর আরপিএফ-এর কর্মীরা।

এই সমস্ত কিছু মিটতে মিটতে পার হয়ে গিয়েছে প্রায় ঘণ্টা খানেক সময়। খড়্গপুর-আদ্রা ট্রেনটি ছাড়াও এই ঘটনার জেরে ওন্দায় আটকে পড়েছ গড়বেতা-আদ্রা-মেমু ট্রেন। বাঁকুড়ার স্টেশন ম্যানেজার শেরাফত মল্লিক বলেন, “গোটা ঘটনায় ট্রেন চলাচলে পঞ্চান্ন মিনিট দেরি হয়ে হয়েছে।”

জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবকের নাম প্রদ্যুৎ হাড়ি। বাড়ি ইঁদপুরের হাটগ্রাম এলাকায়। তাঁর দাদা বিদ্যুৎ বাঁকুড়ার পোয়াবাগান এলাকায় থাকেন। রাতে দাদার বাড়িতেই এসেছিলেন প্রদ্যুৎ। আচমকা কুড়ুল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ভাইকে ধরতে তার পিছু নেন বিদ্যুৎ।

প্রদ্যুৎকে উদ্ধার করে রাতেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বলেন, “ভাইয়ের মানসিক সমস্যা থাকলেও মাঝে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। গাড়ি চালাত। কিছুদিন হল পুরনো ব্যামো ফিরে এসেছে। গোটা ঘটনাটা জিআরপি সহানুভূতির সঙ্গে দেখেছেন বলে আমরা কৃতজ্ঞ।”

ঘটনার সময় ট্রেন ধরতে বাঁকুড়া স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন ছাতনার যুবক সোম রক্ষিত। সোমের কথায়, “ওই যুবককে কুড়ুল নিয়ে দৌড়তে দেখে সত্যিই প্রথমে আমাদের আত্মারাম খাঁচা ছা়ড়া হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম আততায়ী। শেষে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ধড়ে প্রাণ আসে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Young Man Axe কুড়ুল Train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE