Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

রামপুরহাটে বালির দ্বন্দ্বে গুলিবিদ্ধ যুবক

এক বালি পাচারকারীর সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল, শুধু নারায়ণপুর গ্রামে দিয়েই ২৪ ঘণ্টায় আড়াইশো ট্রাক্টর বালি পাচার হয়। গ্রামের অন্তত দশ জায়গায় অন্তত পঞ্চাশ টাকা করে তোলা দিতে হয় এক একটি ট্রাক্টরকে।

জখম: জহিরুলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বর্ধমান মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

জখম: জহিরুলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বর্ধমান মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩০
Share: Save:

এ বার বালির গাড়ি থেকে তোলা আদায় ঘিরে রক্ত ঝরল বীরভূমে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপুরহাটের নারায়ণপুরে দুই পাড়ার সংঘর্ষের মাঝে গুলিবিদ্ধ হন জহিরুল মোল্লা নামে বছর পঁচিশের এক যুবক। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, জহিরুলের পেটের নীচে গুলি লেগেছে। অবস্থা সঙ্কটজনক।

Advertisement

বিধিনিষেধ থেকে আচমকা অভিযান— নানা ব্যবস্থা সত্ত্বেও কমছে না বালির বেআইনি কারবার। এ দিনের ঘটনা দেখিয়ে দিল, রোখা যাচ্ছে না বালির ট্রাক্টর থেকে তোলা আদায়ও। পুলিশও মানছে, টাকার (তোলা) বিনিময়ে বালিঘাট থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে পার পেয়ে যাচ্ছে অনেকেই। দেদার টাকার হাতছানিতে রোখা যাচ্ছে না গোলমালও। জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘বালি নিয়ে দ্বন্দ্বে গুলি চলেছে। ঘটনার তদন্তে কিছু নাম উঠে এসেছে। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কিছু দিন বন্ধ থাকার পর দিন তিনেক হল নারায়ণপুর গ্রাম লাগোয়া ব্রাহ্মণী নদী থেকে ফের বালি তোলা শুরু হয়েছে। এলাকার পাঁচটি ঘাট ছাড়াও নারায়ণপুর গ্রাম লাগোয়া শালবুনি গ্রামের দুটি ঘাট এবং খড়িডাঙা গ্রামের ঘাট থেকেও তোলা হচ্ছে বালি। ওই সমস্ত ঘাট থেকে ট্রাক্টরের মাধ্যমে নারায়ণপুর গ্রামের ভিতরের রাস্তা দিয়ে বালি পাচার হয়। স্থানীয়েরাই জানাচ্ছেন, সেই পাচারে যার যত কর্তৃত্ব থাকবে, তাঁর প্রাপ্তিযোগও তত বেশি।

এক বালি পাচারকারীর সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল, শুধু নারায়ণপুর গ্রামে দিয়েই ২৪ ঘণ্টায় আড়াইশো ট্রাক্টর বালি পাচার হয়। গ্রামের অন্তত দশ জায়গায় অন্তত পঞ্চাশ টাকা করে তোলা দিতে হয় এক একটি ট্রাক্টরকে। দিনপিছু একটি ট্রাক্টরকেই পাঁচ-ছ’শো টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে এক দিনেই লক্ষ টাকার কারবার। অভিযোগ, তাই নিয়েই নারায়ণপুরের হাটতলাপাড়া এবং বাগানপাড়ার মধ্যে গোলমাল। স্থানীয় সূত্রের খবর, তোলা নিয়ে গোলমালে মাস ছ’য়েক আগে নারায়ণপুর পঞ্চায়েত অফিসের সামনেই রাস্তা কেটে দিয়েছিল কিছু লোক। তাতে নাম জড়ায় হাটতলাপাড়ায়। বুধবার রাতে আবার হাটতলাপাড়া এলাকায় বোমাবাজি হয়। তাতে আবার জড়ায় বাগানপাড়ার নাম।

Advertisement

পুরনো দ্বন্দ্বে এ দিন সকালে ফের তেতে ওঠে এলাকা। মারপিট, বোমাবাজির মধ্যেই চলে গুলি। তখনই গুলিবিদ্ধ হয় জহিরুল। আহত যুবকের ভাই বিকাশ শেখ বলেন, ‘‘দুপুরে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়িতে বসেছিলাম। তখনই জানতে পারি ভাই গুলিতে জখম হয়েছে।’’ আর মুখ খুলতে চাননি তিনি। গোলমালের খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ পৌঁছয়। পাঁচ-ছ’টি বালিভর্তি ট্রাক্টরও আটক করে পুলিশ। এলাকার বালিঘাটের নজরদারির ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে ঠিক করে দেওয়া তিন জনের কমিটির অন্যতম সদস্য রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নীতিশ বালা। তিনি বলেন, ‘‘নারায়ণপুর ঘাটে কে বালি তোলার সরকারি অনুমোদন পেয়েছে জানা নাই। এ দিন ঠিক কী হয়েছে, সেটা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তবেই বলতে পারব।’’

তবে, বালির কারবার নিয়ে এলাকায় গোলমাল লেগেই থাকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে রাস্তা দিয়ে বালিভর্তি গাড়ি যায়, সেখান দিয়েই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া, তিনটি হাইস্কুলের পড়ুয়া, গ্রামের পঞ্চায়েত অফিস, দুটি ব্যাঙ্ক, বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয়। বালির গাড়ি চলায় যাতায়াতে সমস্যা হয়। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এ নিয়ে আমরা যখন প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেব ভাবছি, তখনই এই ঘটনা। পুলিশ এ বার সক্রিয় হোক।’’

এ দিকে, আহত জহিরুলকে প্রথমে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘গুলি পেটের কতটা গভীরে ঢুকে গিয়েছে বোঝা যাচ্ছিল না। তাই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রোগীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.