বুধবার রাতে পুণ্যার্থীদের ঢল তারাপীঠে।(ইনসেটে) এই ঘর থেকেই মিলেছে মৃতদেহ।—নিজস্ব চিত্র
উৎসবের তারাপীঠে এখন নিরাপত্তার যথেষ্ট কড়াকড়ি। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ শহরের প্রতি মোড়, রাস্তা। তারই মধ্যে ছন্দপতন!
নির্মীয়মাণ একটি বাড়ির উঠোনে মিলল এক যুবকের দেহ। দেহে কোনও পোশাক নেই। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, উপর থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে গোপাল হাজরা (৩২) নামে ওই যুবকের। ঘটনাটিকে ঘিরে ধোঁয়াশা রয়েছে বিস্তর।
বুধবারের এই ঘটনা উস্কে দিচ্ছে, বছর দু’য়েক আগে তারাপীঠ তিন মাথা মোড়ের একটি নির্মীয়মাণ লজের ব্যালকনি থেকে পড়ে গিয়ে কলকাতার এক যুবকের মারা যাওয়ার ঘটনা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতেও একটি লজের ছাদ থেকে লজের উঠোনে পড়েই মৃত্যু হয় এক পর্যটকের। উৎসবের তারাপীঠে ফের এমন ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল ফের। তদন্তে নেমে পুলিশ অবশ্য খুনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত গোপালের বাড়ি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। সেখান একটি গাড়িতে মঙ্গলবার রাতেই গোপাল ও তাঁর সাত বন্ধু কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে মা তারা দর্শনের জন্য তারাপীঠে এসেছিলেন। মৃতের সঙ্গী পুলক সিংহ, পলাশ হাজরারা জানান, তারাপীঠ পৌছতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বেজে যায়। সে সময় মন্দির সংলগ্ন এলাকা বা তারাপীঠের সামনে বাজার এলাকায় তাঁদের চাহিদা মতো লজ বা হোটেল পাননি। সস্তায় ঘর না পেয়ে মুণ্ডমালিনীতলার কাছে মাঠের দিকে পূর্ব পরিচিত ওই বাড়িতে তাঁরা যান। এবং সেখানেই একটি ঘরে আট জনের থাকার ব্যবস্থা হয়। নীচের তলার ঘর ভাড়া নিলেও, নির্মীয়মাণ উপরতলায় নিজেরাই রান্নার ব্যবস্থা করেন।
পলাশের দাবি, ‘‘রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে আমরা সকলে শোওয়ার জন্য চলে গেলেও গোপালকে বারবার বলা সত্ত্বেও সে যায়নি। জানালায় বসে ছিল খালি গায়ে। এর পরে কী হয়েছে আমাদের জানা নাই। আজ সকালে বাড়ির মালিক আমাদের ডাকলে বাইরে গিয়ে দেখি গোপাল মাটিতে পড়ে আছে।’’ পুলিশ এসে গোপালকে তুলে রামপুরহাট হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক গোপালকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। তাঁর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায় গোপালের শরীরে কালশিটে দাগ মিলেছে। কপালে ও মুখে কাটা দাগও আছে। প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের অনুমান, যে কোনও ভাবেই হোক পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে গোপালের। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। তবু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনা হল, যে গেস্ট হাউসটিতে গোপালেরা উঠেছিলেন, সেটি আদৌও সরকারি খাতায় নথিভুক্ত নয়। প্রশাসনের কাছেও ওই বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কোনও খবর নেই। জানে না তারাপীঠ লজ মালিক অ্যাসোসিয়েশনও।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমন বেআইনি ভাবেই রমরমিয়ে ঘর ভাড়া দেওয়ার চল রয়েছে তারাপীঠে। কৌশিকী অমাবস্যা কেবল নয়, সারা বছর এ ভাবেই লজ বা হোটেলের থেকে তুলনামূলক ভাবে কম ভাড়ায় ঘর মেলে এখানে। তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের অন্যতম সদস্য তথা লজ মালিক অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক দেবীপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘তারাপীঠে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০০ লজ আছে। ওই বাড়িটি আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে পড়ছে কিনা, এখনই বলা সম্ভব নয়। খোঁজখবর নেব।’’
এ দিন নির্মীয়মাণ ওই দোতলা বাড়ির মালিক, হাওড়ার দাসনগরের বাসিন্দা শম্ভুনাথ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘আমি সাধারণত ঘর ভাড়া দিই না। তবে ইচ্ছে আছে বাড়িটিকে লজ করার। তবুও ওই যুবকরা আমার কাছে থাকার জন্য জেদাজেদি করে। আমি ওঁদেরকে মঙ্গলবার ও বুধবার রাতের জন্য দু’ হাজার টাকায় ঘর ভাড়া দিই। ওদের কাছে ভোটার কার্ড চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা দেব বলে দেয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, রাতের দিকে ওই যুবকেরা একসঙ্গে রান্নাবান্না করে খাওয়া দাওয়া করেছিলেন। কিন্তু কোনও রকম হল্লা করেননি। এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ পাড়ার কয়েকজন ঘরের একতলার নীচে মাটিতে ওই যুবককে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে খবর দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy