পাশে আছি। মৃতের বাড়িতে ভারতী মুৎসুদ্দি। —নিজস্ব চিত্র
কী করে মারা গেলেন বোলপুরের যুবক রাজু থান্দার? ৪৮ ঘণ্টা পরেও কিনারা হল না সেই মৃত্যু-রহস্য। তারই মধ্যে ধন্দ বাড়িয়েছে এখনও পর্যন্ত মৃতের পরিবার কোথাও কোনও লিখিত অভিযোগ না করায়। স্বামীর মৃত্যুর জন্য সংবাদমাধ্যমের কাছে পুলিশকে দায়ী করলেও কেন অভিযোগ দায়ের করছেন না, সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি মৃতের স্ত্রীও।
এমনই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মৃত যুবকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাল ‘সেভ ডেমোক্রেসি’-সহ একাধিক গণ সংগঠন। পাশাপাশি মৃতের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তারা তুলেছে। এ দিনই ওই সব দাবির কথা এসডিপিও-কে (বোলপুর) লিখিত আকারে জমা দিয়েছে সংগঠনগুলি। এ দিন বোলপুরের দর্জিপাড়ায় অন্নদেবীর মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে সংগঠনগুলির পক্ষে রাজ্যের মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন ভারতী মুৎসুদ্দি বলেন, “ঘটনার সময় বোলপুর থানায় যাঁরা যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের অবিলম্বে সাসপেন্ড করার দাবি জানিয়ে আমরা জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছি। এ নিয়ে এসডিপিও-র (বোলপুর) সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি।’’
ঘটনা হল, রবিবার রাজু থান্দার নামে বছর আটাশের এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় বোলপুর শহরে। পরিবারের দাবি, বৃহস্পতি থেকে শনিবার—এই তিন দিন টানা রাজুকে থানায় আটকে রাখলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার দেখায়নি। উল্টে শনিবার গভীর রাতে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে রাজুকে নিয়ে এসে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালায়। কী কারণে এত দিন তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে, কেনই বা তল্লাশি হচ্ছে, সে সব জানতে চাওয়ায় পুলিশ পরিবারের লোকেদের মারধরের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ বোলপুর হাসপাতালের সামনে রাজুর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের একটি সূত্রের খবর, সকালে ওই দেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশই।
সেই খবর ছড়াতেই উত্তেজনা বাড়ে। রাতে এলাকাবাসীর একাংশ থানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ রবার বুলেট চালায় বলে অভিযোগ। তাতে আহত হন মৃতের শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জন। দুই হাঁটুর উপরে রবার বুলেট লাগায় বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয় রাজু থান্দারের শ্বশুর মিহির বীরবংশীকে। এ ছাড়া, মৃতের মামাশ্বশুর কমল বীরবংশী, মাসি শাশুড়ি নমিতা বীরবংশী এবং শ্যালিকা পিঙ্কি দাস বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবার রাতে কড়া পুলিশ পাহারায় নিহত রাজু থান্দারের দেহ বোলপুরের সতীঘাট শ্মশানে দাহ করা হয়।
কিন্তু, লকআপে আটকে রেখে পিটিয়ে মারার অভিযোগ তুললেও মঙ্গলবার অবধি মৃতের পরিবারের তরফে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। মৃতের স্ত্রী অন্নদেবী বলেছেন, “অভিযোগ করে আর কী হবে! স্বামী তো আর ফিরে আসবে না। পুলিশের সঙ্গে কি আমরা পেরে উঠব? তাই উপরওয়ালার উপরেই সব ছেড়ে দিয়েছি। তিনিই ইনসাফ করবেন!’’ মৃতের পরিবার অভিযোগ না করলেও রাজুর মৃত্যুকে ঘিরে রবিবার রাতে বোলপুর থানায় জনতার চড়াও হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে বোলপুর থানার পুলিশ। এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এ দিকে, ওই ঘটনায় পুলিশের নিন্দায় সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সোমবার সন্ধ্যাতেই বোলপুরের চৌরাস্তায় ঘটনার প্রতিবাদে সভা করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির বীরভূম জেলা শাখা। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানান সংগঠনের জেলা সম্পাদক শৈলেন মিশ্র। ওই সংগঠনও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এসডিপিও-র কাছে। এ দিন ভারতীদেবী অভিযোগ করেন, ‘‘যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের কারণেই নিহতের পরিবার ভীষণ চাপ এবং ভয়ের মধ্যে রয়েছে। তাই সিবিআই তদন্তের আর্জি জানাচ্ছি। তাতেই প্রকৃত তথ্য সামনে আসবে।’’
এ দিনও ওই ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি বীরভূম জেলা পুলিশের কোনও কর্তাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy