Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সিউড়ি হাসপাতালে ভাঙা হল ২৬টি হিটার

অগ্নিকাণ্ডের পরে চোখ খুলল প্রশাসনের

গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডের পরে হাসপাতালে রোগীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই কী কারণে আগুন লাগল সেই বিষয় নিয়ে কাটা ছেঁড়ার মাঝে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিল সিউড়ি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সেই নির্দেশিকা জারি করেছেন হাসপাতাল সুপার শোভন দে। শুধু নির্দেশিকা জারি করাই নয়, হাসপাতালে ভেতরে রান্নার কাজে ব্যবহৃত ২৬টি হিটার ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

পুড়ে যাওয়া সার্ভার-রুমে আরও এক দফা তদন্তে দমকলের কর্তারা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুড়ে যাওয়া সার্ভার-রুমে আরও এক দফা তদন্তে দমকলের কর্তারা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২২
Share: Save:

গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডের পরে হাসপাতালে রোগীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই কী কারণে আগুন লাগল সেই বিষয় নিয়ে কাটা ছেঁড়ার মাঝে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিল সিউড়ি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সেই নির্দেশিকা জারি করেছেন হাসপাতাল সুপার শোভন দে। শুধু নির্দেশিকা জারি করাই নয়, হাসপাতালে ভেতরে রান্নার কাজে ব্যবহৃত ২৬টি হিটার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছিল সেটা স্পষ্ট না হলেও পরিকাঠামো গত সমস্যা, সঠিক নজরদারির অভাব এই প্রসঙ্গগুলির পাশাপাশি হাসপাতলের মধ্যেই ধূমপান করা বা রান্না করার মতো বিষয় সামনে এসেছে। হাসপাতাল সুপার বলেন, “ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোগীদের মন থেকে দ্রুত আতঙ্ক মুছে ফেলার চেষ্টাও করা হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, শনিবার রাত ১টা নাগাদ হঠাৎই জেলা হাসপাতালের সার্ভার রুমে আগুন লেগে প্রবল আতঙ্ক ছড়ায়। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল চারদিক। ওই রুমের পাশাপাশি ছিল প্রসূতি বিভাগ, এসএনসিইউ, সিসিইউ-র মতো বিভিন্ন বিভাগ। হাসপাতলের কর্মী, নার্স, চিকিৎসক ও পরিজনরা রোগীদের নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। ওই দিন হাসপাতলে ভর্তি থাকা ৪৪১ জন রোগীদের মধ্যে ২২ জনের কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার অবশ্য সাত জন রোগী ফিরে এসেছেন। অগ্নিকাণ্ডের জেরে মেন সার্ভারটি পুড়ে যাওয়ায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে জেলা হাসপাতালটির তথ্য আদান প্রদান বন্ধ রয়েছে এখনও। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মী, আধিকারিক, নার্স, চিকিৎসক এমন কী রোগীর পরিজন যাঁরা হাসপাতালের নির্দিষ্ট ঘরে রাতে থাকেন প্রত্যেককে সেই নির্দেশ মেনে চলতে হবে। নির্দেশিকা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অগ্নিকাণ্ড এড়াতে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে হাসপাতালের মধ্যে কোনও রান্না করা চলবে না, ধূমপান করা চলবে না। হাসপাতালের মধ্যে থাকা ইলেট্রিক্যাল আউটলেটগুলি থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুতের লোড দেওয়া চলবে না। হিটারের অপব্যবহার নয়। অগ্নিদাহ্য বস্তু বহন না করা, প্রয়োজনীয় অগ্নিদাহ্য বস্তুর সঠিক রক্ষাণাবেক্ষণ, হাসপাতালে আসা-যাওয়া রাস্তায় যেন অগ্নিদাহ্য বস্তু ফেলে না রাখা হয় ইত্যাদি।

এ দিকে, সোমবারও দমকল বাহিনীর পক্ষ থেকে পুড়ে যাওয়া সার্ভর-রুমটির ঘুরে দেখেন সিউড়ি দমকল বাহিনীর স্থানীয় আধিকারিকেরা। প্রাথমিক ভাবে শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে যে পরিমাণ বিদ্যুতের লোড ওখানে ছিল সেই আনুযায়ী পরিকাঠামো ছিল কি না? দিন কয়েক আগে বজ্রাঘাতে সার্ভারের ইন্টারনেট কানেকশন ও বেশ কয়েকটি ফ্যান খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকেই কি দুর্বল হয়ে পড়েছিল কেবলগুলি? কারন আগুনের থেকে ধোঁয়ার পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছিল। যেটা সাধারণত প্লাস্টিকে আগুন লাগলে হয়ে থাকে এই সব নানা প্রশ্ন উঠেছে দমকলকর্মীদের মধ্যে। দমকল আধিকারিকদের মতে, সার্ভাররুমে যে এগজস্ট ফ্যান ছিল তার বাইরের দিকটি একটি ফ্লেক্স জাতীয় কিছুতে ঢাকা থাকায় আগুন লাগার খবর পেতে সময় লেগেছে।

দমকল কর্মীরা তদন্ত করার পাশাপাশি হাসপাতালেই এ দিন সন্ধ্যা ৬টায় জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ নার্স, চিকিৎসকেরা বৈঠক করেন। প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক হয়। জেলাশাসক জানান, এই ঘটনার তদন্তের জন্য তিন জনের একটি কমিটি গঠন করা হবে। তাতে থাকবেন ওসি দমদল (সিউড়ি), পূর্ত দফতরের (বিদ্যুৎ) ইঞ্জিনিয়র, হাসপাতাল সুপার। তিনি বলেন, “যে ২২ জন রোগীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, তাঁদের মধ্যে সাত জন ফিরে এসেছেন। বাকিদের বাড়িতেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, হাসপাতালে সিঁড়ির নীচে থাকা বিদ্যুতের কন্ট্রোল প্যানেলকে অন্যত্র সরানো যায় কি না চিন্তাভাবনা চলছে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বেরনোর পথের সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এ দিকে, ফিরে আসা রোগীদের মধ্যে দুই প্রসূতি বলেন, “স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দেওযার পর রবিবারই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল আমাদের। কিন্তু সে দিন আগুন দেখে এত ভয় পেয়েছিলাম মনে হয়েছিল সন্তান এবং আমরা বাঁচব না। পরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, হাসপাতাল থেকে এ ভাবে চলে গেলে জন্ম সংশাপত্র পাব না ভেবে ফিরে এসেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE