Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
নালিশ মানতে নারাজ প্রশাসন

অবাধে বালি তোলায় ভাঙছে রাস্তা, নদীর পাড়

অযোধ্যা, ধরাপাট, ভাটরা, ডিহর, বসন্তপুর, জন্তা...। দ্বারকেশ্বরের পাড় ভাঙার আশঙ্কায় ঘুম ছুটে গিয়েছে বিষ্ণুপুর থানার ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের। বর্ষায় জল বাড়ার জন্য, তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, অবাধে বালি তোলার ঘটনা।

দ্বারকেশ্বর নদে বালিবোঝাই ট্রাকের সারি। বিষ্ণুুপুরের ধারাপাট গ্রামে ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

দ্বারকেশ্বর নদে বালিবোঝাই ট্রাকের সারি। বিষ্ণুুপুরের ধারাপাট গ্রামে ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

অযোধ্যা, ধরাপাট, ভাটরা, ডিহর, বসন্তপুর, জন্তা...। দ্বারকেশ্বরের পাড় ভাঙার আশঙ্কায় ঘুম ছুটে গিয়েছে বিষ্ণুপুর থানার ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের। বর্ষায় জল বাড়ার জন্য, তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, অবাধে বালি তোলার ঘটনা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বিচারে বালি তোলা হচ্ছে। এর ফলে নদীর পাড় ভাঙছে। ভিটেছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে দ্বারকেশ্বরের তীরবর্তী এই গ্রামগুলোতে। একই সঙ্গে প্রতিদিন বালি ভর্তি ট্রাকের যাতায়াতে রাস্তা ভাঙছে। প্রতিবাদে সম্প্রতি বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করেন।

প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে ওইসব এলাকায়। অযোধ্যা গ্রামের বাসিন্দা তারক চক্রবর্তী, মনোহর বন্দ্যোপাধ্যায়দের অভিযোগ, “মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে এসে নদী থেকে দিন-রাত বালি তোলা হচ্ছে। কয়েকশো গাড়ির বালি রোজ তোলা হচ্ছে। গ্রামের ভিতরের রাস্তা বালি বোঝাই ট্রাকের চাপে ভেঙে পড়েছে। চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। ভাঙা রাস্তায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করে। ওদের নিয়ে চিন্তা হয়।” বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একই রকম চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে নদীর ভাঙন। নদী ভাঙনের ফলে শিমুলতলা, রুইদাসপাড়ার কিছু বাসিন্দাকে নদীর ধার থেকে গ্রামের ভিতরে সরে আসতে হয়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক এবং মহকুমা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে বারবার এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। সেই নদীর পাড় ঘেঁষে বালি তোলা হচ্ছে। ভূমি দফতরের বেঁধে দেওয়া জায়গায় বালি তোলা হলে এ ভাবে ভাঙন হত না। তাঁদের আশঙ্কা, প্রশাসন সক্রিয় না হলে নদী ভাঙনের কবলে চলে যেতে পারে ধরাপাটের বিখ্যাত জৈন মন্দিরও।

বালি তোলার জেরে এ ভাবেই পাড় ভাঙছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। —নিজস্ব চিত্র

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রামকৃষ্ণ কর। তিনি বলেন, “৯০-র দশকে নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ কিছুটা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় আর শেষে হয়নি। প্রশাসনের কর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।” তিনি জানান, বালি তোলায় অনিয়ম হয়ে থাকলে ভূমি দফতর ব্যবস্থা নিক।

তবে বিষ্ণুপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার দাবি করেছেন, “নদীর পাড় ঘেঁষে বালি তোলার অভিযোগ ঠিক নয়। ওই গ্রামগুলির উপর দিয়ে যাওয়া জয়কৃষ্ণপুর-নবান্দা রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। তাদেরই সংস্কার করতে হবে।” মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “ওই নদী পাড়ের ভাঙন রোধে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাটি কামড়ে রাখে ‘ভেটিবাড়’ নামের ঘাস। নদীর পাড় ঘেঁষে ওই ঘাস লাগিয়ে ভাঙন রোখার কথা ভাবা হচ্ছে।” তিনি জানান, পূর্ত (সড়ক) দফতর ওই রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sand land errotion river bank bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE