আদালতে বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক সজল রায়।—নিজস্ব চিত্র।
সমন গ্রহণ করেও কোনও সাক্ষী আদালতে উপস্থিত না থাকায় পর পর তিন দিনে শুরুই করা যায়নি বিচার প্রক্রিয়া। চতুর্থ দিন অবশ্য সাক্ষ্য গ্রহণপর্ব শুরু হল সাগর ঘোষ হত্যা-মামলার। বৃহস্পতিবার সিউড়ি জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্তের এজলাসে এসে সাক্ষ্য দিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সজল রায়।
সরকারি আইনজাবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন (ভগীরথ ও সুব্রত) এখনও জেল হাজতেই রয়েছেন। তাঁদের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সে জন্যই চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণপর্ব শুরু করেছে আদালত। কিন্তু সাক্ষীরা না আসায় সেটা শুরুই করা যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার অন্তত সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হল।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে খুন হন পাড়ুইয়ের বাঁধ নবগ্রামের বাসিন্দা সাগর ঘোষ। ১৯ জুলাই রাতে ঘটনার দিন দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারত্মক জখম সাগর ঘোষকে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে বর্ধামান মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। ২১ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে সজলবাবুই তাঁকে প্রথম দেখেছিলেন। তিনি সেদিন কী কী করেছিলেন, আইজীবীদের প্রশ্নের উত্তরে আদালতে সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানান ওই চিকিৎসক। এ দিনই আরও দুই চিকিৎসকের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম তিন দিন নিহতের পরিবারের সদস্য, নিকট আত্মীয়-সহ মোট ৯ জন সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেননি। যতক্ষণ না তাঁদের সাক্ষ্য গৃহীত হচ্ছে, ওই দুই চিকৎসককে জেরা করার প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না বলে আপত্তি তোলেন বিপক্ষের আইনজীবীরা। ওই আপত্তি মেনে নিয়ে তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া হল না বলে জানিয়েছেন মামলার সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত ওই হত্যা মামলার বিশেষ তদন্তকারি দল (সিট) গত ১৬ জুলাই আদালতে যে চার্জশিট পেশ করেছিল, তাতে নাম ছিল মোট ৮ জনের। এক জন বাদে সকলকেই গ্রেফতার করেছিল সিট। ওই চার্জশিটের ভিত্তিতে সিউড়ি জেলা আদালতে গত ৮ জানুয়ারি ওই মামলায় চার্জ গঠিত হয়েছে। সিউড়ি’র জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্তের এজলাসে ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার থেকেই। নিহতের স্ত্রী সরস্বতী দেবী, ছেলে হৃদয় ঘোষ ও বৌমা শিবানী ঘোষ-সহ মোট ৯ জন সাক্ষীর ডাক পড়েছিল আদালতে। কিন্তু কেউই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। শুধু তাই নয়, কেন তাঁরা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে পারলেন না সে বিষেয়ে আবেদনও জানাননি ডাক পাওয়া সাক্ষীদের অধিকাংশই। এ জন্য ৭ জনের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ব্যতিক্রম শুধু সরস্বতী দেবী ও নিহতের এক আত্মীয় পঞ্চানন ঘোষ। ওই দুজনই শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন।
আসলে প্রথম থেকেই এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিপক্ষে ছিলেন নিহতের পরিবার। তাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত সমন পাঠানোয় প্রথমে তা গ্রহণ করতে চাননি সাগর ঘোষের পরিবার। নিহতের ছেলে হৃদয়ের দাবি ছিল, বাবার হত্যাকাণ্ডে নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারি দল সিটের দেওয়া চার্জশিটের ভিত্তিতে জেলা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। সেই তদন্তই পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁদের ওই তদন্তের উপর আস্থা নেই। সে জন্যই তাঁদের পরিবার সিবিআই চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। ওই একই কারড়ে গত তিন দিন আদালতে কোনও সাক্ষী উপস্থিত হননি বলে মত আইনজীবীদের একাংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy