Advertisement
E-Paper

আগাছায় ভরেছে শহরের নিকাশি কাঁদর, থমকে পড়ে সংস্কারের কাজ

কথা ছিল রামপুরহাট শহরের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া কাঁদরের দু’পাশ পাথর দিয়ে বাঁধানো হবে। কথা ছিল, দু’ পাড়ে ঝাউ, দেবদারু লাগিয়ে সৌন্দর্য্যায়নের পাশাপাশি মাটির ক্ষয় রোধ করা হবে। জায়গায় জায়গায় থাকবে বসার জায়গা, ভ্যাপার লাইট। পুরবাসীর অভিযোগ, পুরসভা কেউ কথা রাখেনি। কাঁদরকে ঘিরে সমস্ত পরিকল্পনাই এখন বিশ বাঁও জলে। এই বর্ষায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, রক্ষণাবেক্ষণ অভাবে ক্রমশ ঝোপ জঙ্গলে মজে যাচ্ছে নিকাশি কাঁদর। পুরপ্রধানের দাবি, “টাকা নেই পুরসভার। টাকা পেলেই কাজ হবে।”

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:২২
কচুরিপানায় ভরেছে নিকাশি নালা। (ডান দিকে) এখানেই নতুন লকগেট হওয়ার কথা।—নিজস্ব চিত্র

কচুরিপানায় ভরেছে নিকাশি নালা। (ডান দিকে) এখানেই নতুন লকগেট হওয়ার কথা।—নিজস্ব চিত্র

কথা ছিল রামপুরহাট শহরের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া কাঁদরের দু’পাশ পাথর দিয়ে বাঁধানো হবে। কথা ছিল, দু’ পাড়ে ঝাউ, দেবদারু লাগিয়ে সৌন্দর্য্যায়নের পাশাপাশি মাটির ক্ষয় রোধ করা হবে। জায়গায় জায়গায় থাকবে বসার জায়গা, ভ্যাপার লাইট। পুরবাসীর অভিযোগ, পুরসভা কেউ কথা রাখেনি। কাঁদরকে ঘিরে সমস্ত পরিকল্পনাই এখন বিশ বাঁও জলে। এই বর্ষায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, রক্ষণাবেক্ষণ অভাবে ক্রমশ ঝোপ জঙ্গলে মজে যাচ্ছে নিকাশি কাঁদর। পুরপ্রধানের দাবি, “টাকা নেই পুরসভার। টাকা পেলেই কাজ হবে।”

পুরসভা এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মরশুমে অতিবৃষ্টি বা সামান্য বৃষ্টিতেই রামপুরহাট শহরের ১৬ নম্বর ওয়াডের্র চাকলা মাঠ এলাকায় জমা জলে স্থানীয় বাসিন্দারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে। শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকা যাওয়ার আগে ছ ফুঁকো রেল ব্রিজের তলায় জমা জলে এক-দুই, তিন ও ১৭ এই চারটি ওয়ার্ড শহর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত। এবং রামপুরহাট শহরের এক, তিন, ১৬, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডগুলির পাশ দয়ে যাওয়া কাঁদর ছাপিয়ে জল রাস্তায় উঠে পড়ে। কার্যত রামপুরহাট শহরের বর্ষার জল চিত্র এমনই।

রামপুরহাট শহরের কাঁদরের সৌন্দর্য্যায়ন ঘিরে যে প্রকল্প গড়ে উঠেছিল তার বাস্তবায়ন নিয়ে সেই জন্যই এলাকাবাসী খুবই আশাবাদী ছিল। যার বেহাল ছবি দেখে এখন সংশয় দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর। তাঁদের অভিযোগ, যে টাকা পাওয়া গিয়েছিল সেই টাকাতেই কাজ হলেও বর্ষায় কিছুটা উপকার হত পুরবাসীর।

ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানা এলাকায় থেকে এই কাঁদরটি রামপুরহাটের কুশুম্বা অঞ্চলের পাশ দিয়ে এসে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে দ্বারকা নদে মিশেছে। সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন এলাকাবাসীরা। পুরসভা জানিয়েছে, ২০০৬ সালে রামপুরহাট শহরের ওই কাঁদর সংস্কারের জন্য দু’ কোটি বাষট্টি লক্ষ টাকা কাজের অনুমোদন পাওয়া যায়। ওই টাকায় রামপুরহাট ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা থেকে রামপুরহাট ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সানঘাটা সেতু পর্যন্ত কাঁদর সংস্কার করার জন্য প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সেই প্রোজেক্ট রিপোর্টে কাঁদরের দু’পাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো, গাছ লাগিয়ে বসার জায়গা, কাঁদরের দু’পাশ ভ্যপার লাইট লাগিয়ে সৌন্দর্য্যায়ণের উল্লেখ ছিল। শ্রীফলা এলাকায় কাঁদরের জল ধরে রাখতে একটি লক গেট তৈরি করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর সবিতা দাস বলেন, “শ্রীফলা মাঠপাড়ার তালতলা এলাকা থেকে কাঁদর সংস্কারের জন্য ২০০৯ সালে মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। কিন্তু আদতে তালতলার অদূরে শ্রীফলা পুলিশ ফাঁড়ির থেকে রামপুরহাট ছ ফুঁকো পর্যন্ত কাঁদরের দু’পাড় পাথর দিয়ে না বাঁধিয়ে লোহার রড ছাড়া কেবল সিমেন্ট দিয়ে পাড় সংস্কারের কাজ হয়েছে। সৌন্দর্য্যায়নের জন্য কোনও গাছ লাগানো বা দু’ ধারে ভ্যপার লাইট লাগানোও হয় নি।”

শ্রীফলা মাঠপাড়ার বাসিন্দা বাসন্তী মণ্ডল, রাজু দাসদের অভিযোগ, “তালতলা এলাকার কাঁদরের মাটি কাটা হলেও দু’পাড় না বাঁধানোর ফলে অতিবৃষ্টিতে কাঁদর ছাপিয়ে জল ঘরের মেঝেতে ঢুকে যায়।” আবার ৩ নম্বর নম্বর ওয়ার্ডের ঢেকোপাড়ার বাসিন্দা গোপাল হাঁসদার অভিযোগ, “বাড়ির পাশ দিয়ে কাঁদরের দু’ পাড় সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল। কিন্তু কাজের মান এতটাই খারাপ, যে ওই সিমেন্ট জলের তোড়ে এখন ভেঙে যাচ্ছে। কাঁদর এখন কচুরিপানায়, আগাছায় জঙ্গলে মজে যাচ্ছে।”

কাঁদর সংস্কার নিয়ে অভিযোগ প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই মিলল। রামপুরহাট ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা চন্দন সরকার জানান, প্রতি বছর বর্ষায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চাকলা মাঠ এলাকায় জল জমে বাসিন্দারা বন্দি হয়ে থাকত। এর জন্য রামপুরহাট নাগরিক মঞ্চ গঠন করে দীর্ঘ দিন থেকে কাঁদর সংস্কার করার আন্দোলন চলে। ২০০৬ সালে কাঁদর সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হয় পুরসভা। তিনি বলেন, “কাঁদর সংস্কার কাজ শুরু হলেও পুরসভা এখনও কাজ সম্পূর্ণ করেনি। ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে চাকলামাঠ থেকে সান ঘাটাপাড়ার পর্যন্ত কাঁদরের পাড়ের বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় বাস করে।”

সংস্কারের অভাবে কাঁদরের বিশাল এলাকা জঙ্গলে যে মজে যাচ্ছে, সে কথা স্বীকার করে নেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমার এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া কাঁদরের সংস্কার করার জন্য একাধিক বার পুরসভায় বিষয়টি জানিয়েছি। সভায় বোর্ড অফ কাউন্সিলরদের বিষয় টি জানাব।”

পুরসভার পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি জানান, কাঁদর সংস্কারের জন্য ২০০৬ সালে ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়। তাঁর মধ্যে ২০০৯ সালে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রীফলা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় ও পরে ২০১২ সালে পাওয়া পঞ্চাশ লক্ষ টাকায় ছ ফুঁকো সংলগ্ন এলাকায় কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “দুটি কাজের ইউ সি এবং প্রোগ্রেস রিপোর্ট রাজ্য সরকারের পৌর উন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। বাকি টাকা পেলে অন্য এলাকায় কাজ করা হবে।”

চলতি বর্ষায় কাঁদরের জল নিকাশি নিয়ে তিনি বলেন, “কাঁদরের জল নিকাশির জন্য যে যে এলাকা মজে গিয়েছে সেগুলি খুব দ্রুত সংস্কারের জন্য বোর্ড অফ কাউন্সিলর দের সভায় আলোচনা করা হবে।”

apurba chattopadhyay rampurhat damage drainage system
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy