Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আজ শতবর্ষে চিত্তভূষণ

পুঁথিগত বিদ্যা নয়। গাঁধীজির শিক্ষাদর্শনের উপর ভিত্তি করে ১৯৪০ সালে একটি কুঁড়ে ঘরে গড়ে উঠেছিল ‘জাতীয় বুনিয়াদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’। পুরুলিয়ার বরাবাজারের সীমানায় মাঝিহিড়ায় গড়ে ওঠা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা জেলা তো বটেই, দেশের অনেকেই জানেন।

চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

পুঁথিগত বিদ্যা নয়। গাঁধীজির শিক্ষাদর্শনের উপর ভিত্তি করে ১৯৪০ সালে একটি কুঁড়ে ঘরে গড়ে উঠেছিল ‘জাতীয় বুনিয়াদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’। পুরুলিয়ার বরাবাজারের সীমানায় মাঝিহিড়ায় গড়ে ওঠা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা জেলা তো বটেই, দেশের অনেকেই জানেন।

যাঁর জন্য এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, প্রতিষ্ঠাতা সেউ চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত আজ ৬ জুন শতবর্ষে পা রাখবেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থাকবেন।

মাঝিহিড়া জাতীয় বুনিয়াদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ভাবনা কীভাবে? আদতে ঢাকার বিক্রমপুরের বাসিন্দা নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত শিক্ষা দফতরের চাকরি সূত্রে পুরুলিয়া তথা মানভূম জেলায় আসেন। নিবারণবাবুর দুই ছেলে চার মেয়ে। চিত্তভূষণ সবার ছোট। ব্রিটিশ শিক্ষা পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নিবারণ দাশগুপ্ত চাকরি ছেড়ে গাঁধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীতে নিবারণবাবু ঋষি উপাধি পান। চিত্তভূষণবাবুরও প্রথাগত শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি। পরিবারের সকলেই গাঁধীজির অসহযোগ আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারানো চিত্তভূষণবাবু গাঁধীজির শিক্ষাদর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং দাদা বিভূতিভূষণের নির্দেশে তৎকালীন মানভূম জেলার বর্তমানে পুরুলিয়ার মাঝিহিড়া গ্রামে জাতীয় বুনিয়াদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন শতবর্ষে পা দেওয়া যুবক। দশ বছর বয়স থেকে গাঁধী-আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে কয়েক বার কারাদণ্ডও ভোগ করেছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, বুনিয়াদি শিক্ষার প্রয়োগ ও পরীক্ষা সাধারণ জীবনে কতটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হচ্ছে জানতে স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে রাজ্য ও দেশনায়কেরা বিভিন্ন সময়ে মাঝিহিড়া আশ্রমে এসেছেন। মাঝিহিড়া আশ্রম বিদ্যালয়ের (মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক বিশ্ববরণ গোস্বামী বলেন, “অন্যান্য স্কুলের সঙ্গে মাঝিহিড়া জাতীয় বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের মূলগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য স্কুলে যেমন শুধুমাত্র পুঁথিগত বিষয়টি দেখা হয়, এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি আবাসিকদের চরিত্র গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়। স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়ুয়ারা যাতে সমাজ গঠনের কাজে লাগতে পারে তেমন ভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়।” দশম শ্রেণির পড়ুয়া সৌম্যজিৎ মাহাতো, মনতোষ মাহাতো, অষ্টম শ্রেণির রমিতা মাহাতোর কথায়, “শিক্ষকেরা এমনভাবে আমাদের বোঝান যে, স্কুলে পড়ছি বলে মনেই হয় না।”

শিক্ষা সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী হিসাবে চিত্তভূষণবাবু মানভূম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধিতার কারণে কংগ্রেস ছাড়েন তিনি। লোকসেবক সঙ্ঘের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, “ভাষা আন্দোলনের জেরে মানভূম জেলা ভেঙে ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুরুলিয়া জেলা পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়। চিত্তভূষণবাবু ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।” সারাজীবন শিক্ষকতার পুরস্কার স্বরূপ চিত্তভূষণ ও স্ত্রী প্রয়াত মালতিদেবী টেলিগ্রাফ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। আর যাঁর জন্য এত কিছু, সেই চিত্তভূষণবাবু এই বয়সেও বলছেন, “স্কুল মানেই শুধু নম্বর তোলার প্রতিযোগিতা নয়। পড়ুয়ার মানসিক গঠন ও সক্ষমতা বুঝে তাকে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলাই স্কুলের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sameer dutta manbazar chittabhushan dasgupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE