Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আতসবাজি থেকে বাড়িতে আগুন, জখম শিশু-সহ ৪

বেআইনি ভাবে বাড়িতে তৈরি হচ্ছিল আতসবাজি। আর সেই আতসবাজি ফেটে আগুনে ঝলসে গেল তিন শিশু-সহ চার জন। শুক্রবার দুপুরে মাড়গ্রাম থানার ছোট ডাঙালপাড়ার ঘটনা। জখমদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সেই বাড়ি।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সেই বাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২২
Share: Save:

বেআইনি ভাবে বাড়িতে তৈরি হচ্ছিল আতসবাজি। আর সেই আতসবাজি ফেটে আগুনে ঝলসে গেল তিন শিশু-সহ চার জন। শুক্রবার দুপুরে মাড়গ্রাম থানার ছোট ডাঙালপাড়ার ঘটনা। জখমদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

এ দিকে, প্রথম থেকেই ওই ঘটনাকে ‘লঘু’ করার দেখানোর চেষ্টা শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এমনকী, তাঁরা বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে কথা বলতেও বাধা দেন। তবে, যোগাযোগ করা হলে বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়ে দেন, “মাড়গ্রামের খবরটা জানি। ওখানে ঠিক কী হয়েছে, তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।” বেআইনি ভাবে আতসবাজি তৈরির বিষয়েও কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে এসপি জানিয়েছেন। এ দিকে, ঘটনার পর থেকে বাড়ির মালিক নফর শেখ পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ ওই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা রুজু করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ছোট ডাঙালপাড়া লাগোয়া ফাঁকা মাঠে একটি দু’কামরার টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে বছর দশেক ধরে ওই পরিবারটি আতসবাজি তৈরির কারবারে যুক্ত। মূলত বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে আতসবাজির অর্ডার নেওয়া হতো। তার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় কোনও অনুমতি ছিল না। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ কোনও ভাবে আতসবাজি ফেটে আগুন লেগে যায়। তা দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ভেতর থেকে তিন ও চার বছরের তিনটি শিশু এবং এক যুবককে জখম অবস্থায় উদ্ধার করেন। তাদের সঙ্গে সঙ্গে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জখম শিশুরা হল শেখ আজিমউদ্দিন, তার বোন খালিদা খাতুন, খুড়তুতো বোন মাহমুদা খাতুন এবং আজিমের বাবা নাসিরউদ্দিন শেখ। খবর পেয়ে রামপুরহাট থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তত ক্ষণে অবশ্য আগুনে পুড়ে বাড়ির অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কী ভাবে ধরল আগুন?

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কিছু বলতে পারেনি। অন্য দিকে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। ঘটনার পর থেকে বাড়ির অন্য পুরুষদেরও খোঁজ নেই। যতটুকু জানা গিয়েছে, ছোট ডাঙালপাড়া লাগোয়া মাঠে একটি ফাঁকা জমিতে তৈরি ওই বাড়িতে নফর শেখ এবং তাঁর দুই ছেলের পরিবার নিয়ে মোট দশ জনের বাস। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল ঘটনার পরে দেখা গেল ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ভিতরে আতসবাজি তৈরির পোড়া সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দেখতে পাওয়া গেল তুবড়ি তৈরির ছোট ছোট মাটির ভাঁড়, রং মশলা, হাউই তৈরির সুতলিও। বাড়ির দুই বৌমা মাঠে জমির আলে বসে কান্নাকাটি করছেন। তাঁদেরই এক জন তাসমিন বিবির স্বামী নাসিরউদ্দিন ঘটনায় জখম হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ঘটনা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেই বাসিন্দাদের একাংশ বাধা দিলেন। তাঁরা তাসমিনকেও চুপ করে যেতে বলেন। এমনকী, ওই বাসিন্দারা নফরের প্রতিবেশীদেরও মুখ খুলতে দেননি। তারই মধ্যে কোনও রকমে নফরের এক প্রতিবেশী মহিলা দাবি করলেন, “আতসবাজি তৈরির মশলাতে কোনও ভাবে আগুন ধরে গিয়ে বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। আগুল লাগলেও বড় ধরনের কোনও আওয়াজ আমরা পাইনি।” অন্য দিকে, রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করার সময় জখম শিশুদের সঙ্গে থাকা তাদের ঠাকুমা মেরিনা বিবি দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি দোকানে জিনিস কিনতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “ছোট ছেলে নাসিরউদ্দিন বিয়ে বাড়ির জন্য আতসবাজি তৈরি করছিল। শিশুরা বাড়ির ভিতরেই খেলছিল। কীভাবে আগুন লাগল বুঝতে পারছি না।”

এ দিকে, প্রশ্ন উঠছে, এত দিন ধরে ওই বাড়িতে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে আতসবাজি তৈরির যে কারবার চলছিল, তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন। এলাকার তৃণমূল নেতা খন্দেকার শফির অবশ্য দাবি, “ওই বাড়িতে বেআইনি ভাবে আতসবাজি তৈরি হচ্ছিল না। কারণ, আতসবাজি তৈরির প্রয়োজনীয় অনুমতি ওই পরিবারের ছিল।” যদিও ঘটনা হচ্ছে, এ রকম ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিকাঠামো ছাড়া কোনও বাসগৃহে আতসবাজি তৈরির সরকারি অনুমতি মেলার কথাই নয়। এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে খোঁজ নিচ্ছি।” অন্য দিকে, রামপুরহাট ২ বিডিও সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আতসবাজি তৈরির আদৌ কোনও সরকারি অনুমোদন ওই পরিবারের ছিল কিনা, তা খতিয়ে না দেখে বলতে পারব না।”

মাড়গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

injured margram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE