Advertisement
১৯ মে ২০২৪

আদিবাসী বধূকে ধর্ষণ, সাজা দুই সিপিএম কর্মীর

এক আদিবাসী বধূকে ধর্ষণ করে নির্মম অত্যাচার করার দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড হল দুই সিপিএম কর্মীর। মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা আদালতের ফাস্ট ট্রাক প্রথম আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক কর্ণপ্রসাদ বর্মন এই রায় দেন। সাজাপ্রাপ্তরা হল কাশীপুর থানার গামারকুড়ি গ্রামের সমীর মাঝি ও ওয়াশিংটন কিস্কু। ২০১২ সালের ২৮ অগস্ট কাশীপুর থানা এলাকায় ফাঁকা বাড়িতে একা পেয়ে এক আদিবাসী বধূকে খাটে বেঁধে ধর্ষণ করে তাঁর যৌনাঙ্গে পাথর ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওই দুই যুবক।

আদালতে দুই দোষী। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

আদালতে দুই দোষী। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

এক আদিবাসী বধূকে ধর্ষণ করে নির্মম অত্যাচার করার দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড হল দুই সিপিএম কর্মীর। মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা আদালতের ফাস্ট ট্রাক প্রথম আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক কর্ণপ্রসাদ বর্মন এই রায় দেন। সাজাপ্রাপ্তরা হল কাশীপুর থানার গামারকুড়ি গ্রামের সমীর মাঝি ও ওয়াশিংটন কিস্কু।

২০১২ সালের ২৮ অগস্ট কাশীপুর থানা এলাকায় ফাঁকা বাড়িতে একা পেয়ে এক আদিবাসী বধূকে খাটে বেঁধে ধর্ষণ করে তাঁর যৌনাঙ্গে পাথর ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওই দুই যুবক। বিচারক ১২ বছর কারাদণ্ডের সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০০০ টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অনধিকার প্রবেশের দায়ে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২০০০ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছ’মাস কারাবাসের নির্দেশ দেন। জরিমানার অর্থ নিযার্তিতাকে দিতে বলেছেন বিচারক। সব ক’টি সাজা একই সঙ্গেই চলবে।

মমলার সরকার পক্ষের আইনজীবী সুবোধ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই বধূ বাড়িতে একা ছিলেন। তাঁর স্বামী দিনমজুর। তিনি কাজ করতে বার্ণপুরে গিয়েছিলেন। ছেলে গিয়েছিল টিউশন পড়তে। সেই সুযোগে ওই দুই যুবকের সঙ্গে আরও একজন বধূর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে খাটে বেঁধে ধর্ষণ করে। তার পর তাঁর যৌনাঙ্গে পাথর ঢুকিয়ে দিয়ে পালায়। পরে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর ওই অবস্থা দেখে পড়শিদের ডেকে বধূটিকে পুলিশের কাছে নিয়ে যান। সে দিনই তিনি পুলিশের কাছে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা বধূর যৌনাঙ্গ থেকে তিনটি পাথরের টুকরো বের করেন। সুবোধবাবু জানিয়েছেন, অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশ ওই বছরেই নভেম্বর মাসে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। মমলার বিচার শুরু হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করলেও পরে তারা জামিন পায়। পরে বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিতে বধূটি দুজনের কথা জানিয়েছিলেন। তৃতীয় জনকে তিনি চিনতে পারেননি। ফলে তাকে ধরা যায়নি। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক সোমবার অভিযুক্ত দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।

মঙ্গলবার সাজা ঘোষণার কথা থাকায় এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন ওই বধূ। এ দিন রায় শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। খুশি তো বটেই, তবে ওরা সারা জীবনটা জেলে থাকলে শান্তি পেতাম।” এ দিনও তিনি জানান, ঘটনার কথা ভাবলে এখনও তিনি ভয়ে শিউরে ওঠেন। স্ত্রীর সঙ্গে আদালতে এসেছিলেন বধূটির স্বামীও। তিনিও এই ক’টা বছর স্ত্রীকে মানসিক ভাবে সাহায্য করেছেন। তিনিও বললেন, “ওরা সাজা পাওয়ায় আমরা শান্তি পেলাম।”

কাশীপুরে তৃণমূলের ব্লক কাযর্করী সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, “অভিযুক্তরা দু’জনেই সিপিএমের কর্মী। আর নিযার্তিতার স্বামী আমাদের দলের কর্মী। আদালত নিযার্তিতার পক্ষে রায় দেওয়ায় সত্যের জয় হল।” সিপিএমের কাশীপুর জোনাল সদস্য মহাদেব মাহাতো বলেন, “ওই দু’জন আমাদের দলের লোক বলেই তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তৃণমূলই তাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia rape two CPM activist charged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE