Advertisement
E-Paper

আসরে খোদ সভাধিপতি, বিধায়ক

দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য কড়া বার্তা দেওয়া হচ্ছে বারবার। কিন্তু, দলেরই সদস্যদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার বিরাম নেই রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূলে। আর সেই বেলাগাম অনাস্থার জেরে জেরবার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই অনাস্থার ঘায়ে অপসারিত হতে হয়েছে রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রীনা বাউরিকে। এ বার অনাস্থার ধাক্কায় সরতে হল তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তীকে। অথচ কর্মাধ্যক্ষের অপসারণ রুখতে রীতিমতো কোমর বেঁধেই নেমেছিলেন দলের তাবড় নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৭
সভাপতির ঘরে বসে আছেন সভাধিপতি, বিধায়ক। পাশের ঘরে তখন চলছে অনাস্থা।—নিজস্ব চিত্র

সভাপতির ঘরে বসে আছেন সভাধিপতি, বিধায়ক। পাশের ঘরে তখন চলছে অনাস্থা।—নিজস্ব চিত্র

দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য কড়া বার্তা দেওয়া হচ্ছে বারবার। কিন্তু, দলেরই সদস্যদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার বিরাম নেই রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূলে। আর সেই বেলাগাম অনাস্থার জেরে জেরবার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

ইতিমধ্যেই অনাস্থার ঘায়ে অপসারিত হতে হয়েছে রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রীনা বাউরিকে। এ বার অনাস্থার ধাক্কায় সরতে হল তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তীকে। অথচ কর্মাধ্যক্ষের অপসারণ রুখতে রীতিমতো কোমর বেঁধেই নেমেছিলেন দলের তাবড় নেতারা। সোমবার অনাস্থার দিনে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কার্যালয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন খোদ পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, রঘনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি এবং জেলা তৃণমূল সভাপতির ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত জেলার অন্যতম নেতা নবেন্দু মাহালি।

তাতেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না! ব্লক তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী কার্যত দলের জেলা নেতাদের টপকে ওই পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ কণিকাদেবীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা পাশ করিয়ে নিল। সমিতির তৃণমূল সদস্যদেরই আনা অনাস্থায় অপসারিত হতে হল ওই কর্মাধ্যক্ষকে। বিডিও (রঘুনাথপুর ১) সুনীতিকুমার গুছাইত এ দিন বলেন, “নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থার তলবি সভায় ওই স্থায়ী সমিতির পাঁচ জন সদস্যের মধ্যে তিন জন উপস্থিত হয়েছিলেন। ফলে কোরাম গঠন হয়েছে এবং উপস্থিত সদস্যেরা সকলেই অনাস্থার পক্ষে মত দেওয়ায় ওই কর্মাধ্যক্ষ অপসারিত হয়েছেন।”

এই ঘটনার জেরে দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ে যে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন জেগেছে, তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা নবেন্দুবাবুর মন্তব্যেই। তাঁরা বলেন, “দলের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, দলের হাতে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনা যাবে না। এ দিন সেই নির্দেশ ফের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ব্লকের কিছু নেতা-কর্মী সেই নির্দেশ অমান্য করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ এ দিনই দলের জেলা সভাপতিকে করা হয়েছে।” মূলত রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূলের ক্ষমসাতীন গোষ্ঠীর নেতা প্রদীপ মাজির বিরুদ্ধেই শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

প্রদীপবাবুর পাল্টা তোপ দেগেছেন খোদ সভাধিপতির বিরুদ্ধেই। তাঁর দাবি, “সভাধিপতির উপস্থিতির জন্যই এ দিন অনাস্থা হয়েছে। উনিই এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ইন্ধন দিয়ে অনাস্থা এনে অস্থিরতা তৈরি করছেন।” সৃষ্টিধর মাহাতোর ইন্ধনেই বেড়ো পঞ্চায়েতে সিপিএমের মদত নিয়ে তৃণমূলের একাংশ দলেরই প্রধানকে সরিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রদীপবাবু। এই অভিযোগের জবাব দিতে চাননি সৃষ্টিধরবাবু। তিনি বলেন, “এখন দলের মধ্যে একটাই সাংগঠনিক পদ রয়েছে। সেটা হল জেলা তৃণমূল সভাপতির। কে কী বলল, তা নিয়ে উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে শোভনীয় নয়।” দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “রঘুনাথপুরে অনাস্থা নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি। দলের তরফে যাঁরা এ দিন পঞ্চায়েত সমিতিতে ছিলেন, তাঁদেরকে লিখিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা আর বরদাস্ত করা হবে না।”

ঘটনা হল, রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেশ ক’দিন ধরেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই দ্বন্দ্বেরই জেরে পরপর অনাস্থা আনা হয়েছে তৃণমূল পরিচালিত বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে। বাদ পড়েনি পঞ্চায়েত সমিতিও। সরকারি চেক বিলির অনুষ্ঠানে ‘দলীয় নির্দেশ’ অমান্য করে সভাধিপতির সঙ্গে উপস্থিত থাকায় ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীতে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা সম্প্রতি অনাস্থা এনেছিলেন সহ-সভাপতি রীনা বাউরী ও কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। এর আগে অনাস্থায় অপসারিত হয়েছেন সহ-সভাপতি। আর সোমবার অপসারিত হতে হল কণিকাদেবীকে। সহ-সভাপতি ও কর্মাধ্যক্ষ—পরপর দু’জনের এই ভাবে অপসারণের ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূলের উপরে কি তা হলে কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের? ওই ব্লকেরই এক নেতার আক্ষেপ, “যা চলছে, তাতে মনে হচ্ছে দলটায় শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই!” নিচুতলার কর্মীরাও বলছেন, এ রকম চলতে থাকলে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে। অবিলম্বে দলের দ্বন্দ্ব থামাতে শীর্ষ নেতারা হস্তক্ষেপ করুন, এমনটাই তাঁদের দাবি।

যদিও তাতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। কারণ, রীনাদেবীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার সময়েই জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব অনাস্থা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিল ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে। সেই বার্তাকে কার্যত উপেক্ষা করেই অনাস্থা এনে রীনাদেবীকে সরানো হয়েছে। কণিকাদেবীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা দেখতে এ দিন সকালেই পঞ্চায়েত সমিতিতেই চলে আসেন সভাধিপতি ও বিধায়ক। কিন্তু ফল হয়নি। তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতোর অফিসঘরে। জনা পাঁচেক এলেও অনুপস্থিত ছিলেন বেশির ভাগ সদস্য। ফলে, সব সদস্যকে ডেকে অনাস্থার তলবি সভায় অনুপস্থিত থাকার জন্য যে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছিলেন দলের নেতারা, তা আর সম্ভব হয়নি।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ব্লকে গিয়ে দেখা যায় সভাপতির অফিসে বসে রয়েছেন সভাধিপতি, বিধায়ক ও নবেন্দুবাবু। রয়েছেন কণিকাদেবী-সহ ব্লকের জেলা পরিষদের দুই সদস্য ও এক কর্মাধ্যক্ষ। কণিকাদেবীর গদি বাঁচাতে এখানে এসেছেন, সে কথা অবশ্য মানতে চাননি সৃষ্টিধরবাবু। তাঁর বক্তব্য, “এলাকার উন্নয়নের কাজের পর্যালোচনা করতেই নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেছি আমরা।” পাশেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাকক্ষে ১২টা নাগাদ শুরু হয়ে যায় অনাস্থার তলবি সভা। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর আসে অনাস্থায় অপসারিত হয়েছেন নারী ও শিশু-কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ। গোটা ঘটনা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি কণিকাদেবী।

raghunathpur no confidence motion kanika chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy