Advertisement
E-Paper

ইঞ্জিনিয়ার-নিগ্রহ, অভিযুক্ত সেই তৃণমূলের প্রদীপ

নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরির অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন ব্লকের ইঞ্জিনিয়ার। অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁকে নিগ্রহ করেন শাসকদলের দুই নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৫

নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরির অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন ব্লকের ইঞ্জিনিয়ার। অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁকে নিগ্রহ করেন শাসকদলের দুই নেতা।

শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি রঘুনাথপুর ১ ব্লকের। সদ্য পদ থেকে অপসারিত হওয়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রদীপ মাজি ও রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজেশ মণ্ডলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে নিগৃহীত ইঞ্জিনিয়ার। পাশপাশি, ঘটনার রিপোর্ট দিয়েছেন বিডিও-কে। বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “বেড়ো পঞ্চায়েতের কুঞ্জবিহারী গ্রামে রাস্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারকে হেনস্থা হতে হয়েছে। উনি সেই রিপোর্ট দিয়েছেন আমাদের কাছে। তা পাওয়ার পরেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আপাতত রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে।” পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই দুই তৃণমূল নেতাই।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের তহবিলে দশ লক্ষ টাকা কুঞ্জবিহারী গ্রামে ঢালাই রাস্তা তৈরি করছে পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু, প্রথম থেকেই ওই রাস্তায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। প্রথমবার কাজ পরিদর্শনে গিয়ে ব্লকের ইঞ্জিনিয়ার দয়াময়বাবু ঠিকাদারকে সঠিক মানের পাথর ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, পরের বার তিনি ঠিকাদারকে নিয়ে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, প্রশাসনের নির্দেশিকা মেনে কাজ হচ্ছে না।

ফলে, শুক্রবার তৃতীয় বার ফের কাজ দেখতে ওই গ্রামে যান দয়াময়বাবু। অভিযোগ, তখনই তৃণমূল নেতা প্রদীপবাবু ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তাঁকে প্রকাশ্যেই হেনস্থা করেন। দয়াময়বাবু জানান, নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করাই শুধু নয়, রাস্তার যতটা ঢালাই হওয়ার কথা তা-ও হচ্ছিল না। বিধি ভেঙে রোলার না চালিয়েই পাথর বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। প্রকল্পের কাজ সম্পর্কিত বোর্ডও লাগানো হয়নি। তিনি বলেন, “এই ধরনের বিস্তর গাফিলতি ছিল কাজে। ফলে, প্রথম থেকেই বিধি মেনে রাস্তা তৈরির জন্য বলা হয়েছিল ঠিকাদারকে।” দয়াময়বাবুর দাবি, শুক্রবার প্রদীপবাবু তাঁকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, কুঞ্জবিহারী গ্রামের রাস্তার কাজে রোলার আনা হয়েছে। কী ভাবে কাজ হবে, তা যেন তিনি এসে দেখিয়ে যান। ওই ইঞ্জিনিয়ারের অভিযোগ, গ্রামে যাওয়ার পরেই তাঁকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন ওই দুই তৃণমূল নেতা। প্রতিবাদ করলে তাঁকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করা হয়। ঘটনার পরেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন ওই ইঞ্জিনিয়ার। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রঘুনাথপুর থানায় ওই দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন দয়াময়বাবু।

যে পঞ্চায়েত এলাকায় এই রাস্তা তৈরি হচ্ছে, সেই বেড়োতেই বাড়ি প্রদীপবাবুর। আর এক অভিযুক্ত রাজেশবাবু প্রদীপবাবুর ছায়াসঙ্গী হিসাবেই এলাকায় পরিচিত। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “ঘটনার দিনে আমি আদালতে ছিলাম। তা হলে আমি কী ভাবে ওই গ্রামে থাকতে পারি?” উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করানো হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। আর রাজেশবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “ব্লকের সর্বত্রই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। প্রশাসনেরই একাংশ টাকার বিনিময়ে সেই কাজগুলি ঠিক ভাবে হচ্ছে বলে শংসাপত্র দিয়ে ঠিকাদারদের বিল পাশ করিয়ে দিচ্ছে। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে আমি ওই দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলাম বলেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”

ইঞ্জিনিয়ার-নিগ্রহের ঘটনাকে অবশ্য হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই ব্লকে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে তাঁর অনুগামীরা অনাস্থা এনে দলকে অস্বস্তিতে ফেলায় আগেই নেতৃত্বের কোপে পড়েছেন প্রদীপবাবু। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “নেতাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ কখনওই দল মেনে নেবে না। আমরা দলীয় স্তরে ওই ঘটনার খোঁজ নিচ্ছি। প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলা হবে। যদি দেখা যায়, অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে, তা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থাও নেবে।”

raghunathpur tmc pradip majhi engineer assault
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy