Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উত্‌সবের দিনে সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে মাসড়া গ্রাম

পুজোর সময় নিজের চেহারাটাই পাল্টে ফেলে এই গ্রাম। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে গ্রামের মধ্যে সাংস্কৃতিক উত্‌সবে মেতে ওঠেন এলাকার ৩৬টি গ্রামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। গত তিন দশক ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন মধুর দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে রামপুরহাট ১ ব্লকের মাসড়া গ্রামে।

অরুণ মুখোপাধ্যায়
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৯
Share: Save:

পুজোর সময় নিজের চেহারাটাই পাল্টে ফেলে এই গ্রাম। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে গ্রামের মধ্যে সাংস্কৃতিক উত্‌সবে মেতে ওঠেন এলাকার ৩৬টি গ্রামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। গত তিন দশক ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন মধুর দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে রামপুরহাট ১ ব্লকের মাসড়া গ্রামে।

রামপুরহাট শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাসড়া গ্রামটি ওই পঞ্চায়েতের কেন্দ্রবিন্দু। পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামই আদিবাসী অধ্যুষিত। দু’টি গ্রামে হিন্দু-মুসলিম ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করেন। এমনিতে মাসড়া গ্রামে চারটে সাবেকী দুর্গাপুজো, চারটি লক্ষ্মীপুজো এবং কয়েকটি কালীপুজোর আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকটি উত্‌সবেই মানুষজন মেতে ওঠেন। তবে, আসল উত্‌সব হয় বিজয়া দশমীর পরে লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে। তখনই রাতভর সাংস্কৃতিক উত্‌সবে মেতে উঠেন আশপাশের সব ক’টি গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন সন্ধ্যা থেকে টানা তিন দিন নাটক, যাত্রা ও নানা সংস্কৃতিক উত্‌সব চলে। প্রস্তুতি শুরু হয় দু’ মাস আগে থেকেই। অপেক্ষা শেষে উত্‌সবে যোগ দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন এলাকার মানুষ। শিউলিবোনা গ্রামের বৈহার মুর্মু, তেঁতুলবাঁদি গ্রামের দোয়া টুডু, কাষ্টগড়া গ্রামের শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী বিবেক গুপ্ত বলছেন, “এই তিনটে দিনের জন্যই সারা বছর তাকিয়ে থাকি।” গত তিন বছর ওই উত্‌সবে যাত্রাপালার নির্দেশক হিসাবে কাজ করেছেন স্থানীয় গুগগ্রামের পরিচিত যাত্রাশিল্পী প্রসেনজিত্‌ মণ্ডল। বৈহারদের সুরেই তিনিও বলেন, “ওই ক’টা দিন সব কাজ ফেলে রেখে মাসড়ায় পড়ে থাকি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮১ সালে মাসড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রূপম’ সাংস্কৃতিক সংস্থা। ওই বছর থেকেই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরু। গ্রামের কয়েক জন সাংস্কৃতিক কর্মীর চেষ্টায় গত কয়েক বছর থেকে তাতে নানা পালক যুক্ত হয়েছে। বিশিষ্ট জনদের সংবর্ধনাও দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এলাকার মেয়েরা, বিশেষ করে প্রত্যন্ত পর্দাসীন ঘরের মুসলিম ছাত্রী ও বধূরাও নিজেদের মতো করে নাটক মঞ্চস্থ করছেন। মাসড়ার বাসিন্দা তথা পাথর ব্যবসায়ী সৈয়দ মইনউদ্দিন হোসেন (অশোক) বললেন, “এক দিন সাধারণ নাটক এবং শেষ দিন যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়। এ বারও হবে।” উত্‌সবের আয়োজকেরা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুজোর পরের তিন দিনের ওই উত্‌সবের জন্য অশোকবাবু তাঁর এক মাসের আয়ের পুরোটাই দিয়ে দেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা, বন দফতরের প্রাক্তন রেঞ্জ অফিসার জিতেন্দ্রকুমার সাহা বলছেন, “অশোকবাবুর সাহায্য ছাড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হত না।” অশোকবাবুও জানাচ্ছেন, জিতেন্দ্রবাবু অভিভাবকের মতো। মাসড়া গ্রামে এই ধরনের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে।

বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাসের সুরে তাঁরা বলছেন, “মাসড়ার একটাই মন্ত্র— সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arun mukhopadhyay suri masra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE