পুলিশি পাহারায় আটক করা ট্রাক। —নিজস্ব চিত্র
লুঠ তো রোজই হয়। কিন্তু, বুধবার দিনদুপুরে সেই লুঠের বহর দেখে চোখ কপালে উঠল খোদ মহকুমাশাসকের!
বিষ্ণুপুরের ধরাপাঠ, ভাটরা, অযোধ্যা গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদ থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পথ অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। কিন্তু, বালি তোলা বন্ধ করতে প্রশাসনকে সে ভাবে পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি আনন্দবাজারে এই অবৈধ বালি তোলার কারবার নিয়ে প্রতিবেদন বেরোয়। আর বুধবার বিকেলে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার এবং বিষ্ণুপুর থানার আইসি স্বপন দত্তের নেতৃত্বে পুলিশ ও প্রশাসনের একটি দল ঘটনার তদন্তে গ্রামে যায়।
এ দিন দুপুর তিনটের পর থেকে জয়কৃষ্ণপুর-নবান্দা রাস্তার জয়কৃষ্ণপুর মোড়ে একের পর এক বালি বোঝাই লরি ও ট্রাক্টর আটক করতে থাকেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। দু’ঘন্টার মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণ বালি বহন করার অভিযোগে হাতেনাতে ৩০টি গাড়িকে আটক করে পুলিশ-প্রশাসন। এলাকারই একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে আটক হওয়া গাড়িগুলিকে রাখা হয়। এ দিকে, জয়কৃষ্ণপুর মোড়ে গাড়ি তল্লাশি হচ্ছে বুঝে অনেক চালকই গাড়ি ফেলে দৌড় মারেন। পুলিশকর্মীরা তাঁদের ধরে আনেন। বেশ কিছু গাড়ির চালক অন্য পথে পালাতে গিয়েও পুলিশের খপ্পরে পড়ে যান। এই সব কাণ্ড দেখতে জয়কৃষ্ণপুর মোড়ে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। দেরিতে হলেও প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রাম আচার্য, শৈলেন বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “অতিরিক্ত বালি বোঝাই ভারী ট্রাক-ট্রাক্টর চলাচলের জন্য গ্রামের রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। রাতে প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনা। পাশাপাশি অতিরিক্ত বালি তোলার জন্য নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে এই সমস্ত গ্রামগুলিতে।”
ধরাপাঠ গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদ লাগোয়া সরকারি সংরক্ষিত একটি প্রাচীন জৈন মন্দির রয়েছে। অবিলম্বে বালি তোলা বন্ধ না হলে সেটিও নদীর গ্রাসে চলে যাবে বলে গ্রামবাসীর আশঙ্কা। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে দ্বারকেশ্বর নদের পাড় বাঁধানোর দাবিও জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা এ নিয়ে অনেক বার অভিযোগ জানালেও প্রশাসন নড়েচড়ে বসেনি। অবশেষে কাজ হচ্ছে দেখে আমরা খুশি।” নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার বহর দেখে এ দিন বাস্তবাকিই অবাক হয়ে যান মহকুমাশাসক। পলাশবাবুর কথায়, “যা পরিস্থিতি দেখলাম, তা এক কথায় দিনেদুপুরে ডাকাতি! ধৃতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব।” বুধবার রাত পর্যন্ত অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মহকুমা ভূমি সংস্কার আধিকারিক জানান, দু-ঘণ্টার মধ্যেই চালক-সহ ৩০টি অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়ি আটক করা হয়েছে। গাড়ির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
তবে, বাসিন্দারা বারবার বালি লুঠের অভিযোগ করার পরেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভূমি সংস্কার দফতরের উপরে ক্ষুব্ধ মহকুমাশাসক। তিনি বলেন, “আমি ভূমি দফতরের আধিকারিকদের কাছে জানতে চাইব, এত দিন সবার চোখের সামনে বালি লুঠ হলেও আপনারা কি ঘুমোচ্ছিলেন? দু’ঘণ্টাতেই যদি ৩০টি গাড়ি আটক করা যায়, তা হলে এত দিন ধরে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি, তা-ও জানতে চাওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy