Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাজের টোপে ঘর ছেড়ে ঝুঁকির মুখে গ্রামবাসীরা

এলাকায় কাজ নেই। ক’দিন আগেই কাজের সন্ধানে স্বামীর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন পুরুলিয়ার পাড়া থানার বামুনবাদ গ্রামের এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। কাজের টোপ দিয়ে বর্ধমানের কাঁকসায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
পাড়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৬:৫৩
Share: Save:

এলাকায় কাজ নেই। ক’দিন আগেই কাজের সন্ধানে স্বামীর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন পুরুলিয়ার পাড়া থানার বামুনবাদ গ্রামের এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। কাজের টোপ দিয়ে বর্ধমানের কাঁকসায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

শুধু যে তাঁরাই কাজের খোঁজে এলাকা ছেড়েছিলেন, তা কিন্তু নয়। দুবড়া পঞ্চায়েতের বামুনবাদ বা তার আশপাশের বহু মানুষই গ্রামছাড়া।

ঘটনার পরেই ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, নির্যাতিতা মহিলার দাদারাও ঝাড়খণ্ডের দুমকায় কাজে গিয়েছেন। বোনের লাঞ্ছনার খবর পেয়েও তাঁরা গ্রামে ফিরতে পারেননি। মূলত বৃদ্ধ ও শিশুরাই গ্রামে রয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই গ্রামে শ’তিনেক পরিবারের বাস। এর মধ্যে চার-পাঁচ জন চাকরিজীবী। বাকিদের ভরসা চাষবাস বা দিনমজুরি। শীতের শেষে মাঠে কাজ নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, কংগ্রেসের মনিরা বিবির আক্ষেপ, “পঞ্চায়েত থেকে ১০০ দিনের কাজও দেওয়া যায়নি। তাই বাইরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

পাট্টা পাওয়া সামান্য জমিতে ছোট্ট বাড়ি নির্যাতিতা মহিলার। তাঁর শ্বাশুড়ি বলেন, “কয়েক দিন ধরেই ছেলেটা এলাকায় কাজ খুঁজছিল। কিছু না জোটায় শেষে বাইরে যাবে বলে ঠিক করে। বৌমার শরীরের অবস্থা বুঝে তাকে যেতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু কাজ না করলেই বা চলবে কী করে! বাইরে যেতে হল বলেই ওরা বিপদে পড়ল।” তাঁর আক্ষেপ, দারিদ্রের কারণেই গুজরাটে দুই মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। এলাকার অনেকের মতেই, যা প্রায় চোখ-কান বুজে মেয়ে বিক্রি করে দেওয়ার সামিল।

নির্যাতিতা মহিলার বাপের বাড়িও একই পাড়ায়। তাদের অবস্থাও এক। মহিলার মা বলেন, “এখানে কাজ না থাকায় আমার চার ছেলেই দুমকায় চলে গিয়েছে। মেয়ের খবর পেয়েই তাদের আসতে বলেছিলাম। কিন্তু কাজ ফেলে অত দূর থেকে আসতে পরেনি।” কাছেই থাকেন দুবড়ার দর্জি মহম্মদ এবরার আলম শাহ। তিনি বলেন, “এই গ্রামের হাতেগোনা কিছু মানুষ দুবড়ায় রাজমিস্ত্রি, গ্যারাজ, সাইকেল দোকান বা বেকারিতে কাজ করেন। এ ছাড়া আর কাজ নেই। বাধ্য হয়ে বহু কর্মঠ ছেলে কাজ করতে বাইরে চলে গিয়েছেন।” স্থানীয় বাসিন্দা তারু রাজোয়াড়, রফিক ওস্তা, পবন মাহাতোরা বলেন, “আমাদের সকলের ১০০ দিনের কাজের জবকার্ড রয়েছে। কিন্তু কোনও কাজই পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হচ্ছে না।”

পাড়া ব্লকে ১০০ দিন প্রকল্পের কাজের গড় ২৫ দিন হলেও দুবড়া পঞ্চায়েতে তা মোটে ১৯। গত সাত-আট মাসে যেখানে পঞ্চায়েতের অন্য গ্রাম সংসদে গড়ে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে, বামুনবাদে হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার কাজ। কংগ্রেসের দুবড়া অঞ্চল সভাপতি রিজওয়ান আহমেদের অভিযোগ, “এখানে থাকার মধ্যে রয়েছ একটা স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। চাষও তেমন হয় না। কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্য আমাদের বলেই তৃণমূলের পঞ্চায়েত দলবাজি করে ১০০ দিনের কাজ দিচ্ছে না। তাই কাজের সন্ধানে অন্যত্র যেতে হচ্ছে।”

পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান চন্দনা বাউরি অবশ্য দলবাজির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “আমরা সাধ্য মতো সব এলাকায় কাজ দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু বামুনবাদের সদস্যের কাজ চেয়ে আবেদন করায় খামতি রয়েছে।” পাড়া-র বিডিও সমীরণ বারিকের দাবি, “অন্য এলাকার ইটভাটার মালিকেরা এজেন্টের মাধ্যমে এই এলাকার মজুরদের এককালীন মোটা টাকা দিয়ে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। সচেতনতা শিবির করে ১০০ দিনে কাজের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কিছু লোককে ঠেকানো গেলেও বাকিদের আটকানো যায়নি।”

কেন্দ্রীয় প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও যদি মানুষকে গ্রামছাড়া হতে হয়, প্রশাসন কি দায় এড়াতে পারে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

human trafficking shubhraprakash mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE