Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
জল নেই, ব্যর্থ বিকল্প চাষের পরিকল্পনা

ক্ষতিপূরণের সার বেহাত পুরুলিয়ায়

বৃষ্টির অভাবে ধান চাষ মার খেয়েছে। তাই বিকল্প চাষের জন্য স্পেশাল প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সরকারের তরফ থেকে। ওই প্যাকেজে বিনামূল্যে ডাল, তৈল বীজ ও সার বিলি করার বন্দোবস্ত করা হয়। কিন্তু ফসল না ফলিয়ে ওই সব জিনিস খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। এমনই চিত্র পুরুলিয়া জেলায়।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১১
Share: Save:

বৃষ্টির অভাবে ধান চাষ মার খেয়েছে। তাই বিকল্প চাষের জন্য স্পেশাল প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সরকারের তরফ থেকে। ওই প্যাকেজে বিনামূল্যে ডাল, তৈল বীজ ও সার বিলি করার বন্দোবস্ত করা হয়। কিন্তু ফসল না ফলিয়ে ওই সব জিনিস খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। এমনই চিত্র পুরুলিয়া জেলায়।

কিন্তু কেন?

সরকারি তথ্য বলছে, গত বছরে পুরুলিয়া জেলায় স্বাভাবিকের থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম হয়েছে। ফলে আমন ধান উৎপাদন কম হয়েছে। এই সমস্যার কথা গত অগস্টে জেলা সফরে আসা কৃষি দফতরের মন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দফতরের জেলা আধিকারিকেরা। মন্ত্রী বিকল্প চাষের ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে জন্য জেলার যে সব এলকায় বৃষ্টির অভাবে চাষ মার খেয়েছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করে স্পেশাল প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানবাজার, নিতুড়িয়া ও পুরুলিয়া ২ ব্লক। জেলা কৃষি তথ্য আধিকারিক সুশান্ত দত্ত বলেন, “শতকরা ৫০ ভাগেরও কম ধান চাষ হয়েছে জেলার মৌজা চিহ্নিত করা হয়েছিল (সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মৌজার সংখ্যা ৫৮৫টি) মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সেই সব জায়গায় দফতরের পক্ষ থেকে স্পেশাল প্যাকেজের বরাদ্দ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু যেখানে বৃষ্টির অভাবে ধান চাষ হয়নি, পুকুর ও আশপাশের জলাশয়গুলি শুকিয়ে গিয়েছে, সেখানে সামান্য হলেও বিকল্প চাষের জন্য জল মিলবে কোথা থেকে এ দিশা দেখানো হয়নি। তাই চাষিদের কেউ কেউ বরাদ্দ সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন, কেউ বা ফেলে দিয়েছেন। জলের অভাবে ডাল, তৈল বীজ চাষ করতে গিয়ে চাষিরা ফাঁপড়ে পড়েছেন, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার এক কৃষি আধিকারিক। তা হলে এমন প্যাকেজের ব্যবস্থা করে অর্থের অপচয় করা হল কেন? ওই আধিকারিকের কথায়, “২০১৪ সালের জুলাই-অগস্টে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, পুকুরও ভরেনি। তাই রবি শস্য চাষের মাধ্যমে খানিকটা ক্ষতি পূরণ করা হোক, এমনটা চেয়েছিলেন মন্ত্রী। সেই মতো ক্ষতিগ্রস্ত মৌজা ধরে আমরা বরাদ্দ পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমরা তো বরাদ্দের সার বীজ ফেরত পাঠাতে পারি না।”

কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুলাই-অগস্টে মানবাজার ১ ব্লকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৬৫ মিমি ও ৩৭৯ মিমি। কিন্তু ২০১৪ সালে ওই দুই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৯৬ মিমি ও ২০২ মিমি। দফতরের এক আধিকারিকের মতে, পুরুলিয়ার মতো জেলায় ধান রোপণের আগে ভাল বৃষ্টির দরকার। তা না হওয়ায় অনেক মৌজাতে চারা খেতেই মরে গিয়েছিল। বিক্ষিপ্তভাবে ১৫ অথবা ২০ মিমি বৃষ্টি হয়তো হয়েছে। যা চাষের কাজে লাগেনি। কিন্তু সম্প্রতি মানবাজার ১ ব্লকের কয়েকটি মৌজার চাষিদের জন্য ১০টি অঞ্চলে সাদা সর্ষে, টোড়ি সর্ষে, খেসারি, মুসুর প্রভৃতি ডাল ও সার দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানবাজারের বারমেশিয়া-রামনগর অঞ্চলের এক চাষির কথায়, “আমি ৪ কেজি মুসুর ও ১ কেজি সাদা সর্ষে, কেজি সার পেয়েছি। যে ডোবার জলে ২০১৩ সালে কিছু সব্জি ফলিয়েছিলাম ২০১৪ সালে ওই ডোবার জল তলানিতে রয়েছে। ফলে জমিতে বীজ ফেলতে সাহস হয়নি।” তা হলে, সার এবং বীজ কী করলেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষিদের একাংশ বলছেন, জল তো নেই। অনুদান পেয়েও কাজে আসবে না। বীজ বা সার বাড়িতে ফেলে রেখে শুধু শুধু নষ্ট হবে। তাই বাজারে তাঁরা বিক্রি করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি, বারমেশিয়া-রামনগর অঞ্চলের বামুনপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা স্থানীয় এক দোকান থেকে পাচার হওয়ার সময় ৪৯ বস্তা বরাদ্দের সার আটক করে। কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা পরীক্ষা করে জানান, ওই সার বাজারে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। এগুলি বিনামূল্যে চাষিদের দেওয়ার জন্য এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। কৃষি দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের একাংশ স্বীকার করে নিয়েছেন, বেশিরভাগ এলাকাতেই সার ও বীজের যথাযথ ব্যবহার হয়নি। ঘুরপথে বাজারে বেরিয়ে গিয়েছে। বামুনপাড়া গ্রামের-কাণ্ড একটা নমুনা মাত্র।

তা হলে কি ঠিক মতো সমীক্ষা করে রিপোর্ট পাঠানো হয়নি? মানবাজার ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক শান্তিগোপাল কর্মকার বলেন, “প্রতিটি অঞ্চলের জন্য ৩০০ বস্তা সার ও উপভোক্তাদের তালিকা অনুযায়ী ডাল ও তৈলবীজ পাঠিয়েছি। নিজের এলাকা থেকেই চাষিরা যাতে সংগ্রহ করতে পারেন, এ জন্য বরাদ্দকৃত মাল ওই এলাকার পঞ্চায়েত অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” এ ব্যাপারে তাঁর কী মন্তব্য জানতে চেয়ে বার বার ফোন করা হয়েছে জেলা কৃষি উপঅধিকর্তার দায়িত্বে থাকা সমীর ঘোষকে। তিনি ফোন তো ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manbazar samir dutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE