Advertisement
E-Paper

চোর কি আদৌ ধরা পড়বে, উঠছে প্রশ্ন

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাওয়া কম্পিউটার চুরি আটকাতে নির্দিষ্ট স্কুলগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাত পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাতেও আটাকানো গেল না স্কুল থেকে কম্পিউটার চুরির ঘটনা। এ বার চোরেদের নিশানায় সিউড়ির আলুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়। বুধবার গভীর রাতে স্কুল থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে মোট দশটি কম্পিউটার সেট। সঙ্গে চোরের দল নিয়েছে স্ক্যানার, প্রিন্টার আর প্রজেক্টরও।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৫
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ কবে মিলবে কম্পিউটার? উত্তর খুঁজছে সিউড়ির আলুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ কবে মিলবে কম্পিউটার? উত্তর খুঁজছে সিউড়ির আলুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাওয়া কম্পিউটার চুরি আটকাতে নির্দিষ্ট স্কুলগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাত পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাতেও আটাকানো গেল না স্কুল থেকে কম্পিউটার চুরির ঘটনা। এ বার চোরেদের নিশানায় সিউড়ির আলুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়। বুধবার গভীর রাতে স্কুল থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে মোট দশটি কম্পিউটার সেট। সঙ্গে চোরের দল নিয়েছে স্ক্যানার, প্রিন্টার আর প্রজেক্টরও। বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ দিনই সিউড়ি থানায় চুরির লিখিত অভিযোগ করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষের বড় আশঙ্কা, কম্পিউটারগুলি উদ্ধার না হলে চারশোরও বেশি পড়ুয়াকে কম্পিউটার শিক্ষায় চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে হবে।

বীরভূমে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। এর আগে সিউড়ি ও বোলপুরের একাধিক স্কুল থেকে কম্পিউটার তুলে নিয়ে পালিয়েছে চোরের দল। প্রসঙ্গত, এক অদ্ভুত কায়দায় স্কুল থেকে কম্পিউটার চুরি হচ্ছে। এবং একটিই চক্র ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করছে পুলিশ। কিন্তু, পুলিশ আজও কাউকে ধরতে পারেনি। কোনও কম্পিউটারও উদ্ধার করা যায়নি।

কী কায়দায় চুরি হচ্ছে?

পুলিশ ও স্কুলগুলি সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাতের অন্ধকারে স্কুলের দরজায় পিক আপভ্যান লাগিয়ে রাখছে দুষ্কৃতীরা। তার পর একাধিক তালা ভেঙে নির্বিঘ্নে স্কুল থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাওয়া পড়ুয়াদের কম্পিউটার নিয়ে চম্পট দিচ্ছে লুঠেরারা। এই ভাবেই গত বছর ১৭ ডিসেম্বর কম্পিউটার চুরি হয়েছে বোলপুরের আদিত্যপুর হাইস্কুলে। ওই মাসেরই ২৯ তারিখ সিউড়ির আড্ডা সত্যপ্রসন্ন পাবলিক হাইস্কুলে চুরি হয়। চলতি বছর ৯ জানুয়ারি বোলপুরের বিনুরিয়া হাইস্কুলে এবং ১৬ জানুয়ারি সিউড়ির কড়িধ্যা বিদ্যানিকেতন থেকে কম্পিউটার চুরি হয়। একের পর এক স্কুল থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে পড়ুয়াদের কম্পিউটার অথচ পুলিশ কোনও ঘটনারই কিনারা না করতে পারায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রী মহলে। হতাশ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জেলা কো-অর্ডিনেটর পারমিতা রায়। তিনি জানান, পড়ুয়াদের কম্পিউটার প্রশ্রিক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প আইসিটি (ইনফর্মেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি) স্কিমে ১০টি কম্পিউটার সেট, প্রজেক্টর, প্রিন্টার, স্ক্যানার-সহ কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সব কিছু দেওয়া হয়, যাতে গ্রামের গরিব পড়ুয়ারা বিনা পয়সায় কম্পিউটারের সব কিছু শিখতে পারে। ২০১২ সালে জেলার ৮৪টি এমন স্কুল বেছে ওই প্রকল্পে কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। পারমিতাদেবীর হতাশা, “কিন্তু যে-ভাবে একের পর এক স্কুলে কম্পিউটার চুরির ঘটনা ঘটছে, অথচ প্রশাসন কোনও কিনারা করতে পারছে না, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় অন্যান্য স্কুলে চুরির ক্ষেত্রে রাতে কোনও পাহারার ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু, সিউড়ির আলুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়য়ে তো তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। তার পরেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে কিন্তু জানা গিয়েছে, গত রাতে তিন সিভিক ভলান্টিয়ার (যাঁদের আলুন্দাতেই বাড়ি) চুরির ঘটনা ঘটার সময় আদৌ স্কুল পাহারার দায়িত্ব ছিলেন না। বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে চোরেরা। কিন্তু, প্রশ্ন উঠেছে, সিভিক ভলান্টিয়াররা যে থাকবেন না, তা চোরের দল জানল কী ভাবে? ঘটনা হল, একের পর এক স্কুল থেকে কম্পিউটার চুরির ঘটনা আটকাতে গত জানুয়ারিতেই আগের পুলিশ সুপার সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে স্কুলগুলিতে (যে স্কুলগুলি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কম্পিউটার পেয়েছে) রাত পাহারার ব্যবস্থা করছিলেন। কিন্তু সেটাও বিফলে গেল বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ।

স্কুল সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে শুরুতেই ১০টি কম্পিউটার সেট পায় ওই স্কুল। সঙ্গে এক প্রশিক্ষকও। তখন থেকে ক্লাস ফাইভ থেকে টেন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ পড়ুয়া যেমন কম্পিউটারের বেসিক পাঠ নিচ্ছিল, তেমনই পাঠ্যবইয়ে থাকা বিষয়গুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক প্রচুর সিডি ছিল, যেগুলি প্রজেক্টরের মাধ্যমে তাদের দেখানো হত। যা পড়ুয়াদের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণের বিষয় ছিল বলেই জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা। সেই কম্পিউটার সেট এবং প্রজেক্টরই চুরি হয়ে যাওয়ায খুবই মনমরা ওই স্কুলের পড়ুয়া বর্ষা, সোমনাথ, সৌমারা। তারা বলছে, “খুব ভাল চলছিল কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। সেটা বোধহয় এ বার বন্ধ হয়ে গেল।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমরা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরাও সোম থেকে বুধ, তিন দিনের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছি স্কুলের কম্পিউটার থেকে। বৃহস্পতিবার সকালেই যে এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি।” প্রধান শিক্ষকের আক্ষেপ ,“আমার স্কুলে এমন পড়ুয়ার সংখ্যাই বেশি, যাদের পরিবারের আর্থিক স্বাচ্ছল্য নেই। তাই ওই সব পড়ুয়ার অভিভাবকের পক্ষে নিজের সন্তানদের বাইরে কম্পিউটার শেখানো কার্যত দুষ্কর। এতগুলো কম্পিউটার চুরি যাওয়ায় স্কুলের তো বটেই, আরও বেশি করে পড়ুয়াদের ক্ষতি হয়ে গেল।”

স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পড়ুয়াদের এখন একটাই প্রশ্ন, আর কতগুলি স্কুলে এমন ঘটনা ঘটবে? পুলিশ কি আদৌ কোনও ঘটনার কিনার করতে পারবে? জেলাক পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য বলছেন, “চুরি যাওয়া কম্পিউটার উদ্ধারে এবং চুরির ঘটনায় যুক্ত দলটির খোঁজে একটি বিশেষ টিম গঠিত হয়েছে।”

computer theft dayal sengupta suri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy