রাস্তা আটকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি।
দিনে দুপুরে পথ চুরি!
শুনতে খানিকটা ধাঁধাঁর মতো মনে হলেও, নানুর বাজার কিংবা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ালে ঠাহর হয় সত্যিটা। দিন দিন দখলদারদের হাতে চলে যাচ্ছে পথ। আর তাতেই নাকাল হচ্ছেন পথচারীরা। সকাল থেকে সন্ধে রাস্তার একদিকর ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির সার অথবা, এক হাত অন্তর ঠেলাওয়ালাদের ঘিরে জমাট বাঁধা ক্রেতাদের ভিড়ই বলে দেয়, নানুরে চুরি হয়ে গেছে পথ। বদলে পথই এখন খোলা হাট-বাজার!
ঘটনা হল, এই বাজার সংলগ্ন এলাকাতেই রয়েছে কচি-কাঁচাদের একাধিক স্কুল। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, থানা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেচ দফতর, শিক্ষা দফতর, সাব রেজিষ্টারী অফিস-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই সব অফিসে নিত্য অসংখ্য মানুষ আসেন। তাঁদের যানবাহনও জড়িয়ে যায় এখান কার যানজটে। ফলে চলাচলের স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য গেছে হারিয়ে। একটু অন্যমনস্ক হলেই হয় হোঁচট খেতে হয়, নয়তো দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় নানুরের পথচারীদের। শিক্ষক সুকোমল শীল বলেন, “অধিকাংশ সময় রাস্তা আটকে ট্যাক্সি-ভটভটি দাঁড়িয়ে থাকে। যাতায়াতে সমস্যা হয়।” ছাত্র কৌশিক দাসের ক্ষোভ, “অনেক সময় এত যানজট হয় যে, আমাদের ঘুরপথে স্কুলে যেতে হয়।”
শহর নয়, শহরতলির মতো একটি গঞ্জ গ্রাম নানুর। কিন্তু ব্লক সদর হওয়ায় বিভিন্ন দফতর রয়েছে এখানে। গড়ে উঠেছে নানা ব্যবসার কেন্দ্রও। প্রতিদিন আর পাঁচটা শহরের মতোই সকাল থেকেই সেই কারণে মানুষের ঢল নামে নানুরে। কিন্তু বাস স্টপে ঢোকার মুখেই তাঁদের কার্যত থমকে যেতে হয়। কারণ এক সঙ্গে ৩/৪ টি বাস ঢুকলেই যাত্রীদের নাভিশ্বাস ওঠে! কোনও রিক্সা কিংবা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড না থাকায় সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কেন না, রাস্তার একাংশ জুড়ে সারাদিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে রিক্সা, ভটভটি এবং চারচাকা গাড়ি। ট্যাক্সি চালক শেখ লালু বলেন, “বারবার দাবি জানানো হলেও প্রশাসন আমাদের জন্য কোনও স্ট্যান্ড তৈরি করে দেয়নি।” বিডিও মৃণালকান্তি বিশ্বাসের দাবি, “জায়গার অভাবেই স্ট্যান্ড গড়া যায়নি। উপযুক্ত জায়গা পেলেই করে দেওয়া হবে।”
ভেঙে পড়ছে সুপার মার্কেটের শেড।
যেহেতু জেলা রাজনীতিতে নানুর এলাকার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, তাই প্রায়ই রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের গাড়ি ভিড় করে এখানে। সমস্যার কথা জানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। কিন্তু কারোও কোনও আগ্রহ নেই সমস্যা যানজট সমাধানে। বিধায়ক গদাধর হাজরা বলেন, “সত্যিই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। আমাকেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সমস্যা সমাধানের বিষয়ে দুই দফতরের সঙ্গে কথা চলছে।”
একসময়, নানুরের মানুষের কাছে গর্ব করে বলার বিষয় ছিল তাঁদের সুপার মার্কেট। ২০০০ সালে সরকারি অর্থানুকুল্যে ৮৪ টি স্টল নিয়ে ওই মার্কেটটি গড়ে ওঠে। কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতায় সেই গর্ব এখন খর্ব হতে চলেছে বলে অভিযোগ। যানজটের পর, এটিই নানুরের বড় সমস্যা।
প্রশাসন এই বাজারের উন্নয়নে একবার জলছাদ করা ছাড়া, হাত লাগায়নি আর। এতে সুপার মার্কেটের বারান্দার কোথাও ভেঙে শিক বেরিয়ে পড়েছে, তো কোথাও আবার মেঝেতে ফাটল ধরেছে। গোটা মার্কেটের ভগ্ন দশার কথা বলতে গিয়ে প্রবীর কর্মকার, রমাপতি মণ্ডলরা বলেন, “একসময় এই মার্কেট আমাদের গর্বের ছিল। কিন্তু এখন? ভয়ে থাকি, কখন বারান্দার কংক্রীটের চাঙড় ভেঙে পড়ে মাথায়।”
নানুরের সব্জি বাজার নিয়েও নানা অভিযোগ, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। এ সবের সঙ্গে নানুরের নিকাশি নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। সুপার মার্কেটের পাশে বছর তিনেক আগে ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করে প্রশাসন। ওই রাস্তাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। ওই রাস্তার পাশেই রয়েছে মার্কেটের অপেক্ষাকৃত নিচু নিকাশি নালা। নালার পর কিছুটা জায়গা ফেলে রেখে রাস্তা গড়ে প্রশাসন। এর ফলে বৃষ্টিতে ফাঁকা জায়গার মাটি গলে নালা বুজে যায়। এ দিকে নালা উপচে নোংরা জলে প্লাবিত হয় মার্কেট চত্বর।
রাস্তা গড়ার সময়ই ফাঁকা জায়গাটুকুও ঢালাই করার দাবি জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। পরে করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া স্বত্ত্বেও আজও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের একাংশ। এসবের সঙ্গে, দীর্ঘদিনের দুটি দাবি পুরণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নানুরের অধিকাংশ বাসিন্দাও। নানুরে বিদ্যুৎ এবং টেলিফোন বিভাগের কোনও দফতর নেই। স্থানীয় নরেন্দ্রনাথ মুস্তাফি, বিশ্বনাথ গড়াইরা বলেন, “৮ কিমি দূরে টেলিফোনের বিল দিতে যেতে হয়। বিল দিতে গিয়ে অনেক সময় সন্ধে গড়িয়ে যায়।” ব্যবসায়ী শেখ মহসীন বলেন, “বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের কোনও দফতর না থাকায় বিল জমা দিতে নানা সমস্যা হয়।”
এ দিকে নানুরে তথ্যমিত্র খোলার সময় কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলেন ওইসব গ্রাহকেরা। কিন্তু সেখানেও হতাশ হতে হয়েছে তাঁদের। কারণ, খোলার পর থেকেই বন্ধ ওই কেন্দ্র। কেন্দ্রের কর্ণধার আজিজুর রহমান বলেন, “কেন্দ্রের মাধ্যমে যেসব পরিষেবা পাওয়ার কথা ছিল তার সিংহভাগই মেলেনি। পরিষেবা সরবরাহকারী সংস্থা এবং প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy