Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সরকারি স্কুলেই বেসরকারি নার্সারি স্কুল বাঁকুড়ায়

ছাত্রী ভর্তির দাবিতে অবরোধ

সরকারি স্কুলের মধ্যেই চলছে বেসরকারি নার্সারি স্কুল! আর সেই নার্সারি স্কুলের পড়ুয়াদের বিনা শর্তে সরাসরি ওই সরকারি স্কুলের প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তির দাবিও তুলছেন অভিভাবকেরা! বুধবার দিনভর এই দাবিকে ঘিরে চাপানউতোর চলল বাঁকুড়ার প্রশাসনিক মহলে। শেষমেশ চাপে পড়ে অভিভাবকদের দাবির কাছে কার্যত নতি স্বীকার করে নার্সারি স্কুলের কিছু ছাত্রীকে সরকারি স্কুলে ভর্তির আশ্বাস পর্যন্ত দিল প্রশাসন। তার পরেও বাকিদের ভর্তির দাবিতে ছাত্রীদের নিয়ে পথ অবরোধে নামলেন অভিভাবকেরা।

মাচানতলা মোড়ে অবরোধে পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা।—নিজস্ব চিত্র

মাচানতলা মোড়ে অবরোধে পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

সরকারি স্কুলের মধ্যেই চলছে বেসরকারি নার্সারি স্কুল! আর সেই নার্সারি স্কুলের পড়ুয়াদের বিনা শর্তে সরাসরি ওই সরকারি স্কুলের প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তির দাবিও তুলছেন অভিভাবকেরা!

বুধবার দিনভর এই দাবিকে ঘিরে চাপানউতোর চলল বাঁকুড়ার প্রশাসনিক মহলে। শেষমেশ চাপে পড়ে অভিভাবকদের দাবির কাছে কার্যত নতি স্বীকার করে নার্সারি স্কুলের কিছু ছাত্রীকে সরকারি স্কুলে ভর্তির আশ্বাস পর্যন্ত দিল প্রশাসন। তার পরেও বাকিদের ভর্তির দাবিতে ছাত্রীদের নিয়ে পথ অবরোধে নামলেন অভিভাবকেরা। শুধু তাই নয়, এই ‘অন্যায়’ দাবি মানতে হবে বলে প্রশাসনিক আধিকারিকের কাছে গলা ফাটালেন খোদ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান। যদিও নার্সারি স্কুলটির বৈধতা নিয়েই সংশয় রয়েছে জেলা প্রশাসনে।

বস্তুত, বাঁকুড়া শহরের কালীতলা এলাকায় বাঁকুড়া গার্লস হাইস্কুলের ভিতরে চলতে থাকা ওই নার্সারি স্কুলটিকে নিয়ে অনেক দিন ধরেই নানা প্রশ্ন আছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি স্কুলের ভিতরে বেসরকারি স্কুল চলা অবৈধ। ওই স্কুলের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওখানে ওই স্কুল চলতে দেওয়া যেতে পারে না। কী ভাবে এত দিন চলল, তা ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে।”

যে নার্সারি স্কুলটিকে ঘিরে বিতর্ক, সেটির সভাপতি বাঁকুড়ার পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেত্রী শম্পা দরিপা। ওই স্কুলের ১৮০ জন ছাত্রীকেই বাঁকুড়া গার্লস হাইস্কুলের প্রাক-প্রাথমিক বিভাগে ভর্তি করার যে দাবি অভিভাবকেরা তুলেছেন, তার সমর্থনে সওয়ালও করছেন শম্পাদেবী। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু জানিয়েছেন, বেসরকারি নার্সারি স্কুল থেকে কোনও সরকারি প্রাথমিক বা প্রাক- প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি নিতে হবে, এমন কোনও নিয়ম নেই। স্কুলের আধ কিলোমিটার এলাকা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের ফেরানো যাবে না এবং কোটা পূরণ হয়ে গেলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে বলে সরকারি নির্দেশ রয়েছে। বাঁকুড়া গার্লস প্রাইমারি স্কুলে ১৪০ জন ছাত্রীর কোটা রয়েছে। এর বেশি ছাত্রী ভর্তি করার পরিকাঠামোই নেই ওই স্কুলে।

ছাত্রী ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে বুধবার বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রিঙ্কুদেবী ও শম্পাদেবী। সঙ্গে ছিলেন ওই ছাত্রীদের অভিভাবকদের একাংশ। বৈঠকে রিঙ্কুদেবী ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্যার কথা বললে শম্পাদেবী জোর গলায় ওই ছাত্রীদের অভিভাবকদের পক্ষেই সওয়াল করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বেসরকারি স্কুলটির ১৪০ জন ছাত্রীকেই বাঁকুড়া গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক বিভাগে ভর্তি করানো হবে। এ ছাড়াও স্কুলের আধ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী ছাত্রীদেরও নেওয়া হবে। কিন্তু, এই সিদ্ধান্তেও খুশি না হয়ে নার্সারি স্কুলটির ১৮০ জন ছাত্রীকেই স্কুলে ভর্তি নেওয়ার দাবি তোলেন অভিভাবকেরা।

এই দাবিতে এ দিন দুপুর তিনটে থেকে শহরের ব্যস্ততম এলাকা মাচানতলা মোড়ে পড়ুয়াদেরই রাস্তার উপরে বসিয়ে পথ অবরোধে নামেন অভিভাবকেরা। সন্ধ্যে পর্যন্ত চলে অবরোধ। অভিভাবকদের মধ্যে দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণ সেনরা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম নার্সারিতে ভর্তি করতে পারলেই আমাদের মেয়েরা কালীতলা প্রাইমারি ও বাঁকুড়া গার্লস স্কুলে সুযোগ পাবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমাদের আর চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু, এখন স্কুল বলছে ভর্তি নেব না।”

প্রশ্ন উঠেছে, জেলাশাসক যে স্কুল অবৈধ ভাবে চলছে বলে জানাচ্ছেন, তার হয়ে সওয়াল কেন করছেন শম্পাদেবী। কেনই বা নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকদের ‘অন্যায্য’ দাবির সমর্থন করছেন তিনি। পুরপ্রধানের দাবি, “দীর্ঘদিন ধরে গার্লস স্কুলের মধ্যে ওই নার্সারি স্কুলটি চলছে। বেসরকারি হলেও স্কুলটি এখন বাঁকুড়া গার্লস হাইস্কুলের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ওই স্কুলের ছাত্রীদের ভর্তি নিতেই হবে।”

আদপে কবে থেকে ওই নার্সারি স্কুলটি সরকারি স্কুলের ভিতরে চালু হয়েছে, তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। কারও কথায় ৫০ বছর, কারও কথায় ৪০ বছর ধরে ওই স্কুল ওখানে চলছে। বাঁকুড়া গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুদীপা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি এই স্কুলে আসার আগে থেকেই ওই নার্সারি স্কুল চলছে। ওরা আমাদের ক্লাসরুম, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বলে আলাদা করে টাকা নেওয়া হয়।” কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে অবৈধ ভাবে চলতে থাকা এই স্কুলটিকে আগেই কেন বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন।

রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই স্কুলটি বন্ধ করা যায়নি বলে শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি। রিঙ্কুদেবীর দাবি, “আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হওয়ার পরে প্রথমে স্কুলটিকে বন্ধ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করেছিলাম। কিন্তু, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পাইনি। তাই বন্ধ করা যায়নি। কেন প্রশাসন এগিয়ে আসেনি, তা জানি না।” সুদীপাদেবীর কথায়, “এত দিন ধরে স্কুলটি চলছে। জেলা প্রশাসনের কাছে এটা অজানা নয়। কিন্তু কোনও মহল থেকেই স্কুলটি নিয়ে অভিযোগ আসেনি।” জেলাশাসক অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারি স্কুলের ভিতরে বেসরকারি স্কুল চলতে পারে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE