বহু বাধা, জমি-জট, জলের সমস্যার মধ্যেই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হল ডিভিসি-র রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে। কিন্তু, হল পরীক্ষামূলক ভাবেই। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের একটি ইউনিট ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জায়গায় পৌঁছে গেলেও স্রেফ জলের অভাবে সেটিকে আপাতত বসিয়ে রাখতে হচ্ছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে। সৌজন্যে, ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা জমি-জট।
প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র বলেন, “সোমবার এক নম্বর ইউনিটে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। ওই ইউনিটের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা হয়েছে বিদ্যুৎ পরিবহণের জাতীয় গ্রিডেরও।” কিন্তু, জলের অভাবে ওই ইউনিটকে আপাতত তাঁরা বসিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু।
নির্মীয়মাণ দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও পরীক্ষমূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু চিফ ইঞ্জিনিয়ারের হতাশা, “পুরোদস্তুর প্রশাসনিক সাহায্যে দ্রুত ওয়াটার করিডরের (জল আনার পাইপলাইন পাতার কাজ) কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউনিট দু’টিকে বসিয়ে রাখা ছাড়া উপায় নেই।” ডিভিসি সূত্রের খবর, স্থানীয় সালঞ্চি জোড় থেকে প্রায় দশ হাজার ঘন মিটার জল পাইপলাইনে এনে প্রকল্পের রিজার্ভারে রাখা হয়েছিল। ওই জল দিয়েই এ দিন প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় ২০০৭ সাল থেকে ১২০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এখানেই দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩২০ মেগাওয়াটের আরও দু’টি ইউনিট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৫২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে রঘুনাথপুরে, যা পূর্বাঞ্চলে ডিভিসি-র সবচেয়ে বড় প্রকল্প। কিন্তু, ওয়াটার করিডর নিয়ে জমি-জটের কারণে (নির্দিষ্ট করে বললে অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের বাধায়) প্রথম পর্যায়েরই উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা বারবার পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তিন বছর পরে এক নম্বর ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা গেলেও সেই জলের অভাবেই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন করা সম্ভব করা গেল না, এই আক্ষেপ বারবার শোনা যাচ্ছে ডিভিসি কর্তাদের মুখে।
বস্তুত, দামোদর নদ থেকে প্রকল্পস্থল পর্যন্ত দশ কিলোমিটার পাইপলাইন পাতার কাজের মধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে মাত্র চার কিলোমিটারের কাজ করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিপদে অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের বাধার সামনে পড়তে হয়েছে কাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাকে। আপাতত পুলিশের সহযোগিতায় সিদপুর ও ভুরকুন্ডাবাড়ি গ্রাম এলাকায় পাইপ লাইন পাতার কাজ ফের শুরু হয়েছে।