Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সিউড়িতে নাকানি-চোবানি, দুবশঙ্কায় মারধরে অভিযুক্ত পুলিশ

ডিএম অফিসে ঢুকে শক্তি জাহির বিজেপির

পাড়ুই নিয়ে অস্বস্তি বেড়েই চলেছে বীরভূম জেলা পুলিশের। একদিকে জেলা শাসকের দফতরে বিজেপির আইন অমান্য আন্দোলন সামলাতে এ দিন যেমন জেলা পুলিশকে হিমসিম খেতে হল, অন্য দিকে তল্লাশির নামে ফের তাণ্ডবের অভিযোগ উঠল তাঁদের বিরুদ্ধে সেই পাড়ুই থানা এলাকাতেই!

জেলাশাসকের দফতরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের আইন অমান্য।

জেলাশাসকের দফতরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের আইন অমান্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৭
Share: Save:

পাড়ুই নিয়ে অস্বস্তি বেড়েই চলেছে বীরভূম জেলা পুলিশের। একদিকে জেলা শাসকের দফতরে বিজেপির আইন অমান্য আন্দোলন সামলাতে এ দিন যেমন জেলা পুলিশকে হিমসিম খেতে হল, অন্য দিকে তল্লাশির নামে ফের তাণ্ডবের অভিযোগ উঠল তাঁদের বিরুদ্ধে সেই পাড়ুই থানা এলাকাতেই!

পুলিশের বিরুদ্ধে তল্লাশির নামে তাণ্ডবের অভিযোগেই ইদানিংকালে পাড়ুই থানা এলাকায় ঘটনার সূত্রপাত। পাড়ুইয়ের চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে গ্রামবাসীর রোষের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। আক্রান্ত হন পাড়ুই থানার পুলিশ। এরপরই ঘটনা রাজনৈতিক সংঘর্ষের চেহারা নেয়। এলাকায় একের পর এক গ্রামে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষ বাড়তে থাকে। উভয় পক্ষেররই কয়েকজন নিহত হন। পুলিশের বিরুদ্ধে এ দিনও সেই তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালানোরই অভিযোগ ওঠে পাড়ুই থানার দুবশঙ্কা গ্রামে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রামে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। শেখ রাজ্জেক নামে নবম শ্রেণির এক পড়ুয়াকেও মেরেছে তারা। গ্রামের তিনজনকে শুধু ধরে নিয়ে যাওয়াই নয়, পুলিশ বাড়িতে ঢুকে মারধর করে, ভাঙচুর চালায়। আরও অভিযোগ, মাঠ পাহারার অস্থায়ী চালা ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।

গ্রামবাসী মফিজা বিবি, শেখ বাচ্চু, শেখ জাকিররা বলেন, “এই গ্রামে তো কোনও অশান্তি হয়নি। তাহলে কেন পুলিশ এমন করবে? পুলিশের ভয়ে গ্রামে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে বাড়িতে বসে ভাত পর্যন্ত খাওয়া যাচ্ছে না। মাঠে বসে খেতে হচ্ছে!” পরিস্থিতি এমনই মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না পাড়ুই থানা এলাকার মানুষ।

বিজেপির অভিযোগ, আইনের শাসন নেই জেলায়। শাসকদলের অত্যাচারে পাড়ুই সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা অশান্ত। অথচ সেই সব ঘটনায় একতরফাভাবে তাঁদের দলের কর্মী সমর্থকদেরই গ্রেফতার করছে পুলিশ। বিজেপি প্রভাবিত গ্রামগুলিতে তল্লাশি চালানোর নামে মারধর করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের।

পাড়ুইয়ের যাদবপুরে পুড়ে যাওয়া বাড়ি।

বিজেপি জেলা সভাপতি দুধ কুমার মণ্ডলের অভিযোগ, “দুবশঙ্কায় আমাদের প্রভাব বেশি তাই এই অত্যাচার। যদিও বিজেপি জেলা সভাপতি ও গ্রামবাসীদের অভিযোগ মানেননি জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই তল্লাশি চলছে। তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। কাউকে মারধর করা বা ভাঙচুর চালানোর যে অভিযোগ উঠেছে সেটা ভিত্তিহীন।”

পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন ইলামবাজার থানা এলাকার একটি আখের খেত থেকে গোটা ছ’য়েক তাজা বোমা ও বোমার মশলা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সিরশিট্টা-সহ এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য পুলিশ যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে সেই আভিযোগের ভিত্তিতেই শেখ আমের আলি, শেখ আনারুল এবং শেখ আনিসুর নামে তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আজ শুক্রবার সিউড়ি আদালতে ধৃতদের তোলা হবে।

পুলিশ যাতে নিরপেক্ষভবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়ে এলাকায় আইনের প্রতিষ্ঠা করতে পারে সেই জন্যই জেলাশাসকের কাছে এ দিন সিউড়িতে ছিল বিজেপির অভিযান। কিন্তু আইন অমান্যের নামে কার্যত তাদের দলের শক্তি প্রদর্শনই করে বিজেপি। জেলা পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ জানাতে এসে, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই জেলা শাসকের কাছে পৌঁছন বিজেপি নেতা-কর্মীরা।

এ দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা জেলা শাসকের কর্যালয়ের বাইরে জমায়েত হন। পরিস্থিতি সামলাতে জনা পনেরো পুলিশ কর্মী জেলাশাসকের কার্যালয়ের গেটে মোতায়ন ছিলেন। বেলা আড়াইটে নাগাদ পুলিশকর্মীদের সেই ব্যারিকেড ভেঙে সরাসরি জেলাশাকরের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। ছিলেন বিজেপির জেলা নেতৃত্বও।

প্রশাসন ভবনের সিঁড়ির মুখেও মৃদু বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়। দ্বিতলে উঠে দুধ কুমার মণ্ডল নেতৃত্বাধীন বিজেপি নেতা-কর্মীরা অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) শ্যামল মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করে জেলা পুলিশের কাজ নিয়ে ক্ষোভ জানান। প্রশাসন ভবনের নীচতলায় সে সময় বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা অবস্থান বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। জেলায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর জন্য জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করে এ দিন বিজেপি। পাশাপাশি সাত দিনের সময় দেয় তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে বাইরে এসে দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “সাতদিনের মধ্যে পুলিশি তাণ্ডব বন্ধ না হলে এবং নিরপেক্ষতা বজায় না থাকলে আন্দোলন বৃহত্তর হবে। আন্দোলনের জেরে জেলা স্তব্ধ হবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক বিজেপির নেতাদের বলেন, তিনি পরিস্থিতির উপর নজর দেবেন।

এলাকায় শান্তি ফেরাতে আজ, শুক্রবার পাড়ুই থানায় সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে পুলিশ। সেখানে পুলিশ সুপারের উপস্থিত থাকার কথা।

ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suri bjp dm office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE