Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলে কেন, বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবটা এসেছিল রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচনের সময়েই। কিন্তু, সময় চেয়েছিলেন পুরুলিয়ার পাড়া কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক উমাপদ বাউরি। তবে, এই বিধায়ককে নিজেদের দিকে টানতে কার্যত ধারাবাহিক প্রয়াস চালিয়েছিলেন জেলার তৃণমূল নেতারা। তাঁদের সেই চেষ্টা বিফলে যায়নি। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন পাড়ার এই তরুণ বিধায়ক। আর যার ফলে পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের বিধায়কের সংখ্যা এখন দুই থেকে কমে একে দাঁড়াল।

উমাপদ বাউরি।

উমাপদ বাউরি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
পাড়া শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবটা এসেছিল রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচনের সময়েই। কিন্তু, সময় চেয়েছিলেন পুরুলিয়ার পাড়া কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক উমাপদ বাউরি। তবে, এই বিধায়ককে নিজেদের দিকে টানতে কার্যত ধারাবাহিক প্রয়াস চালিয়েছিলেন জেলার তৃণমূল নেতারা। তাঁদের সেই চেষ্টা বিফলে যায়নি। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন পাড়ার এই তরুণ বিধায়ক। আর যার ফলে পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের বিধায়কের সংখ্যা এখন দুই থেকে কমে একে দাঁড়াল। দলের একমাত্র বিধায়ক রইলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো।

দার্জিলিং থেকে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে রবিবার বিকালে পাড়ায় ফেরার কথা ছিল উমাপদর। কিন্তু, এখানে না এসে কলকাতায় থেকে গিয়েছিলেন। সোমবার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চে রাজ্যের আরও দুই কংগ্রেস বিধায়কের সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিনি। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলে নেত্রীর পা ছুঁয়ে প্রণামও করেছেন উমাপদ। আর টিভির পর্দায় এই ছবি দেখার পরে পাড়া ব্লকের কংগ্রেস নেতারা প্রকাশ্যেই বিধায়কের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলছেন, “দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন উমাপদ! উপ-নির্বাচনে উনি তৃণমূলের প্রার্থী হলে তার যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।” নেপাল মাহাতোও দাবি করেছেন, উমাপদ তৃণমূলে যোগ দিলেও পাড়া এলাকায় কংগ্রেসের সংগঠনের কোন ক্ষতিই হবে না। নেপালবাবুর দাবি, “লোকসভা নির্বাচনে উমাপদর নিজের ঘরের বুথে কংগ্রেস প্রার্থী (নেপালবাবু নিজেই) মাত্র ৯০টি ভোট পেয়েছেন। এতেই স্পষ্ট, নিজের এলাকায় উমাপদর কোনও প্রভাব নেই। কংগ্রেসের জন্যই বিধায়ক হয়েছিল সে।”

তবে, কংগ্রেস নেতৃত্ব এই দাবি করলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা কতটা ঠিক, তা নিয়ে দলের একাংশেই সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে যেখানে লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূল বিপুল ব্যবধানে জিতেছে। কংগ্রেস সেখানে তৃতীয় স্থান পেয়েছে। একই ছবি পাড়া কেন্দ্রেও। বস্তুত, পাড়ার কংগ্রেসের বিধায়ককে ভাঙিয়ে ওই বিধানসভা এলাকায় নিজেদের সংগঠন মজবুত করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হওয়ার পরেও কান ঘেঁষে পাড়া কেন্দ্রে জিতেছিলেন উমাপদ। সিপিএমের প্রার্থী দীপক বাউরির চেয়ে মাত্র ৫৮৫ ভোটে এগিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেস বিধায়ককে নিজেদের দিকে এনে পাড়া এলাকায় কতটা শক্তি বাড়াতে পারবে তৃণমূল। কারণ, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন বাম প্রার্থীই। এই ফলাফলেই স্পষ্ট, পাড়া বিধানসভায় সুবিধাজনক জায়গায় নেই তৃণমূল। দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি নিজেদের দখলে আনতে তাই পাড়ার কংগ্রেস বিধায়ককে তৃণমূলে আনতে সচেষ্ট হয়েছিলেন জেলার তৃণমূল নেতারা। উমাপদকে নিজেদের দিকে টেনে ওই ব্লকের কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকদের একাংশের ভোট পেতে বাড়তি সুবিধা হবে বলে মনে করছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, “রাজ্য সরকারের উন্নয়নের কাজকর্মে সামিল হতেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন উমাপদ বাউরি। উনি তৃণমূলে আসায় পাড়া এলাকায় উন্নয়নের কাজ আরও গতি পাবে।”

কংগ্রেস অবশ্য ঘর গুছোনোর কাজ শুরু করেছে। দল সূত্রের খবর, উমাপদ তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, সেই সম্ভবনা তৈরি হওয়ার পরে সংগঠনে এই দলবদলের কী প্রভাব পড়বে, বোঝার জন্য রবিবারই পাড়ার দুবড়ায় কর্মিসভা করেছে কংগ্রেস। দলের পাড়া ব্লকের নেতা তথা প্রদেশ কমিটির সদস্য রামজান মির্ধা এবং রঘুনাথপুর ২ ব্লকের কংগ্রেসের সম্পাদক অনিমেষ চার বলেন, “আমাদের আশঙ্কা ছিল, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশেই উমাপদ তৃণমূলে যোগ দেবেন। তাই দুবড়ায় কর্মিসভা করে আমরা দেখে নিয়েছি, উনি দল ছাড়লেও তার প্রভাব সংগঠনে পড়বে না।” এক ধাপ এগিয়ে একদা উমাপদর ঘনিষ্ঠ নেতা রামজান বলছেন, “আমরা ওঁকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবেই দেখছি। উপ-নির্বাচনে উনি তৃণমূলের প্রার্থী হলে তার যোগ্য জবাব পাবেন। পাড়ায় আমাদের সংগঠনে এখনও ধস নামেনি।”

এর পরেই তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “রাজনীতিতে যে কোনও সম্ভবনা যে কোন সময়েই তৈরি হতে পারে। অন্তত উমাপদ বাউরিকে ফের বিধায়ক হতে দেবেন না এখানকার কংগ্রেসের কর্মীরা।” কংগ্রেসের নেতাদের মন্তব্যর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য এ দিন উমাপদকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shubhraprakash mondal para umapada bauri congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE