Advertisement
E-Paper

তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের ভাবনা

তারাপীঠের দূষণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এ বার ‘তারাপীঠ-রামপুরহাট ডেভেলমেন্ট অথরিটি’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হবে। দ্বারকা নদের দূষণের জেরে তারাপীঠের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্রহীন সব লজ-হোটেল বন্ধের নির্দেশ সদ্য দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। ইতিমধ্যেই সেখানে বন্ধ হয়েছে তিনশোরও বেশি হোটেল-লজ। চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা।

নিজস্ব সংবাদাদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৮
স্নান ঘাটে পড়ে আবর্জনার স্তূপ।—ফাইল চিত্র।

স্নান ঘাটে পড়ে আবর্জনার স্তূপ।—ফাইল চিত্র।

তারাপীঠের দূষণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এ বার ‘তারাপীঠ-রামপুরহাট ডেভেলমেন্ট অথরিটি’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হবে।

দ্বারকা নদের দূষণের জেরে তারাপীঠের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্রহীন সব লজ-হোটেল বন্ধের নির্দেশ সদ্য দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। ইতিমধ্যেই সেখানে বন্ধ হয়েছে তিনশোরও বেশি হোটেল-লজ। চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা। আর তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে। সব মিলিয়ে তারাপীঠের দূষণ রোধ এবং সার্বিক উন্নয়নে তাই জেলা প্রশাসনের উপরে চাপ ছিল বিভিন্ন মহল থেকে। তার জেরেই এই উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে তোলার ভাবনা বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার তারাপীঠে জেলা পরিষদের অতিথিশালায় এ ব্যাপারে একটি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক অসিত মাল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, জেলাশাশক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ), জেলাপরিষদের নির্বাহী বাস্তুকার, জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক, রামপুরহাটের মহকুমাশাসক-সহ স্থানীয় প্রশাসন, পুরসভা ও পঞ্চায়েতের আধিকারিকেরা। এ ছাড়াও বৈঠকে তারাপীঠ লজ অনার্স অ্যাসোসিয়েসন, তারাপীঠ মন্দির কমিটি এবং তারাপীঠ শ্মশান কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী জানান, তারাপীঠের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ‘তারাপীঠ-রামপুরহাট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (টিআরডিএ) গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। সেই লক্ষ্যেই এ দিন তারাপীঠে ওই বৈঠকের আয়োজন। ওই বৈঠকে তারাপীঠ ফাঁড়িকে তারাপীঠ থানায় উন্নীত করার দাবি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া তারাপীঠের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তারাপীঠের সৌন্দর্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এই পরিকল্পনায় রামপুরহাট পুরসভা এলাকা ছাড়াও সাহাপুর, খরুণ, বরশাল এই তিনটি পঞ্চায়েতের কিছু এলাকা থাকবে। এর ফলে তারাপীঠ ও রামপুরহাট এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন বলে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি।

ইতিমধ্যেই অবশ্য তারাপীঠের দূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তারাপীঠে শ্মশানে বাঁশ ও টিন দিয়ে শ্মশান এলাকা আলাদা ঘিরে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। জেলাশাসক জানান, শ্মশানে সাধুদের জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা, শ্মশান সৌন্দর্যায়নের কাজ, দ্বারকা নদের পাড় বাঁধানোর কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।

অন্য দিকে, তারাপীঠে দ্বারকা নদের ধারে পরিবেশ বিধি লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা লজগুলি ভেঙে ফেলার ব্যপারে জেলাশাসক বলেন, “কী হয়ে আছে, সেটা ভালভাবে দেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, “নদী পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে লজ মালিকদেরও দায়িত্ব আছে। নদী দূষণ ঠেকাতে আগে নদী সংলগ্ন শ্মশান এবং নদীর ধার বাঁধানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নদীর বুকে যাতে জল থাকে, তার জন্য নদীর জল ধরে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, তারাপীঠের দূষণ ঠেকাতে জেলা পরিষদ আদালতের নির্দেশ মেনে চলবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায় ২০১১ সালে যখন রামপুরহাটের মহকুমাশাসকের পদে ছিলেন, তখন তারাপীঠ মন্দির থেকে ফুল ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ নিয়ে জৈব সার তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন মল্লারপুরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে। সেই কাজ অবশ্য কিছু মহলের অসহযোগিতার জন্য মাঝপথেই থমকে গিয়েছিল। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক সাধন সিংহ বলেন, “এই প্রকল্প চালু রাখতে গিয়ে আমাদের প্রায় তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়। তবু মন্দির কমিটি এবং প্রশাসন চাইলে আমরা ফের এই প্রকল্পের কাজ তারাপীঠে করতে চাই।” তিনি জানান, এ দিনই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুই বিজ্ঞানী সন্দীপ রায় ও অমিয় কুমার সেন তারাপীঠে এসেছিলেন। তাঁরা প্রকল্পটির কথা জেনে পুনরায় তা চালু করার ব্যপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারামাতা সেবাইত কমিটিকেও প্রকল্পটি চালু রাখার বলেছেন বলে সাধনবাবুর দাবি।

অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “ওই প্রকল্পটি আবার চালু করার ব্যপারে সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” প্রকল্প চালু হলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়।

tarapith lodge hotel pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy