Advertisement
E-Paper

থানা অভিযোগ নেয়নি, প্রতিবাদে অবরোধ

এক বধূর আস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগকে ঘিরে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। বধূর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দাবি, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি অভিযোগ নেয়নি। এমনকী প্রথমে অভিযোগ নিতে রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট থানাও। যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঘণ্টাখানেক ধরে মল্লারপুর হাসপাতাল মোড়ে রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পরে পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আশ্বাস মিললে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০০:২৭
অশান্তি এড়াতে মল্লারপুর হাসপাতাল মোড়ে অবরোধ উঠে যাওয়া পরেও রয়েছে বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র

অশান্তি এড়াতে মল্লারপুর হাসপাতাল মোড়ে অবরোধ উঠে যাওয়া পরেও রয়েছে বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র

এক বধূর আস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগকে ঘিরে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। বধূর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দাবি, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি অভিযোগ নেয়নি। এমনকী প্রথমে অভিযোগ নিতে রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট থানাও। যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঘণ্টাখানেক ধরে মল্লারপুর হাসপাতাল মোড়ে রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পরে পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আশ্বাস মিললে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। এ দিনই বধূর পরিবারের অভিযোগ নিয়েছে ময়ূরেশ্বর থানা। তবে, অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে কেবল আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আটক করা হয়েছে এক যুবককেও। পুলিশ যদিও তাঁর পরিচয় জানায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার সকালে মৃত্যু হয় রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফতেমা বিবির (৩০)। ময়ূরেশ্বর থানার মল্লারপুরের বাসিন্দা, ওই বধূর স্বামী সানোয়ার শেখের অভিযোগ, বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে পাড়ারই এক যুবক তাঁর স্ত্রীকে কীটনাশক খাইয়ে খুন করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “স্ত্রীর মৃত্যুর পরে মঙ্গলবারই মল্লারপুর ফাঁড়িতে খুনের অভিযোগ দায়ের করতে যাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের ফিরিয়ে দিয়ে ময়ূরেশ্বর থানায় যেতে বলে। কিন্তু ওই দিন থানা অভিযোগ নেয়নি।” জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “কোনও ফাঁড়ি কাউকে এ ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে না। এ ধরনের ঘটনায় অভিযোগ নেওয়া বাধ্যতামূলক। মল্লারপুর ফাঁড়ি বা ময়ূরেশ্বর থানার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তুলে আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব।”

প্রায় সতেরো বছর আগে মল্লারপুরের সানোয়ার শেখের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রামপুরহাটের ডাকবাংলো পাড়ার বাসিন্দা ফতেমার। মৃত বধূ তিন সন্তানের মা। পেশায় লরিচালক স্বামী প্রায় দিনই বাড়ির বাইরে থাকেন। তাঁর দাবি, “ওই সুযোগেই পড়শি যুবক বাপন ইসলাম আমার স্ত্রীর সঙ্গে একটি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তোলে। বৃহস্পতিবার বাপনের বিয়ের দিন ধার্য ছিল। আমার স্ত্রী ওই বিয়েতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তার জেরেই বাড়িতে এসে বাপন স্ত্রীর খাবারে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেয়। সেই খাবার খেয়েই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন।” একই দাবি, বধূর ভাই কলিম শেখেরও। এ নিয়ে বাপনের বিরুদ্ধে তাঁরা খুনের অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা নিতে চায়নি বলে সানোয়ারের অভিযোগ।

মৃত বধূর স্বামীর আরও দাবি, পুলিশে অভিযোগ দায়ের নিয়ে গণ্ডগোলের মাঝেই বুধবার সন্ধ্যায় বাপন তাঁর এক মেয়েকে খুনের হুমকি দেয়। তা জানতে পেরে এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ বাপনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরও করেন। তখন বাপনের বাড়িতে পুরোদমে বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় পৌঁছে যায়। তখন বাপনকে গ্রেফতারের দাবিতে ওই বাসিন্দারা পুলিশের গাড়ি আটকে একপ্রস্থ বিক্ষোভ দেখান। সানোয়ার জানান, পুলিশ ঘটনার মীমাংসার জন্য পরের দিন উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার আশ্বাস দেয়।

এ দিন মল্লারপুর ফাঁড়িতে সেই বৈঠকে অভিযুক্ত পক্ষের কেউ হাজির হননি বলে বধূর স্বামীর দাবি। তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বধূর পরিজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা ঘটনায় পুলিশি নিষ্কৃয়তার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত যুবককে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে মল্লারপুর হাসপাতাল মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন। অবরোধের খবর পেয়ে প্রথমে ময়ূরেশ্বর ১ বিডিও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে আসেন। আন্দোলনকারীদের তিনি অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করলেও তাঁরা তাতে রাজি হননি। এর ঘণ্টা দেড়েক পরে ময়ূরেশ্বর থানার ওসি রাকেশ সাধুখাঁর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় পৌঁছয়। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে পথ অবরোধ উঠে যায়।

এ দিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই বাপন ইসলামের খোঁজ মিলছে না। এ দিন তাঁর নির্ধারিত বিয়ের অনুষ্ঠানটিও ভেস্তে গিয়েছে। বাপনের বাবা নজরুল শেখ বলেন, “আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “বাপন বুধবার থেকে বাড়িতে নেই। এ দিনের মতোই এর আগেও তিন বার ছেলের বিয়ে ভেঙেছে।” অন্য দিকে, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরই একটি সূত্রের অনুমান, বাপনের বিয়ের খবর পেয়ে বধূ নিজে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারে।

unnatural death housewife blockade mayurashwar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy