বৈধ কাগজপত্র না থাকা একটি মোটরবাইক আটক করেছিল পুলিশ। আর তা ছাড়াতে এসে পুরুলিয়ায় থানার মধ্যে ঢুকে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে হুজ্জুতি পাকানোর অভিযোগ উঠল।
পুরুলিয়া ২ ব্লকের এক যুবকের আটক করা গাড়ি ছাড়ানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে পুরুলিয়া সদর থানার এক পুলিশ কর্মী কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ। তার জেরে শনিবার রাতে থানা কার্যত ঘেরাও করে তৃণমূল কর্মীরা স্লোগান দেন। উত্তেজনা ছড়ানোয় সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের থানার গেটের সামনে মোতায়েন করা হয়। শেষে ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানান তৃণমূল কর্মীরা। তাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। রবিবার জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ওঁরা অভিযোগ করেছেন। তদন্ত হবে। আর যে মোটরবাইকটিকে নিয়ে বিতর্ক সেই গাড়ি সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
সম্প্রতি বোলপুর, আলিপুর, নোয়াপাড়া কোথাও থানায় পুলিশকে মারধর, কোথাওবা গোলামালের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ বার সেই তালিকায় ঢুকল পুরুলিয়া।
ঘটনার সূত্রপাত এক সপ্তাহ আগে গত শনিবার। পুরুলিয়া ২ ব্লকের জয়নগর এলাকার এক যুবক ঝাড়খণ্ডের নম্বর প্লেট লাগানো ওই মোটরবাইকে পুরুলিয়ায় আসেন। পুলিশের দাবি, সদর হাসপাতাল থেকে তাঁরা ওই গাড়িটি আটক করেন। যদিও ওই যুবকের পরিজনদের দাবি, নিরাপদ জায়গা হিসেবে সে থানা চত্বরে গাড়িটি রেখে হাসপাতালে এক রোগীকে দেখতে গিয়েছিলেন। পরে ওই যুবক পুলিশের কাছে গাড়িটি নিজের বলে দাবি করলে পুলিশ গাড়ির কাগজ দেখাতে বলে। কিন্তু ওই যুবক তা দেখাতে পারেননি। পুলিশ গাড়িটি আটক করে। পুলিশ ওই যুবককেও কিছুক্ষণের জন্য আটক করে বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপরেই আসরে নামেন তৃণমূলের নেতারা। আর ওই গাড়ি ছাড়ানো নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। পুরুলিয়া ২ ব্লকের জয়নগর এলাকা থেকে কয়েকজনকে নিয়ে পুরুলিয়া সদর থানায় আসেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা শেখ রহমানিন। তাঁর কথায়, “আমি পুলিশকে জানিয়েছিলাম, ওই যুবক ঝাড়খণ্ডের একজনের কাছ থেকে মোটরবাইকটি কিনেছে। কিন্তু নথিপত্র এখনও হাতে পায়নি। এই যুক্তিতে পুলিশকে গাড়ি ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।” এরপর পুলিশের কাছে ফোন যায় দলের জেলা কমিটির সদস্য মাণিকমণি মুখোপাধ্যায়ের। তাঁকেও পুলিশ জানিয়ে দেয়, কাগজপত্র ছাড়া ওই গাড়ি তারা ছাড়বে না। গোলমাল পাকে শনিবার বিকেলে। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার কাগজপত্রের প্রতিলিপি দেখিয়ে মোটরবাইকটি ছাড়ানোর দাবি জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ একই যুক্তিতে অনড় থাকে। অভিযোগ, কথাবার্তার মাঝেই এক পুলিশ কর্মী বলে বসেন, কোনও নেতা দূরের কথা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বললেও ওই গাড়ি ছাড়া হবে না। এই অভিযোগকে ঘিরেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীকে কটূক্তি করা হয়েছে বলে খবর ছড়াতে থানার সামনে প্রায় ৩০ জন তৃণমূল কর্মী জড়ো হয়ে ‘পুলিশের মুখ্যমন্ত্রীর নামে কটূক্তি করা হল কেন’, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নামে অপপ্রচার করা চলবে না’, বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন। থানায় কয়েকজনকে নিয়ে আসেন জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম রায়। অভিযোগ, থানায় টেবল পর্যন্ত চাপড়ান এক নেতা।
ওই মন্তব্য ঘিরে থানায় উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে থানায় আসেন ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ কর্মীরা অবশ্য জানিয়েছেন, উত্তেজনা ছড়ালেও গোলমাল বাড়েনি।
মানিকমণি মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি পুলিশকে ফোন করে বলেছিলাম বৈধ কাগজপত্র থাকলে বাইকটি ছেড়ে দিন। কিন্তু পরে শুনলাম কথাবার্তার মাঝে এক পুলিশকর্মী বলেছেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বললেও বাইক ছাড়া হবে না। এই বিষয়টিই ওঁরা মেনে নিতে পারেননি।” জেলা যুব তৃণমূল জেলা সভাপতি গৌতম রায়ও বলেন, “মোটরবাইক আটকানো নিয়ে একজন পুলিশ কর্মী ও রকম কথা বললে তা মানা যায় না। কর্মীরাও মানতে পারেননি। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের মনের প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে পরিস্থিতি যায়নি।” পরে তৃণমূলের তরফে ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও ওই পুলিশ কর্মী এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর নামে তিনি কটূক্তি করেননি বলে দাবি করেছেন।
তবে দলের একাংশের মতে, একটা কাগজপত্রহীন বাইক ছাড়াতে দলের কয়েকজন এ ভাবে পুলিশের সঙ্গে বিবাদে না জড়ালেই পারতেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy