Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দেব আসছেন, আগুন রোদেই অপেক্ষা ভিড়ের

সকাল থেকেই ঠায় ঠা ঠা রোদে দাঁড়িয়ে ছিল ভিড়। রোদ পড়তে সেই ভিড় হোটেলের সামনের রাস্তাটা প্রায় দখল করে নিয়েছিল। তাঁদের সামাল দিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কয়েক ঘণ্টা ধরে হিমশিম খেলেন পুলিশ কর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধের পাড়ে একটি হোটেলে এলেন অভিনেতা দেব। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি ভিড়ের উদ্দেশে হাত নাড়লেন। হোটেলের সিঁড়িতে কিছুটা উঠে ফের পিছন ফিরলেন তিনি। হাত নাড়লেন। ফিরতে শুরু করেছিল ভিড়। হঠাৎ তিনতলার বারান্দায় তাঁকে দেখা গেল। ঘুরে দাঁড়ালেন জনতা। হাত নাড়লেন দেব।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

সকাল থেকেই ঠায় ঠা ঠা রোদে দাঁড়িয়ে ছিল ভিড়। রোদ পড়তে সেই ভিড় হোটেলের সামনের রাস্তাটা প্রায় দখল করে নিয়েছিল। তাঁদের সামাল দিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কয়েক ঘণ্টা ধরে হিমশিম খেলেন পুলিশ কর্মীরা।

রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধের পাড়ে একটি হোটেলে এলেন অভিনেতা দেব। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি ভিড়ের উদ্দেশে হাত নাড়লেন। হোটেলের সিঁড়িতে কিছুটা উঠে ফের পিছন ফিরলেন তিনি। হাত নাড়লেন। ফিরতে শুরু করেছিল ভিড়। হঠাৎ তিনতলার বারান্দায় তাঁকে দেখা গেল। ঘুরে দাঁড়ালেন জনতা। হাত নাড়লেন দেব।

আগেও তিনি পুরুলিয়ায় শু্যটিং করতে এসেছেন। এ বারও তাই। তবে সে বার আর এ বারের মধ্যে অনেক তফাৎ। এখন তিনি শুধু অভিনেতাই নন, তৃণমূলের ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীও। তাই শুধু তাঁর অনুরাগীরাই নয়, বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকও তাঁদের দলের ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীকে দেখতে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকে আবার শু্যটিংয়ের ফাঁকে দেবকে নিয়ে রোড-শো করাতে চান। দেব কি যাবেন? হোটেলে ঢোকার আগে দেব বলে গেলেন, “আমি শু্যটিংয়ের জন্য এসেছি। আগে শু্যটিংটা তো করি।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে নির্বাচনী সভায় দেখা গিয়েছিল দেবকে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রচারের অভিজ্ঞতা খুব ভাল।”

হোটেলের রিসেপশন, বারান্দা, ছাদ ঘিরে রেখেছে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। হোটেলের বাইরে রাস্তায় মোতায়েন কমান্ডোও। অত্যুৎসাহী তরুণীদের সামলাতে আনা হয়েছে মহিলা পুলিশ বাহিনীও। হোটেল চত্বরে চালু করা হয়েছে পুলিশের শিবির। দেব লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়ায় তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশও ঝুঁকি নিতে নারাজ। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

গত শুক্রবারই গুজব ছড়িয়েছিল দেব আসছেন। সে দিনই দেব ওই হোটেলে উঠবেন ভেবে তার সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছিল পুলিশ। আগুনে রোদের মধ্যেও সাহেববাঁধের পাড়ে হোটেলের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকলেন অনেকে। দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার পথে হোটেলের সামনে কড়া নিরাপত্তা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন একদল ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে লাবণি মুখোপাধ্যায় এক পুলিশ কর্মীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “দেব কখন আসছেন?” তিনি জানালেন, পরে আসবেন। কলেজছাত্রীরা বলতে বলতে চললেন, সন্ধ্যায় তাঁরা দেবের জন্য চকোলেট আনবেন। সুযোগ পেলে দেবের হাতে দেবেন। পুরুলিয়া মফস্সল থানার মহুদা গ্রাম থেকে এসেছেন পেশায় কয়লা বিক্রেতা প্রৌঢ় অসিত রাজোয়াড়। তিনি বলেন, “আমি দেবের একটা সিনেমাও বাদ দিইনি। দেব আসছেন শুনে সকালেই চলে এসেছি। যত রাতই হোক দেবকে দেখে তবেই বাড়ি ফিরব।” এই জেদ নিয়ে পুরুলিয়া শহর তো বটেই, আশপাশের ব্লক এলাকারও বহু মানুষ বিকেল থেকে সাহেববাঁধের পাড়ে ভিড় জমালেন।

হোটেলের যে বিশেষ ঘরে দেব থাকছেন, সেই তলায় আর কোনও অতিথিকে রাখা হচ্ছে না। হোটেল মালিক মোহিত লাটা বলেন, “আগে তিনি এখানে শু্যটিং করতে এসেছিলেন। তাঁর শরীরচর্চার কথা জানি। সে জন্য এ বার দেবের ঘরের কাছেই জিমের ব্যবস্থা রেখেছি।” এই চিত্রতারকার রসনা তৃপ্তির জন্য কলকাতা থেকে ভারতীয় ও চাইনিজ রান্নার দু’জন শেফ আনা হয়েছে। তাঁদের একজন কৃপাসিন্ধু মণ্ডল বলেন, “আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এবং মুখ্যমন্ত্রী দিদিকে খাইয়েছি। দেব যা চাইবেন, তাই রেঁধে দেব।”

আগামী ৮ এপ্রিল পুরুলিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের জেলা ছাত্র ও যুব সভাপতি গৌতম রায় বলেন, “কর্মীরা চাইছেন দেব রোড-শো করুন। নয়তো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুরুলিয়ার সভায় থাকুন।” দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “কী হবে তা দলের রাজ্য নেতৃত্বই ঠিক করবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prashanta pal deb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE