Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দামি শাড়ি নয়, পুজো চান সন্ধ্যারা

এ বার আর দামি শাড়ি নেবেন না। রাশ টানবেন প্রসাধন সামগ্রী কেনাতে। কাটছাঁট হবে খাওয়া-দাওয়ার মেনুতেও। তার বদলে টাকা বাঁচিয়ে নিজেদের দুর্গাপুজো আয়োজনে মেনেছেন নানুরের শ্রীপল্লির বুলটি সাহা, রানু থান্দাররা। তার জন্য পুজোয় শাড়ি কেনার জন্য জমানো টাকা তুলে দিয়েছেন কর্তাদের হাতে।

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

এ বার আর দামি শাড়ি নেবেন না। রাশ টানবেন প্রসাধন সামগ্রী কেনাতে। কাটছাঁট হবে খাওয়া-দাওয়ার মেনুতেও। তার বদলে টাকা বাঁচিয়ে নিজেদের দুর্গাপুজো আয়োজনে মেনেছেন নানুরের শ্রীপল্লির বুলটি সাহা, রানু থান্দাররা। তার জন্য পুজোয় শাড়ি কেনার জন্য জমানো টাকা তুলে দিয়েছেন কর্তাদের হাতে। কাছে পিঠে অবশ্য অনেক পুজোই ছিল। কিন্তু সেখানে তাঁরা নিজেদের ঠিক ‘আপন’ বলে মনে করতে পারতেন না। ওই সব পুজোয় যোগ দেওয়া বলতে ছিল দূর থেকে ঠাকুর দেখা, কিংবা হাত পেতে প্রসাদ নেওয়া। কেমন যেন ব্রাত্যজনের মতোই পুজো কাটত শ্রীপল্লির বাসিন্দাদের। এ বার তাই তাঁরা নিজেদের পাড়াতেই মাতৃ আরাধনার আয়োজন করেছেন।

নানুর থেকে কীর্ণাহার যাওয়ার বাইপাসের ধারে ওই পল্লিটি গড়ে উঠেছে। সাকুল্যে ১৪টি পরিবারের বাস। অধিকাংশই কর্মসূত্রে বাইরে থেকে এসে একে একে বসবাস শুরু করেন। পৈতৃক ভিটেয় জায়গা কম পড়ায় নানুরের কিছু আদি বাসিন্দাও বাড়ি তৈরি করেন ওই পাড়ায়। পারিবারিক এবং সর্বজনীন মিলিয়ে নানুরে দুর্গা পুজো রয়েছে ১৫টি। এত দিন শ্রীপল্লির বাসিন্দারা ওই সব মণ্ডপে গিয়েই পুজোর সময় কাটাতেন। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না তাঁরা। বিশেষত মেয়েরা। নিজেদের পাড়ায় পুজো প্রচলনের জন্য তাঁরা বহু দিন ধরেই এককাট্টা হয়েছেন।

প্রমীলা বাহিনীর চাপে অগত্যা গাঝাড়া দিতে হয় পুরুষদেরও। বৈঠক ডেকে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলেই তো হল না। এটা বাড়ির ইতু কিংবা নারায়ণ পুজো নয়। ৩৫ হাজার টাকা বাজেটের দুর্গা পুজো করার বিষয়টি প্রথম দিকে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয় উদ্যোক্তাদের। কারণ বাসিন্দাদের অধিকাংশেরই দিন এনে দিন খাওয়ার সংসার। পুরুষদের এই ‘কিন্তু, কিন্তু’ ভাব দূর করে দেন মহিলারাই। সন্ধ্যা ঘোষ, বিজয়া সাহারা সাফ জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে তারা কম দামের শাড়ি নেবেন, প্রসাধনী না হলেও চলবে। ভাল খাওয়াও চায় না। কিন্তু পুজো হওয়া চাই। এর পরে আর কথা চলেনি বাড়ির কর্তাদের। ঠিক হয় সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়েই হবে মাতৃ আরাধনা।

স্বাভাবিক ভাবেই শ্রীপল্লিতে এখন সাজো সাজো ভাব। পুরুষেরা ঘন ঘন বৈঠক করছেন। আর হাসি মুখে তাঁদের কাপের পর কাপ চা জোগাচ্ছেন মহিলারা। সন্ধ্যা ঘোষ, বিজয়া সাহারা বলছেন, “ভিন্ পাড়ার পুজোয় অঞ্জলি দেওয়া, আরতি দেখাতে গিয়ে ঠিক একাত্ম হতে পারতাম না। বাচ্চারাও পুরোপুরি আনন্দ করতে পারত না। তাই পুজো চালু করার জন্য আমরা কর্তাদের জানিয়েছি, কম দামি শাড়িও চলবে, কিন্তু তোমরা পুজোটা আয়োজন কর।” দিনমজুর মিতু দাস, বাস চালক তাপস ঘোষরা বলেন, “ওদের ওই কথাতেই মনে জোর পাই। মেয়েরা সাধারণত ভাল শাড়ি, প্রসাধনীর বায়নাক্কা ছাড়তে চান না। সেই তাঁরাই যখন সব ত্যাগ করতে পারছেন, তখন আমরা কি আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি?” তাঁদের সঙ্গে সহমত পুজো কমিটির তিন কর্তা দোলগোবিন্দ রুদ্র, প্রশান্ত দেবাংশি, মলয় সাহারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nanur pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE