গ্রাহক সেজে ব্যাঙ্কে ঢুকে ‘শিকার’ চিহ্নিত করার দায়িত্ব থাকতো দু’জনের। দলের বাকি দু’জন তখন ব্যাঙ্কের অদূরে মোটরবাইক নিয়ে অপেক্ষায়। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ‘শিকার’ বেরিয়ে আসতেন। পিছনে প্রথম দু’জন। বাইরে এসে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে ওই দু’জনের দায়িত্ব শেষ। এ বার আসরে নামতো মোটরবাইক আরোহীরা। টাকা ভর্তি ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে ‘শিকার’ রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময়ে পিছন থেকে দ্রুতগতিতে বাইকে এসে হাত থেকে ছোঁ মেরে টাকার ব্যাগ হাতিয়ে নিমেষে পগার পার!
ব্যাঙ্কের সামনে থেকে এই কায়দাতেই টাকা ছিনতাই করত দুষ্কৃতীদল। সম্প্রতি ধাওয়া করে আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতীদলের দু’জনকে ধরার পরে এই তথ্যই জেনেছে আদ্রা থানার পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ এটাও জানতে পেরেছে, ভিন্ রাজ্য থেকে মোটরবাইক চুরি করে সেই চোরাই বাইকে ভুয়ো নম্বর প্লেট লাগিয়ে ‘অপারেশন’ সারতো তারা।
বর্তমানে ব্যাঙ্কের বাইরে থেকে টাকার ব্যাগ ছিনতাই নিয়ে চিন্তায় রয়েছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ব্যাঙ্কের মধ্যে পুলিশ মোতায়েন করার পাশাপাশি বাইরেও পুলিশ রেখে নজরদারি থেকে শুরু করে শহরে ঢোকার ও বেরনোর মুখে প্রতিদিন গাড়ি তল্লাশি-- কিছুই বাদ দিচ্ছে না জেলার বিভিন্ন থানা। এমনকী, অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরবাইকের নম্বর পর্যন্ত টুকে রাখছেন পুলিশকর্মারা। তা সত্ত্বেও টাকা ছিনতাইয়ে চক্রটি এত দিন অধরা ছিল। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ঘটছিল একই কায়দায় টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা। সম্প্রতি আনাড়া ও রঘুনাথপুরে দুই ব্যাঙ্ক গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগ হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। আনাড়ার বাসিন্দা লালমোহন চক্রবর্তী ব্যাঙ্ক থেকে ষাট হাজার টাকা তুলে ছেলের সঙ্গে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। হাতে ধরা ছিল টাকার ব্যাগ। পুরুলিয়া-বরাকর রাস্তায় কালীমন্দিরের কাছে পিছন থেকে এসে টাকার ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায় বাইক-আরোহী দুই ছিনতাইবাজ। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রেও একই কায়দায় এক ব্যাবসায়ীর টাকা ছিনতাই করেছিল তারা। তবে সে বার আর পালাতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। ধাওয়া করে জনতার সাহায্যে আদ্রার কমিউনিটি হল থেকে দর্পণকুমার যাদব ও সাজন যাদব নামের ওই দু’জনকে ধরে ফেলে আদ্রা থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধৃতদের বাড়ি বিহারের কাটিহার জেলার জবরগঞ্জ এলাকায়। ধরা পড়ার পরে তারা পুলিশকে কিছু ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। জেরায় তারা জানায়, বর্তমানে তারা আসানসোলে থাকে। কিন্তু, পরে পুলিশ জানতে পেরেছে ওই দুই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই পুরুলিয়া শহরে ছিট কাপড়ের ব্যবসায়ীর পরিচয় দিয়ে বাড়িভাড়া নিয়ে থেকেছে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দ্রুতগতির বাইকটিও বিহার থেকেই ছিনতাই করা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সেটিতে এ রাজ্যের ভুয়ো নম্বরপ্লেট লাগিয়েছিল ওই দু’জন। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “সোর্স মারফত পাওয়া খবরের ভিত্তিতে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম, এই কাজ চেনা বা স্থানীয় দুষ্কৃতীদের নয়। বাইরের কোনও চক্র এই অপরাধ করছে। রঘুনাথপুরের ঘটনায় ছিনতাইবাজেরা ধরা পড়ার পরে এটা স্পষ্ট। এখনও ওই দলের দু’জন ধরা পড়েনি।” রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত বলেন, “পুলিশ সর্তক থাকাতেই দু’জনকে ধরা গেছে। ধৃতদের জেরা করে আরও কিছু তথ্য মিলবে বলে আশা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy