Advertisement
E-Paper

দেড় বছরেও পাল্টায়নি ধূলাডাঙা

বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন। এই শুনে রাস্তার দু’ধারে জড়ো হয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সমস্যার কথা শুনে এবং তা পূরণ করার আশ্বাস দেবেন সেটা ভাবেননি ধূলাডাঙার বাসিন্দারা। এই প্রতিশ্রুতি মিলেছিল দেড় বছর আগে। কিন্তু ধূলাডাঙা রোডের ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁধী পার্ক লাগোয়া বস্তিবাসীর স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১২
—নিজস্ব চিত্র

—নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন। এই শুনে রাস্তার দু’ধারে জড়ো হয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সমস্যার কথা শুনে এবং তা পূরণ করার আশ্বাস দেবেন সেটা ভাবেননি ধূলাডাঙার বাসিন্দারা। এই প্রতিশ্রুতি মিলেছিল দেড় বছর আগে। কিন্তু ধূলাডাঙা রোডের ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁধী পার্ক লাগোয়া বস্তিবাসীর স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি।

আবারও মুখ্যমন্ত্রী আসার আগাম বার্তা এই এলাকার বাসিন্দারা পেয়েছেন। তাঁরা এ বার জবাব চাইতে প্রস্তুত। এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, বছর দেড়েক আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছিল। সেই সভার জন্য তারাপীঠ লাগোয়া একটি লজে মুখ্যমন্ত্রী আগের দিন রাতে উঠেছিলেন। পরের দিন দুপুরে সভাস্থলে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ধুলাডাঙা রোড দিয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী সে দিন আচমকা গাঁধী পার্ক যাওয়ার রাস্তার সংযোগস্থল পেরিয়ে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েছিলেন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী ওই পথ দিয়ে আসছেন দেখে পুলিশ এবং অন্য নিরাপত্তা কর্মীরা যেমন রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে ছিল, তেমনি এলাকাবাসীও তাঁর আসার খবর পেয়ে কাজ ফেলে দিয়ে রাস্তার ধারে জড়ো হয়েছিলেন।

এলাকাবাসী ঝর্না বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবলু মাল জানালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পথ দিয়ে সভাস্থলে যাবেন সেটা আগে থেকেই জানতেন তাঁরা। সে জন্য বহু বাসিন্দা রাস্তার ধারে জড়ো হয়েছিলেন। পুলিশের চারটি পাঁচটি গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পর আচমকা দেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি থেমে গেল। তিনি গাড়ি থেকে নেমে এলেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটতে চলে এলেন। অনেকের সঙ্গে হাতও মেলালেন, জল চেয়ে খেয়েছিলেন। দাঁড়িয়ে থাকা জনতার মধ্যে কেউ কেউ ফুল দিয়েছিলেন। প্রৌঢ়া খুশি মেহেনার ক্ষোভ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মাসীমা আপনাদের যদি পাকা বাড়ি-ঘর করে দেওয়া হয়, তা হলে আপনারা যাবেন তো?’ বলেছিলাম, কেন যাব না। অবশ্যই যাব। এর পরেই উনি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু আর কী!” এলাকার যুবক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তম লেট, নিমাই মেহেনা ক্ষোভের সুরে বললেন, “পরে উনি ওই দিনের সভায় পুরপ্রধান অশ্বিণী তিওয়ারি, বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঞ্চে কাছে ডেকে নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, কারও যদি নিজস্ব জায়গা না থাকে, তা হলে জমি কিনে দিয়ে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পাকা ঘর করে দেবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়নি।”

তাঁদের ক্ষোভ, দেড় বছর পেরিয়ে গিয়েছে। পুরসভা থেকে ঘরের ছবি করে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও ধুলাডাঙা রোডের উপর গাঁধী পার্ক সংলগ্ন বস্তিবাসীদের কোনও উন্নতি হয়নি। বাঁশের ছিটেবেড়ার উপর খড়, টালি, টিনের ছাউনির ঘরগুলির মধ্যে কারও কারও ভেঙে গিয়েছে। কারও বাড়ির দেওয়াল বসে গিয়েছে। বৃষ্টি হলেই জল পড়ে, চাঁদের আলো ঘরে ঢোকে। এলাকার বাসিন্দা মহবুবা বিবি, বিজন পাল বললেন, “এলাকার বাসিন্দারা সকলেই দিনমজুর। তাঁদের মধ্যে কেউ রিকশা চালায়, কেউ বা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ির কাজ করেন। অধিকাংশ বাড়ির মেয়েরা পরের বাড়িতে কাজ করে।”

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ধারে খোলা নিকাশি নালা জঞ্জালে মজে গিয়েছে। নালার পোকা, মাছি বাড়ির মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। অনেকেই জানালেন, নতুন নিকাশি নালা পুরসভা করেছে। কিন্তু ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া যয়নি। বর্ষার সময় এলাকায় জল উঠে। আবার সব দিন নিকাশি নালা পরিষ্কারও হয় না। দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘরগুলিতে একসঙ্গে ২-৩টি পরিবার বাস করছে। কোথাও বা ছাগল, হাঁস-মুরগি একসঙ্গে একটি ঘরে বাস করছে। এলাকার বাসিন্দা গৌতম লেট, খোকন দাস, কনা মাল, নির্দয়া দাসরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আবার আসছেন। এই পথ দিয়ে আবার যাবেন। এ বার তাঁর কাছে আমরা জানতে চাইব, আপনি যে আমাদের ঘর করে দেওয়ার জন্য ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, সেই ঘোষণার বাস্তব রূপায়ণ এখনও হল না কেন?”

রামপুরহাট পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর ‘হাউসিং ফর আরবান ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে গরিব বস্তিবাসী যাঁদের নিজস্ব ঘর নেই বা ঘর তৈরি করার জন্য নিজস্ব জায়গা নেই তাঁদের জন্য রামপুরহাট শহরের ৪, ৬ এবং ১০ নম্বর এই তিনটি ওয়ার্ডের ২৭২ জন উপভোক্তার তালিকা তৈরি করা হয়। সেই মতো একটি প্রোজেক্ট রিপোর্ট পুরসভা থেকে ৬ মাস আগে রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়। সেই রিপোর্টে গাঁধী পার্ক সংলগ্ন পুরসভার তিন বিঘে জায়গা রয়েছে বলে দেখানো হয়। প্রকল্পের জন্য কত টাকা দেওয়া হবে, রিপোর্ট পাঠানোর তিন মাসের মধ্যে রাজ্য থেকে পুরসভায় একটি চিঠি পাঠানো হয়। তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিণী তিওয়ারি বলেন, “পুরদফতর থেকে প্রকল্পের জন্য ১৪ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয় ধার্য করা হয়। তার মধ্যে হাউসিং ফর আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ৮ কোটি ৯২ লক্ষ টাকায় ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার অনুমোদন করে। বাকি টাকা পুরসভার উন্নয়ন খাত থেকে দেওয়ার কথা জানান হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও টাকা পাওয়া যায়নি।”

রিপোর্ট পাঠাতে এত সময় লাগল কেন? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রিরোধীরা। বিজেপির জেলা সহসভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর কটাক্ষ, “উনি তো শুধু প্রকল্পই ঘোষণা করেন। তার মধ্যে কতগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে সকলেই জানেন!” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সঞ্জীব মল্লিক বলেন, “উনি তো আবার আসছেন। নতুন করে হয়তো ফের প্রতিশ্রুতি দেবেন! এর বেশি আর কী করবেন!” প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উপভোক্তাদের অন্য জায়গায় বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু, তাঁরা যে জায়গায় বাস করছেন, সেই জায়গা থেকে সরতে চাইছেন না। সে জন্য প্রস্তাব পাঠাতে দেরি হয়েছে। খুব শীঘ্রই ওই জায়গায় কাজ শুরু হবে।”

apurba chattopadhyay dhula danga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy