Advertisement
E-Paper

ধৃত বাবা-ছেলেকে জেরাকরে মিলল জয়ন্তর মুন্ডু

জঙ্গলে আগেই মিলছিল ধড়। এ বার জঙ্গলের আরও গভীরে মিলল বলরামপুরের কংগ্রেস কর্মী জয়ন্ত কুমারের কাটা মুন্ডু। শনিবার বিকেলে বলরামপুরের ইচাডির যে জঙ্গলে দেউলি গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তর দেহ মিলেছিল, সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি ডোবা থেকে মুন্ডটি উদ্ধার করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০০:২৭

জঙ্গলে আগেই মিলছিল ধড়। এ বার জঙ্গলের আরও গভীরে মিলল বলরামপুরের কংগ্রেস কর্মী জয়ন্ত কুমারের কাটা মুন্ডু।

শনিবার বিকেলে বলরামপুরের ইচাডির যে জঙ্গলে দেউলি গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তর দেহ মিলেছিল, সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি ডোবা থেকে মুন্ডটি উদ্ধার করা হয়। যাঁদের জেরা করে শনিবার সন্ধ্যার মুখে মুন্ডুটি উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের দাবি, তাঁদের শুক্রবার রাতে দেউলি গ্রামের কাছাকাছি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হলেন হলধর পরামানিক ও তাঁর ছেলে দয়াল পরামানিক। তাঁরা দেউলিরই বাসিন্দা। এবং তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত। পুলিশের কাছে খবর ছিল, বাবা-ছেলে রাতে গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সেই খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামের জঙ্গলের রাস্তায় ওত পেতে ছিল। শনিবার ধৃতদের আদালতে পেশ করে তদন্তের জন্য তাঁদের নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ধৃতদের আট দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। এই নিয়ে জয়ন্ত-হত্যাকাণ্ডে তিন জনকে ধরা হল।

গত সোমবার সকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন বত্রিশ বছরের জয়ন্ত। তাঁর বাবা মহাবীর কুমার বলরামপুর থানায় স্থানীয় ১৫ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, গত ৯ মে রাতে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায় কিছু লোক। জয়ন্তর বৌদির শ্লীলতাহানি করা হয়। পরের দিন বৌদিকে নিয়ে জয়ন্ত থানায় ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েক জন এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মী। মহাবীরবাবুর দাবি, রবিবার রাতে জয়ন্ত গ্রামের অন্য পাড়ায় তাঁদের আর একটি বাড়িতে ঘুমোতে যান। সকাল থেকেই তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।

অপহরণে জড়িত অভিযোগে দুর্যোধন পরামানিক নামে এক তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ প্রথম গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার সকালে দেউলি গ্রাম থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ইচাডির গভীর জঙ্গলে জয়ন্তর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, শুক্রবার রাতে ধৃত হলধর ও দয়ালকে জেরা করেই সন্ধান মেলে জয়ন্তর কাটা মুন্ডের। জেরার মুখে তাঁদের কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে, রবিবার রাতেই জয়ন্তকে খুন করে দেহ জঙ্গলে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর মুন্ডু কেটে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যেই একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। শনিবার হলধর ও দয়াল, পিতা-পুত্রের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে বিকেলে পুলিশ ফের সেই জঙ্গলে যায়। ধৃতদের দেখিয়ে দেওয়া ডোবার জলে একটি কাপড়ের থলের মধ্যে প্লাস্টিকে ভরা ছিল মুন্ডুটি। ধৃতদের সাহায্যেই তা জল থেকে তুলে আনা হয়।

পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “ওই দু’জনই মুন্ডটি ডোবার জলে ফেলতে গিয়েছিল বলে জেরায় জানিয়েছে।” পুলিশের দাবি, ধৃত বাবা-ছেলের কাঁধে ভারী কিছু বয়ে নিয়ে যাওয়ার দাগ ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। পরে তাঁরা পুলিশের কাছে জেরায় স্বীকার করেছেন যে, মৃতদেহটি অত দূরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণেই এই দাগ হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ওই দু’জনকে জেরা করে আমরা জেনেছি, খুনটা হয়েছিল রবিবার রাতে। খুনের ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছিল এবং এই ঘটনার পিছনে আর কারা রয়েছে, তা জানার চেষ্টা হবে।”

এ দিন জয়ন্তর মুন্ডু শনাক্ত করেন তাঁর দাদা বিকাশ ও মা সবিতা কুমার। যে থলের মধ্যে মুন্ডুটি ছিল, সেটিও তাঁর ভাইয়ের বলেই শনাক্ত করেন বিকাশ। জয়ন্ত গ্রামে দর্জির দোকান চালাতেন। নিজের মেশিনে বানানো সেই থলেই তিনি ব্যবহার করতেন। রবিবার রাতে এই থলেটি জয়ন্তর কাছে ছিল। রবিবার ওই কাটা মুন্ডুর ময়না-তদন্ত হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। আগের দিন দেহের উপরের অর্থাত্‌ গলার কাছের অংশ এমন ভাবে থেঁতলে ছিল যে পুলিশ প্রথমে বুঝতে পারেনি মুন্ডু আদৌ রয়েছে না নেই। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “দেহে এতটাই পচন ধরে গিয়েছিল ও থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল, প্রথমে ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যায়নি।” এ দিন জয়ন্তর বাবা মহাবীর কুমার এবং দেউলি অঞ্চলের কংগ্রেস সভাপতি সুকুমার পরামানিকও বলেন, “আমরাও বুধবার দেহ উদ্ধারের সময় বুঝতে পারিনি, মাথাটা নেই। দেহের উপরের অংশ থেঁতলানো ছিল। তা ছাড়া কাপড়ে বাঁধা ছিল।”

balrampur congress worker jayanta kumar murder-case severed head arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy