Advertisement
E-Paper

ধরা পড়েও জামিন তৃণমূল নেতার

হামলা, মারধর-সহ নানা অভিযোগ বারে বারে উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ কোনও বারই ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও শনিবার রাতে একটি লজে হামলা চালানো, কর্মীদের মারধর ও পরে একটি বাসে ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করলেও রবিবার সকালেই জামিন পেয়ে যান। তিনি বাঁকুড়ার প্রণবানন্দ পল্লির বাসিন্দা তথা শহর দক্ষিণ শাখার যুব তৃণমূল সভাপতি পীযূষ চক্রবর্তী ওরফে ক্যাসেট বাপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪৮
বাঁকুড়া আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধৃত তৃণমূল নেতা পীযূষ চক্রবর্তীকে। ছবি: অভিজিত্‌ সিংহ।

বাঁকুড়া আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধৃত তৃণমূল নেতা পীযূষ চক্রবর্তীকে। ছবি: অভিজিত্‌ সিংহ।

হামলা, মারধর-সহ নানা অভিযোগ বারে বারে উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ কোনও বারই ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও শনিবার রাতে একটি লজে হামলা চালানো, কর্মীদের মারধর ও পরে একটি বাসে ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করলেও রবিবার সকালেই জামিন পেয়ে যান। তিনি বাঁকুড়ার প্রণবানন্দ পল্লির বাসিন্দা তথা শহর দক্ষিণ শাখার যুব তৃণমূল সভাপতি পীযূষ চক্রবর্তী ওরফে ক্যাসেট বাপি।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল নেতাই বলে কি এতদিন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল না? যদিওবা ধরা হল কেন জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করল পুলিশ? তার স্পষ্ট উত্তর অবশ্য মেলেনি। বাঁকুড়া পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার শুধু বলেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই আমরা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছি। অভিযোগ পাওয়ার পরে মামলা দায়ের করেছি।”

কী ঘটেছিল শনিবার?

অভিযোগ, ওই দিন রাতে রাতে গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি লজে জনা পাঁচেক সঙ্গীকে নিয়ে আচমকা হামলা চালান তৃণমূলের স্থানীয় ওই নেতা। লজে ঢুকে পর্দা টেনে ছিঁড়ে দেন, কর্মীদের মারধর করেন। ওখান থেকে ফেরার পথে গোবিন্দনগরে দমকল মোড়ের কাছে সঙ্গীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। ওই সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রুটের একটি বাস। নেমে রাস্তা থেকে সরে যেতে বলতেই বাসের কর্মী শেখ মানোয়ারকে রাস্তায় ফেলে তাঁরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। বাসকর্মীকে ছেড়ে চালককে ধরতে গেলে দৌড়ে পালিয়ে যান। সুযোগ বুঝেই বাসকর্মী কোনও রকম ভাবে অন্ধকারে গা ঢাকা দেন। শুধু তাই নয়, যাত্রীরা বাস থেকে নেমে এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে বাপি ও তাঁর সঙ্গীরা তাঁদেরও মারতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ। এর পরেই শুরু হয় বাসে ভাঙচুর। ততক্ষণে ঘটনার খবর পেয়ে গিয়েছেন বাসমালিক তথা জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল। তিনি ফোনে পুলিশকে ঘটনার কথা জানান এবং নিজেও ঘটনাস্থলে আসেন। রাতেই থানায় বাপি ও তাঁর এক সঙ্গী তুষার হুড়া-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন দীপকবাবু। লজের এক কর্মীও বাপির বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ রাতেই বাপিকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত তুষারের খোঁজ অবশ্য পায়নি পুলিশ। গুরুতর জখম অবস্থায় সকালে মালিকের কাছে আসেন বাসকর্মী। তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মাথায় চোট পেয়েছেন তিনি।

কিন্তু রবিবার সকালে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৬০০ টাকার বন্ডে জামিন পান বাপি। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসমালিক ও লজ মালিকদের মধ্যে। এতবড় কাণ্ড করার পরেও তিনি কী করে জামিন পেলেন? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এই প্রথম নয়। বাপির বিরুদ্ধে এর আগেও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঝামেলা করার অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। এর মধ্যে বহু ঘটনাই থানা পর্যন্ত যায়নি। গত ১৬ মার্চ দোলের দিনে বাসস্ট্যান্ড এলাকার বেশ কিছু লজে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠেছে। যদিও এ বিষয়ে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। ওই দিনই সিপিএমের বাঁকুড়া শহর পশ্চিম ২ লোকাল কমিটির সদস্য গণেশ মালাকারকে মারধর করেন বাপি। গুরুতর জখম হয়েছিলেন গণেশবাবু। তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন গণেশবাবু। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অভিযোগ, উল্টে ওই লোকাল কমিটির সম্পাদক কুণাল রায় ও গণেশের বিরুদ্ধে পাল্টা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনেছিলেন বাপি।

পরের মাসেই সিপিএমের ওই লোকাল কমিটির অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফের অভিযোগ ওঠে বাপির বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এ দিন বাপির জামিন পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাস মালিক দীপকবাবু। তিনি বলেন, “একজন বাস কর্মীকে যে ভাবে মরেছে, তাতে তাঁর প্রাণও যেতে পারত। রাতের অন্ধকারে সঙ্গীদের নিয়ে এ ভাবে হামলা চালানোর পরে কীভাবে তিনি জামিন পেলেন বুঝতে পারছি না।” লজর মালিক প্রদীপ মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, “ভেবেছিলাম বাপি কড়া শাস্তি পাবেন। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তিনি জামিন পাওয়ায় অবাক হচ্ছি।”

এই ঘটনার পরে অনেকগুলি প্রশ্ন উঠছে। এক: এ ক্ষেত্রে পুলিশ কি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দিতে পারত না? দুই: মামলা লঘু করে দেখানোর জন্য পুলিশের উপরে চাপ ছিল? তিন: অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কি পুলিশকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল? মামলা দায়ের করা প্রসঙ্গে বাঁকুড়া আদালতের এক আইনজীবী তথা জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ ক্ষেত্রে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারা দিতে বাধ্য। যেহেতু এক জন ব্যক্তিকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। এবং গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তাই এক্ষেত্রে খুনের চেষ্টার ধারা দেওয়া যেতেই পারত।”

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুভাষ সরকার দাবি করেন, “ধরা পড়ার পরে বাপি পুলিশ কর্মীদের হুমকি দেয় ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তৃণমূলের চাপে পড়েই মামলাটিকে হালকা করেছে পুলিশ। শুধু বাঁকুড়া নয় গোটা রাজ্যেই এখন এই পরিস্থিতি। এর প্রতিবাদে বিজেপি পথে নামবে।” বাসকর্মীর উপরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলার সিটুর বাস ইউনিয়নের সম্পাদক উজ্বল সরকার। যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। এ দিন বাপিবার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। আদালতে তিনি মুখ খোলেননি। দিনভর তাঁর ফোনও বন্ধ ছিল। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব বাপির পাশেই দাঁড়িয়েছেন। বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “বাসস্ট্যান্ডের লজগুলিতে অসামাজিক কাজকর্ম চলে। বাপি এর প্রতিবাদ করেছে। কোনও ঝামেলা করেনি। বাসে ভাঙচুরের ঘটনাতেও বাপি জড়িত নয়। সেই সময় এলাকায় সে ছিলই না। প্রতিবাদী মুখ বলে পরিকল্পনা করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” বাপিকে আড়াল করতে দলের তরফে পুলিশের উপরে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি বলেও দাবি ওই নেতার। একই জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।

tmc leader got bail bankura piyush chakraborty police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy