Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাগালে বাজারদর, কেনাকাটায় লক্ষ্মী

পঞ্জিকামতে শুক্রবার দুর্গাপুজো শেষ হলেও তার রেশ ছিল শনিবার, রবিবারেও। সোমবার ছিল ঈদ, মঙ্গলবার আবার লক্ষ্মীপুজো। ভরা উত্‌সবের মরসুমে তাই জনতার দেদার কেনাকাটায় সরগরম জেলার বাজার। ফি বছর, এই সময়টাতে সাধারণ ক্রেতাদের যেটা সবচেয়ে চিন্তায় ফেলে, সেটা হল আকাশছোঁওয়া বাজর দর।

বাড়ির পথে লক্ষ্মী। রামপুরহাটের খরুণগ্রামে ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

বাড়ির পথে লক্ষ্মী। রামপুরহাটের খরুণগ্রামে ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৩
Share: Save:

পঞ্জিকামতে শুক্রবার দুর্গাপুজো শেষ হলেও তার রেশ ছিল শনিবার, রবিবারেও। সোমবার ছিল ঈদ, মঙ্গলবার আবার লক্ষ্মীপুজো। ভরা উত্‌সবের মরসুমে তাই জনতার দেদার কেনাকাটায় সরগরম জেলার বাজার।

ফি বছর, এই সময়টাতে সাধারণ ক্রেতাদের যেটা সবচেয়ে চিন্তায় ফেলে, সেটা হল আকাশছোঁওয়া বাজর দর। সবজি থেকে ফল, ফুল থেকে মিষ্টি- কোনও কিছুতেই যেন হাত ছোঁয়ানো দায়! তবে এবার যেন বাজারদরে কিছুটা স্বস্তিতে ক্রেতারা। অন্তত জনতা জনার্দন তাই বলছেন।

গতবারের তুলনায় এবার বাজারদর বেশি তো নয়ই, এমনকী মাসখানেক আগেও হয়ে যাওয়া বিশ্বকর্মা পুজোর সময় ফল এবং সবজির যে বাজারদর ছিল তার তুলনাতেও নাগালের। এবার বাজারদর বেশ কিছুটা কমই। সোমবার রামপুরহাট, বোলপুর, সিউড়ি, সাঁইয়িয়া, দুবরাজপুর-সহ জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে অন্তত তেমন ছবিই উঠে এল। বাড়িতে বাড়িতে যেহেতু লক্ষ্মীপুজো, ক্রেতারাও তাই মনখুলে কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকলেন দিনভর। কেমন সে বাজার-ছবি?

জেলার বিভিন্ন বাজারের মান অনুযায়ী বাজারদরে কিছুটা হেরফের থাকলেও, আপেল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০-১০০ টাকা, কলা ডজন প্রতি ৩০-৪০ টাকা, নাসপাতি ৭০-৮০ টাকা, কমলা, মোসাম্বী, বাতাবি লেবু প্রতি পিস ১০-১৫ টাকা, শসা, ২০-৩০ টাকা, আখ ২০ টাকা, তরমুজ ৪০-৬০ টাকা কিলো। শীষ সমেত ডাব বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে, নারকেল সাইজ অনুযায়ি ২০-৩০ টাকা প্রতিটিতে। আনারসের দাম ছিল প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা।

গত বারের দর মাথায় রাখলে ফলের বাজার ঠিক ঠাকই রয়েছে বলে মত বিক্রতাদের। গতবার আপেল পৌঁছে গিয়েছিল ১০০-১২০ টাকায়। অন্যান্য ফলের যোগানও কম ছিল। দুবরাজপুরের ফল ব্যবসায়ী মজনু দে বলেন, “গতবার নারকেল ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি, এবার ২০ টাকায় প্রমাণ সাইজের নারকেল ক্রেতাদের দেওয়া যাচ্ছে। এমনকী বিশ্বকর্মা পুজোয় শীষযুক্ত ডাবের দাম ছিল ৫০ টাকা, সেটাই এখন ২৫ টাকা।” একই মত সিউড়ির ফল বিক্রেতা সঞ্জয় সিংহ এবং রামপুরহাটের ফল বিক্রেতা রাম মণ্ডলের। উভয়েই জানালেন, এবার দুর্গাপুজোয়ও বাজারদর তেমন বেগ দেয়নি ক্রেতাদের। তবে আমের মত মরসুম পেরিয়ে যাওয়া ফলের বাজার দর বেশ চড়া ছিল।

সিউড়ি বাজারে আম বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৩০০ টাকায়। আবার পানিফলের মতো ফলের দরেও জেলার বিভিন্ন বাজারের দামের যথেষ্ট তারতম্য লক্ষ করা গিয়েছে। দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়াতে যে পানিফল ৩০টাকা কেজি প্রতি বিকিয়েছে, রামপুরহাট বাজারে সেই পানিফলের দাম ১০০ টাকা। গতবারের তুলনায় বাজার দর যে অনেকটাই স্বাভাবিক এমন বলছেন রামপুরহাটের বধূ সুচরিতা আইচ। দুবরাজপুরের ডালিয়া ভট্টাচার্য, সাঁইথিয়ার সৌমী দাস, বোলপুরের বাসিন্দা ব্যাসদেব রায় ও ওঁর স্ত্রী কাজল রায়, সিউড়ির অনিন্দিতা বসুরা জানাচ্ছেন, এই সময়টায় বাজার একটু চড়া থাকেই। তবে এবারের বাজার দরে তেমন অস্বভাবিক কিছু দেখিনি। জমিয়ে লক্ষীপুজোর বাজার চলছে।

এবার ফলের বাইরে সবজি বাজারদরও ঠিকঠাকই রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রতারা। ২৫-৩০ টাকা প্রতি পিস ফুলকপি, ২০-৩০ টাকা কিলো দরে বাঁধাকপি, টমাটো ৩০-৪০, মুলো -২০, ক্যাপসিকাম-৮০, গাজর-৫০। নাগালের মধ্যেই রয়েছে মত উভয় পক্ষের। গতবার যেখানে জেলার বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি বিকিয়েছে প্রতি পিস ৫০ টাকা দরে, মুলো পৌঁছে গিয়েছিল ৭০ টাকায়।

শুধু ফল সবজি নয় দশকর্মা ভাণ্ডারের বাজেটও এবার খুব একটা বাড়াতে হবে না বলে মত জেলার বিভিন্নপ্রন্তের বিক্রেতাদের। গতবারের তুলনায় মালার বাজার দাম সম্ভবত কিছুটা কমেছে। গতবারে যে মালা বিক্রি হয়েছে ১২ টাকায়, এবার সেটা ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে মোটের উপর মালা চাঁদমালা বা শাখা, সিঁদুর, লক্ষ্মীর ঝাঁপি, কড়ি, অন্যান্য উপাদান প্রায় একই দরে সংগ্রহ করতে পারছেন ক্রেতারা।

লক্ষ্মী আঁকা সরার দামে অবশ্য কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামপুরহাটের লক্ষ্মী দাস। তিনি অন্যান্য বারের মত এবারও লক্ষ্মী সরা বিক্রি করছেন। নবদ্বীপ থেকে আসা সরা প্রতি যেখানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় সেখানে স্থানীয় ভাবে তৈরি করা লক্ষ্মীসরা দাম নেওয়া হচ্ছে ৭০ টাকা, যা গতবারের থেকে বেশি। পদ্মফুলের যোগন এবার বেশ ভাল, সাঁইথিয়ার ফুল ব্যবসায়ী কালসোনা দে’র কথায়, “এবার পদ্ম কুঁড়ি বিক্রি করছি ৫, ১০, ১৫ টাকায়। গত বার বিকিয়েছিল ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত।” এতো পুজোর আয়োজনের কথা, এবার আসা যাক প্রতিমায়। দুবরাজপুর, সিউড়ি, বোলপুরে ছোট বড় ছাঁচের লক্ষ্মী মূর্তির দাম ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত।

দুর্গাপুজো ও লক্ষ্মীপুজোর মাঝে ঈদ পড়ে যাওয়ায় ছানার যোগান কমেছে। এই নিয়ে বেশ বিপাকে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে দুবরাজপুর, বোলপুর সাঁইথিয়ার মতো জায়গায়। কারণ ছানার যোগানের মূল উত্‌স মুর্শিদাবাদের কান্দি এবং বর্ধামানের কাটোয়া, বীরভূমের কীর্ণাহার। কিন্তু সেই ছানাই রবিবার ও সোমবার ঠিক মতো আসেনি। মিষ্টির দোকানে চিন্তিত ব্যবসয়ীরা। দুবরাজপুরের রাম দে, সুনীল খাণ্ডেলওয়াল, সাঁইথিয়ার নবকুমার মণ্ডল বা বোলপুরের আসিত রক্ষীত, বিষ্টুপদ করেরা জানান, ছানার যোগান না থাকায় ছানার মিষ্টি তৈরি করা যাচ্ছে না। এতে খরিদ্দারের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ঈদ লক্ষ্মীপুজো দুটি উত্‌সবেই মিষ্টির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই চাহিদা ছানার অভাবে পূরণ করা যাচ্ছে না। তবে আশা একটাই মঙ্গলবার সকালে ছানা ঠিকমত আসবে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো রাতে হয়, তার মধ্যেই মিষ্টি তৈরি করে কিছুটা যোগান মিটলেও মিটতে পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

laxmi pujo pujo price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE