Advertisement
১৮ মে ২০২৪

নড়বড়ে সাঁকোই ভরসা ৪০ গ্রামের

এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য নদীর উপরে রয়েছে নড়বড়ে একটা বাঁশের সাঁকো। শীত গ্রীষ্মকালে ওই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়েই যাওয়া যায়। আর ঘোর বর্ষায় মাঝে মধ্যেই ওই বাঁশের সাঁকো ভেসে যায় জলের টানে। তখন যাতায়াত বন্ধ। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের বেলুট ঘাটে শালি নদীর উপরে পাকা সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এমনই সমস্যায় ভুগছেন দু’টি পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। অবিলম্বে তাই শালি নদীর উপরে বেলুট ঘাটে পাকা সেতুর দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা।

পাত্রসায়রে শালি নদীর উপরে বেলুট ঘাটে সেতুর দাবি আজও পূরণ হল না। ছবিটি তুলেছেন দেবব্রত দাস।

পাত্রসায়রে শালি নদীর উপরে বেলুট ঘাটে সেতুর দাবি আজও পূরণ হল না। ছবিটি তুলেছেন দেবব্রত দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য নদীর উপরে রয়েছে নড়বড়ে একটা বাঁশের সাঁকো। শীত গ্রীষ্মকালে ওই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়েই যাওয়া যায়। আর ঘোর বর্ষায় মাঝে মধ্যেই ওই বাঁশের সাঁকো ভেসে যায় জলের টানে। তখন যাতায়াত বন্ধ। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের বেলুট ঘাটে শালি নদীর উপরে পাকা সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এমনই সমস্যায় ভুগছেন দু’টি পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। অবিলম্বে তাই শালি নদীর উপরে বেলুট ঘাটে পাকা সেতুর দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা।

পাত্রসায়র ব্লকের নারায়ণপুর, হামিরপুর ও বেলুট রসুলপুর পঞ্চায়েত এলাকার ভিতর দিয়ে বয়ে গিয়েছে শালি নদী। বেলুট রসুলপুর পঞ্চায়েতের বেলুট গ্রামে শালি নদীর উপরে প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ ও ৬ ফুট চওড়া একটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। সাঁকো নড়বড়ে হলেও বর্ষা বাদে বছরের বাকি সময় ওই সাঁকোই বাসিন্দাদের ভরসা। এলাকার স্কুল পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসী সবাই প্রতিদিন ওই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বছরের অধিকাংশ সময়েই মূলত বেলুট রসুলপুর ও হামিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ বেলুট ঘাটে শালি নদীর ওই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। এ জন্য অবশ্য জন প্রতি এক টাকা, সাইকেল থাকলে দু’টাকা এবং মোটরবাইক থাকলে ৫ টাকা করে পারানি দিতে হয়। গ্রামবাসীরাই কমিটি তৈরি করে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। তবে বর্ষার সময়ে ওই বাঁশের সাঁকো প্রায় প্রতি বছরই জলের তোড়ে ভেসে যায়। তখন চরম দুর্ভোগে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। কোনও রকমে একটি নৌকায় চড়ে সকলকে নদী পার হতে হয়। তাই এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এই জায়গায় এ বার সেতু তৈরি করা হোক।

বেলুট রসুলপুর পঞ্চায়েতের পাঁচপাড়া, মামুদপুর, নেত্রখণ্ড, ঘোড়াডাঙা, টাসুলি, সোনাটিকুরি, চরগোবিন্দপুর, তেলশাড়া, গাবতলা, গোবিন্দপুর-সহ আশেপাশের প্রায় ১৫টি গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের নানা প্রয়োজনে এই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এই সব গ্রামের অধিকাংশ মানুষই পেশায় কৃষিজীবী। চাষের উপরেই তাঁরা মূলত নির্ভরশীল। ফলে মাঠের ফসল জমি থেকে বাড়িতে বা বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের সেতু না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যেমন পাঁচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রবি সরকার, মন্টু ঘোষের মতো অনেক চাষির ক্ষোভ, “চাষাবাদই আমাদের প্রধান জীবিকা। বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে জমির ফসল বিক্রি করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে আমাদের। সেতু না থাকায় গ্রামে বড় গাড়ি ঢুকতে পারছে না। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও গ্রামে ফসল কিনতে আসতে চায় না। এতে আমাদের মতো ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষিদের লোকসান হচ্ছে।”

পাঁচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তথা বাঁশের সাঁকো রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সদস্য অমিত পান, ব্যবসায়ী অরূপরতন ঘোষ বলেন, “নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো ফি বর্ষায় ভেঙে যায়, ভেসে যায়। তখন আমরা ব্লক সদর থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। সেতু না থাকায় পিচ রাস্তাও তৈরি হচ্ছে না।” তাঁদের ক্ষোভ, প্রশাসনের কাছ থেকে বছরের পর বছর ধরে শুধু সেতু তৈরির আশ্বাসই পেয়ে আসছি, কাজ আর এগোয় না।”

পাঁচপাড়ার বাসিন্দা তথা বেলুট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র কৌশিক পান, ছাত্রী অনুশ্রী ঘোষ, একাদশ শ্রেণির ছাত্র স্বাধীন ঘোষদের বক্তব্য, তাদের মতো পড়ুয়া-সহ প্রায় হাজার খানেক মানুষ রোজ নানা কাজে ওই সাঁকোর পেরিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু বর্ষায় তাঁদের প্রত্যেককে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বেলুট হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক দিলীপ রায় বলেন, “স্কুলে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১১০০। তারমধ্যে পাঁচপাড়া, ঘোড়াডাঙা, চরগোবিন্দপুর, টাসুলি-সহ নদীর ওপারের বহু গ্রাম থেকে প্রায় ৫০০ জন ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে পড়াশোনা করতে আসে। ভারী বৃষ্টি হলেই ওই পড়ুয়ারা সাঁকো পেরিয়ে আর স্কুলে আসতে চায় না। সেতু তৈরি হলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।”

গ্রামবাসীর অভিযোগকে সমর্থন করেছেন পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল নেতা সুচাঁদ দাস। তিনি বলেন, “শালি নদীর উপরে বেলুট ঘাটে ও গোস্বামী গ্রামের ঘাটে দু’টি সেতু তৈরি হলে আশেপাশের প্রায় ৪০টি গ্রামের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন। জেলা পরিষদের কাছে আমরা ওই দু’টি সেতু অবিলম্বে নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়েছি।” পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “বাঁকুড়া জেলা পরিষদের তরফে বেলুট গ্রামে শালি নদীর উপরে সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

villege patrasayar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE