পুনর্বাসন চেয়ে পুরুলিয়ায় বিক্ষোভ।
ঝালদা বাজারের রাস্তার দু’পাশ থেকে অবৈধ দখলদার হটানোর জন্য পথে নামছে ঝালদা পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, রাস্তার দু’পাশ থেকে অবৈধ দখলদার সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুরসভার এই সিদ্ধান্ত সোমবার পুরএলাকায় ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া শহরেও সম্প্রতি রাস্তার পাশ থেকে বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। এ দিকে যাঁদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তাঁরা পুনর্বাসনের দাবিতে এ দিন পুরভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান।
ঝালদার নতুন পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবাল জানিয়েছেন, মেন রোডের দু’পাশ থেকে অবৈধ দখল সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কোনও পথ তাঁদের সামনে খোলা ছিল না। কারণ ঝালদার প্রধান বাজারটি মেন রোডের উপরে। এই রাস্তার উপরে ঝালদা গার্লস স্কুল রয়েছে। তাই সকালে এই রাস্তায় খুব ভিড় থাকে। আর এই রাস্তার উপরই বাজার। বাজারে যাঁরা ব্যবসা করেন বা যাঁদের দোকান রয়েছে, তাঁদের পসরা রাস্তার উপরেই থাকে। এ ভাবে রাস্তার দু’পাশের অনেকটা অংশই বেদখল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে পথচারীদের চলাফেরা করতে প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে। তা ছাড়া এই রাস্তার উপরেই বাসস্ট্যান্ড রয়েছে।
বাসিন্দাদের আরও একটি সমস্যার কথা পুর কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। অনেক বাস বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রাস্তার অনেকটা অংশ আটকে রেখে যাত্রী তোলার কাজ করে। মালপত্রও গাড়ির মাথায় চাপানো হয়। পুরপ্রধানের কথায়, “আমি পরিবহণ কর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিদের জানিয়ে দিয়েছি বাস যাত্রী তুললে আপত্তি নেই। কিন্তু এ ভাবে দীর্ঘক্ষণ রাস্তার উপরে বাস দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী তোলা যাবে না। আমরা ঢোল পিটিয়ে এই ঘোষণা করেছি।” তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যদি মানুষজন অবৈধ দখল না সরায়, তা হলে পুরসভা নিজের উদ্যোগেই তা সরিয়ে দেবে। পুরসভার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ঝালদা পুরবাসী। তাঁদের বক্তব্য, অবৈধ দখল সরাতে পারলে সবাই লাভ হবে। তাঁদের সংশয়, এই সিদ্ধান্ত শুধু ঘোষণার মধ্যেই আটকে থাকবে না তো?
এ দিকে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল মোড় থেকে ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড় এবং সেখান থেকে রাঁচি রোড অবধি রাস্তার দু’পাশের অবৈধ দখলদারদের হটানোর সিদ্ধান্ত পুরসভাকে পুর্নবিবেচনা করার দাবি উঠেছে। সোমবার এই দাবি নিয়ে পুরুলিয়া পুরভবনে পুরপ্রধানের কাছে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন ফুটপাথ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সঙ্গে কিছু ব্যবসায়ীও যোগ দেন।
ঝালদার চেনা ছবি। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চলছে মালপত্র ও যাত্রী তোলা।—নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া শহরের হাসপাতাল মোড়ের ব্যবসায়ী শীতল দত্ত দাবি করেন, “এ ভাবে পুরসভা অবৈধ দখলদার হটনোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা অথৈ জলে পড়েছি। দোকান তুলে দিলে আমাদের তো না খেয়ে মরতে হবে।” বাসস্ট্যান্ড মোড়ের ব্যবসায়ী বরকা প্রাসাদ বলেন, “আমি ১৫ বছর এখানে ব্যবসা করছি। ফুটপাথের উপরেই ব্যবসা করলেও নর্দমার উপরে আমরা বসি। রাস্তার কতটুকু দখল করে রয়েছি?” শীঘ্রই পুরসভা ওই সব এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে নামছে শুনে আগাম তাঁরা পুরপ্রধানের কাছে যান।
যদিও শহরের বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, এ ভাবে রাস্তা দখল হতে থাকলে হাঁটার জায়গা পাওয়া যাবে না। দুর্ঘটনা তখন আরও বেড়ে যাবে। এই ধরনের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের শহরের অধিকাংশ বাসিন্দার মত যে দিকে, সে দিকেই সায় দেওয়া উচিত বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু এ দিন ওই উচ্ছেদ বিরোধীদের বিক্ষোভে দেখা যায় পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিভাস দাসকে। তিনি দাবি করেন, “পুরসভা এ ভাবে উচ্ছেদ করে দিলে এত মানুষ কোথায় যাবেন? কী ভাবেই বা তাঁদের রুজি চলবে? আমরাও পুরপ্রধানের কাছে এই প্রশ্ন রেখেছি।” তাঁদের দাবি,. অবৈধ দখলদার হটানো হোক। কিন্তু তার আগে পুনর্বাসনের কিছু একটা ব্যবস্থা করা হোক।”
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ব্যবসায়ীরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাঁদের আর্জি শুনেছি। সেই আর্জি প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে। কারণ রাস্তার পাশ থেকে বেআইনি দখলদার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত একা পুরসভার নেয়নি, এটা পুরসভা ও প্রশাসনের যৌথ সিদ্ধান্ত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy