Advertisement
E-Paper

প্রকল্পই সার, জল সংকটে জেরবার

পঞ্চাশের দশকে বিধান চন্দ্র রায়ের ইচ্ছায় মহম্মদবাজারের প্যাটেলনগর টাউনশিপ গড়ে ওঠে। নির্মাণ করা হয় প্রায় তিনশো বাসযোগ্য গৃহ। ওই সব গৃহ ও আশপাশের বাসিন্দাদের জল সমস্যা মেটাতে ও পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য ‘মহম্মদবাজার ব্লক টাউনশিপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম’ বা জল প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা ও জনবসতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫ সালে ‘বড়গাছিয়া গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প’ নামে আরেকটি নতুন জল প্রকল্প হলেও জল সমস্যা সেই তিমিরেই!

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১৯
নদী থেকে এখানেই এসে জমা হয় জল। —নিজস্ব চিত্র।

নদী থেকে এখানেই এসে জমা হয় জল। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চাশের দশকে বিধান চন্দ্র রায়ের ইচ্ছায় মহম্মদবাজারের প্যাটেলনগর টাউনশিপ গড়ে ওঠে। নির্মাণ করা হয় প্রায় তিনশো বাসযোগ্য গৃহ। ওই সব গৃহ ও আশপাশের বাসিন্দাদের জল সমস্যা মেটাতে ও পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য ‘মহম্মদবাজার ব্লক টাউনশিপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম’ বা জল প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা ও জনবসতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫ সালে ‘বড়গাছিয়া গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প’ নামে আরেকটি নতুন জল প্রকল্প হলেও জল সমস্যা সেই তিমিরেই!

এলাকার মানুষের আক্ষেপ, দুটি জল প্রকল্প হওয়া স্বত্বেও এখনও পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি জল দেওয়া বা হাউস কানেকশন দেওয়া হয়নি। এবং কলের সংখ্যাও বেশি নয়। তাঁদের দাবি, “যে সব এলাকার কলে জল পড়ে না সে সব কলগুলি অবিলম্বে সারানো। কম করে তিনবার জল দিতে হবে।”

টাউনশিপ নির্মাণের ক’বছর পর ১৯৬০-৬১ সালে টাউনশিপ ওয়াটার সাপ্লাই জল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এলাকার লোকজন স্বপ্ন দেখতে থাকেন, একদিন না একদিন সকলের বাড়ি বাড়ি জল দেওয়া হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজও স্বপ্নই রয়ে গেছে! কেন এই বেহাল পরিষেবা?

মহম্মদবাজারের প্রথম জল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিএইচইর বোলপুর শাখার মেকানিকাল দফতর সূত্রে জানা যায়, যখন ওই জল প্রকল্প হয়, তখন টাউনশিপের শ’দেড়েক কোয়াটার ছিল। পরে থানা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জল দেওয়া হত। এখন থানা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাদে তাই দেওয়া হয়। তবে এই দীর্ঘ সময়ে ব্লক প্রশাসন টাউনশিপের বাইরে কয়েকটি ট্যাপকল বসিয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, টাউনশিপের অনেক বাড়িতে এখন আর কেউ বাস করেন না। দরজা জানালাহীন বাড়িগুলি এখন কার্যত ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। কাজেই টাউনশিপের হাউস কানেকশনে এখন আর শ’দেড়েক কলের প্রয়োজন নেই। এছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র, থানা এসব প্রতিষ্ঠানেও আর ওই প্রকল্প থেকে জল দেওয়া হয় না। কাজেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে এলাকার লোকেদের দাবি মেনে কিছু বাড়িতে বা রাস্তায় কল বসাতে পারে।

একইসঙ্গে ওই প্রকল্পের জলের রিজারভারগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করলে এলাকার মানুষ পরিস্রুত পানীয় জল পায়। কেন না, ইদানিং এলাকায় যে জল সরবরাহ হচ্ছে, তাতে নোংরা থাকছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পের রিজারভারগুলি জলে নোংরা আর পুরু হয়ে ময়লার স্তর পড়ে গিয়েছে। ঘটনা হল, ময়ূরাক্ষী নদীর মেন ক্যানেল থেকে পাম্প ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রথমে এই দুটি বড় চৌবাচ্চায় ওই জল মজুত করা হয়। তারপর নানা পদ্ধতিতে ওই জল পরিশ্রুত করে সাপ্লাই দেওয়া হয় শহরে।

পিএইচইর (মেকানিক্যাল) বোলপুর শাখার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অমিত সরকার বলেন, “পূর্বের মতোই টাউনশিপের শ’দেড়েক কোয়াটার, হাসপাতাল ও থানায় জল দেওয়া হয়। তবে থানা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জলের অন্য ব্যবস্থা আছে।” রিজারভারগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করার প্রসঙ্গে অমিতবাবু বলেন, “ক্যানেল থেকে পাম্পের মাধ্যমে জল আনা হয়। সেই জলে তো নোংরা ময়লা থাকেই। ওই ময়লা ও আইরনের একটা স্তর পরে জলে। তবে, তিন ও চার লক্ষ গ্যালন জল ধারনের খোলা মুখ রিজারভারে কোনও কিছু পড়লে আমাদের কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে ফেলেন।” কলের সংখ্যা বাড়ানো বা তিনবার জল দেওয়ার প্রশ্নে অমিতবাবু জানান, এলাকায় দু’বারে ৬৮ হাজার লিটারেরও বেশি জল দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে এই মুহুর্তে তিনবার জল দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, কলের পয়েন্ট বাড়ানোর বিষয়ে তাঁদের কাছে কেউ কোনও আবেদনও করেননি। হাউস কানেকশনের বা কলের পয়েন্ট বাড়ানোর বিষয়টি যদিও ব্লক কর্তৃপক্ষ দেখে।

অন্য দিকে রামপুরহাটের পিএইচইর অধীনে মহম্মদবাজারের দ্বিতীয় বড়গাছা জল প্রকল্প নিয়েও এলাকায় যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্প উদ্বোধনের সময় বাড়ি বাড়ি জল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী গৌতম দেব। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। শুধু তাই নয়, প্রকল্প হওয়ার ১৩-১৪ বছর পরও এলাকার সর্বত্র জল পৌঁছায়নি। মহম্মদবাজার নতুনপল্লীর বাসিন্দা গৃহবধূ সুনয়নী দাস, রেখা মণ্ডলরা বলেন, “আমাদের পাড়ায় কোনও কল নাই। খাবার জলের জন্য অনেকটা হাঁটতে হয়। কোথাও কোথাও আবার কয়েক বছর কলে জল পড়েছে, তারপর আর জল পড়ে না। এরমধ্যে আবার নতুন জলাধারের গায়ে সামান্য ফাটলও দেখা দিয়েছে। জলাধারে জল ভর্তি হলেই ওই ফাটল দিয়ে জল চুঁইয়ে পড়ে।”

পিএইচই সূত্রে খবর, নতুন জল প্রকল্পে মহম্মদবাজার, খড়িয়া, রঘুনাথপুর, কুমোরপাড়া, বায়েনপাড়া ও লোহাবাজার, আঙ্গারগড়িয়া, মালডিহা, গনেশপুর, রাজ্যধরপুর- এই দশটি এলাকায় জল দেওয়া হয়। দশটি এলাকায় মোট কলের সংখ্যা ১২০-১২৫টা মতো। খড়িয়া, লোহাবাজার এলাকার বাসিন্দা জহিরুল শেখ, স্বপন মণ্ডল, শান্তি ঘোষ, সামসুল শেখরা বলেন, “কয়েকটা কলে কি হবে? তারপর কলগুলি যেখানে বসানো উচিত ছিল, সেখানে না বসিয়ে এমন জায়গায় বসিয়েছে যে, দেখা যাবে তুলনায় সেখানে বসতি কম। ফলে অনেক কলে এমনিই জল পড়ে যায়।”

এলাকার বাসিন্দা শেখ হুমায়ূন, রাজা দাসরা বলেন, “বছর দেড়েকের বেশি সময় ধরে জাতীয় সড়কের পশ্চিম পাড় এলাকার কোনও কলে জল পড়ে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। দেখা যাক, এ পাড়ের কলগুলিতে ফের কবে থেকে জল দেওয়া শুরু হয়!” ঘটনা হল, জলাধার চত্বরেই পিএইচইর অপারেটিং কার্যালয়। দরজা জানালাহীন ওই কার্যালয়ে এখন আর কেউ থাকেন না। এমনকী কার্যালয়ের জলের পাইপ লাইনটিও খারাপ হয়ে পড়ে আছে।

অপারেটর আলম শেখের বাবা মন্টু শেখ জলাধার চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই কোয়াটারে অনেকদিন থেকে কেউ বাস করেন না। পাইপ লাইনও খারাপ। দিনে দু’বার জল দেওয়া হয়।” রামপুরহাট পিএইচইর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র অর্ধেন্দু দত্ত বলেন, “দিনে দু’ বারে প্রায় ১.২০ লক্ষ গ্যালন জল দেওয়া হয়। আমদের ১২০-২৫ টা মতো কলের পয়েন্ট আছে। তারপর পঞ্চায়েত থেকে কয়েকটি পয়েন্ট করিয়েছে।”

বিডিও সুমন বিশ্বাস বলেন, “হাসপাতালে জলের সমস্যা থাকায়, ওখানে ব্লক থেকে সাবমার্শিবল করে দেওয়া হয়েছে। গরমকাল ছাড়া জলের খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে গরমের সময় চরম জল সমস্যা দেখা দেয়। হাউস কানেকশনের ব্যাপারে কেউ আবেদন করেননি। আবেদন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কেমন লাগছে আমার শহর? আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বীরভূম’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বীরভূম বিভাগ,
জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

bhashkarjyoti majumdar mohammadbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy