Advertisement
E-Paper

প্রতিনিধি দল পাশে, গ্রামে ফিরলেন কর্মীরা

গ্রামে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসার খবরে সকাল থেকেই কানুর গ্রামে ভিড় জমছিল। নিহত বিজেপি সমর্থক শেখ রহিমের পাড়া প্রতিবেশীদের পাশাপাশি আশপাশের গ্রাম থেকেও আত্মীয়পরিজন এবং বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা শ’য়ে শ’য়ে হাজির হচ্ছিলেন ওই গ্রামে। তবে, এই চিত্র গত সপ্তাহে অন্য রকম ছিল। খুনের পর থেকেই ওই গ্রাম কার্যত পুরুষ শূন্য ছিল। গ্রেফতারের ভয়ে কানুরের বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা এক রকম এলাকা ছাড়া ছিলেন। রবিবারের কর্মসূচির জন্য ভরসা পেয়ে দলে দলে হাজির হচ্ছিলেন গ্রামে।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০১:২৯
ইলামবাজারের কানুর গ্রামে নিহত রহিম শেখের স্ত্রীর কাছে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

ইলামবাজারের কানুর গ্রামে নিহত রহিম শেখের স্ত্রীর কাছে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

গ্রামে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসার খবরে সকাল থেকেই কানুর গ্রামে ভিড় জমছিল। নিহত বিজেপি সমর্থক শেখ রহিমের পাড়া প্রতিবেশীদের পাশাপাশি আশপাশের গ্রাম থেকেও আত্মীয়পরিজন এবং বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা শ’য়ে শ’য়ে হাজির হচ্ছিলেন ওই গ্রামে। তবে, এই চিত্র গত সপ্তাহে অন্য রকম ছিল। খুনের পর থেকেই ওই গ্রাম কার্যত পুরুষ শূন্য ছিল। গ্রেফতারের ভয়ে কানুরের বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা এক রকম এলাকা ছাড়া ছিলেন। রবিবারের কর্মসূচির জন্য ভরসা পেয়ে দলে দলে হাজির হচ্ছিলেন গ্রামে।

সকাল থেকেই গ্রামের এখানে ওখানে জটলা ছিল। রাজ্য পুলিশের র্যাফ, কম্ব্যাট বাহিনী মোতায়েন ছিল। ছিলেন সাদা পোশাকে আশেপাশের থানা এলাকার বেশ কিছু পুলিশ অফিসার এবং কর্মীও। নিহতের স্ত্রী হাজারা বিবি বারবার অচৈতন্য হয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউ আবার অভয় দিচ্ছেন, “কেন্দ্রীয় দল আসছে। ভেঙে না পড়ে সে দিনের ঘটনার কথা খুলে বলতে হবে।” হাউ হাউ করে সমানে কেঁদে যাচ্ছেন নিহতের দুই মেয়ে আমিনা বিবি এবং শামিমা খাতুন। বাড়ি লাগোয়া পুকুরের পাড়ে তৃণমূল কর্মী বাবলু শেখকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে এফআইআরে নাম থাকা কয়েক জন আবার বলাবলি করছেন, “মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে তৃণমূল। সে দিন আমরা সকলে হাটে গিয়েছিলাম। সাত দিন ধরে বাইরে বাইরে আছি। রবিবার কোনও রকমে গ্রামে ঢুকতে পেরেছি।”

এমন পরিস্থিতির মাঝেই দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ পুলিশ প্রহরায় হাজির হল বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। গ্রামে ঢোকার পর পরেই তাঁরা সটান চলে যান নিহতের বাড়িতে। দলের সর্ব ভারতীয় সহ-সভাপতি বলবীর পুঞ্জ, সাংসদ কীর্তি আজাদ এবং দলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সর্ব ভারতীয় সভাপতি আব্দুল রশিদ আনসারি। সকলকে গোটা বিষয়টি দু’মিনিটের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে বোঝালেন দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। রহিম শেখের একচালা বাড়িতে কোনও মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই। সেখানেই দলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল দেখা করেন নিহতের পরিবারের সঙ্গে। গাদাগাদি ভিড়ে অবস্থা বেগতিক বুঝে অগত্যা বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং জেলার অন্যতম সম্পাদক চিত্তরঞ্জন রক্ষিত ওই বাড়ির উঠোন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। প্রতিনিধি দল বাইরে আসার পরে খাঁখাঁ রোদে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সকলের সঙ্গে কথা বলেন ওই প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য। গোটা ঘটনা সম্পর্কে নিহতের দুই মেয়ে এবং ভাগ্নির কাছে বিষয়টি জানার পর চোস্ত হিন্দিতে নিজের এবং দলের অবস্থান সুস্পষ্ট করেন ওই প্রতিনিধিরা। তাঁদের হিন্দি কথা বাংলায় আবার অনুবাদ করে নিহতের পরিবারকে জানাচ্ছিলেন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আসা রাজ্যের মহিলা সদস্যারা।

এই ল্যামপোস্টেই বেঁধে খুন করা হয়েছিল, প্রতিনিধি দলকে জানাচ্ছেন নিহতের পরিজন।

লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূল এলাকায় বিজয় মিছিল করেছিল। সেখান থেকেই গ্রামের হাতেগোনা কয়েকটি বিজেপি পরিবারের উদ্দেশ্যে তৃণমূল হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই হুমকির কথার পাশাপাশি দফায় দফায় বিজেপি সমর্থকদের উপর হামলা ও লুঠপাটের ঘটনার বিবরণ আক্রান্ত পরিবার প্রতিনিধি দলের সামনে তুলে ধরেন। ঘটনাটি শোনার পর নিহতের দুই মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলবীর পুঞ্জ বলেন, “এই পরিবারের যা ক্ষতি হয়েছে, তা কোনও দিন পূরণ হবে না। কিন্তু বিজেপিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। আপনারা আমার মেয়ের মতো। বিজেপি আপনাদের বাবার মতো নিরাপত্তা এবং স্নেহ দেবে। পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। আমি আছি, দলও পাশে আছে। সব রকমের সহায়তা করবে।” নিহতের মেয়ে তাঁদের কাছে আর্জি জানান, কেন্দ্র সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়াক এবং সহায়তা করুক। বলবীর দুই মেয়েকে কাছে নিয়ে জানান, শুধু কেন্দ্র সরকারই নয়, গোটা বিজেপি-পরিবার নিহত রহিম শেখের পরিবারের পাশে আছে। নিহতের স্ত্রী হাজারা বিবি এবং ভাগ্নি জিন্নাত বিবির উদ্দেশ্যে বলবীর পুঞ্জ এবং কীর্তি আজাদ জানান, বিজেপি রাজনৈতিক দল নয়। একটি পরিবার। রহিম শেখ ওই পরিবারেরই সদস্য। বেশ কিছু ক্ষণ এই কথাবার্তা চলার পরে যে ল্যামপোস্টে বেঁধে টাঙ্গি দিয়ে কোপানো হয়েছিল রহিমকে সেই জায়গায় নিয়ে যান নিহতের ভাগ্নি জিন্নাত বিবি। সেই ভয়াবহ কাণ্ডের কথা এবং ঘটনাস্থলে মোতায়েন পুলিশ অফিসারের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র বর্ণনা দেন তিনি। নিহতের পরিবারের কথা এবং সে দিনের ঘটনা বাংলা থেকে হিন্দিতে অনুবাদ করে বোঝানো হয় ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যদের।

ইলামবাজারে বিজেপির সভায় বক্তব্য রাখছেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বলবীর পুঞ্জ।

এক সময়ে গোটা ঘটনা শুনে বিরক্ত এবং ইসৎ চড়া গলায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন বলবীর পুঞ্জ। কিছু পরে গ্রামের উপরপাড়ায় আক্রান্ত একাধিক বিজেপি সমর্থকদের বাড়ি ঘুরে দেখেন তাঁরা। ঘটনার আটদিন পরেও তখন সেখানে পড়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইটের টুকরো। ওই পরিবারের মধ্যে অন্যতম ফিরোজা বিবি বলেন, “আমি হৃদরোগী। অনেক অনুরোধ করেছিলেম। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট চালিয়ে জিনিস পত্র তছনছ করে পালাল। ওই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বারবার হুমকি দিচ্ছিল, ফল ভাল হবে না।” সবার বক্তব্য শোনার পরে প্রতনিধি দল বিকেল চারটে নাগাদ গাড়িতে চেপে বেরিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ইলামবাজারের দলীয় কার্যালয় সামনে জনসভায় যোগ দেওয়া।

গাড়ি চলে যেতেই নিহতের স্ত্রী চোখের জল আঁচলে মুছতে মুছতে বললেন, “দুই ছেলে ভয়ে বাড়ি ঢুকছে না। তাদের দেখুন, আমাদের পাশে থাকুন।”

party members of bjp returned to the village delegation bjp balbir punj mahendra jena
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy