এলাকায় ঠিকমতো বিদ্যুৎ পরিষেবা মিলছে না, এই অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রাজনগর সাব-স্টেশনে ভাঙচুর চালাল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। স্টেশন লক্ষ করে তাঁরা ইট-পাটকেলও ছোড়েন। ওই পরিস্থিতিতে স্টেশনের দুই কর্মী ভয়ে লুকিয়ে পড়েন। শেষমেশ পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায় কোম্পানি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সপ্তাহখানেক ধরে রাজনগর ব্লক জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে নিয়ম করে বিকেল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত ব্লকের কোনও অংশেই বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এমনকী, সকাল ও দুপুরেও নিয়ম করে লোডশেডিং হচ্ছে। তার জেরে সরকারি অফিসের কাজকর্ম, স্কুল পড়ুয়াদের পড়াশোনা থেকে বাসিন্দাদের অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবারও বিকেলে থেকে রাত ৩টে পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। তার জেরেই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে একাংশের গ্রাহকের। তাঁরাই গরমে বিদ্যুৎ না পেয়ে সাব-স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
শুক্রবার রাজনগরের তাঁতিপাড়ার বসিন্দা রামচন্দ্র পাল, গাংমুড়ির বাসিন্দা সুশান্ত মণ্ডল, রাজনগরের বাদল সূত্রধর এবং পার্থ মুখোপাধ্যায়রা জানান, আগে চন্দ্রপুরের সাব-স্টেশন থেকেই গোটা রাজনগরের বিদ্যুৎ সরবরাহ হত। এখন রাজনগরে সদ্য তৈরি হওয়া সাব-স্টেশন থেকেই ব্লকের সব প্রান্তে বিদ্যুৎ পৌঁছচ্ছে। তাঁদের ক্ষোভ, “নতুন সাব-স্টেশন পেয়ে দুর্দিন কাটল বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু ঘটনা হল, আগের তুলনায় পরিষেবা উন্নত হওয়ার বদলে আরও খারাপ হয়েছে। সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই লোডশেডিংয়ে ডুবে যাচ্ছে গোটা ব্লক।” বিদ্যুৎ পরিষেবার এই হাল নিয়ে ক্ষুব্ধ রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সুকুমার সাধুও। তিনি বলেন, “দিন কয়েক ধরে ব্লকে বিদ্যুৎ পরিষেবা সত্যিই বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে এখনও ফল মেলেনি।”
পরিষেবা দিতে সমস্যা কোথায়?
বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়র তন্ময় মহাপাত্রের দাবি, পর পর দু’বার বজ্রপাতের জেরেই এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। তাতে সাব-স্টেশনে আসার মূল লাইনের যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রথম ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় সেটা মেরামত করতে না করতেই দ্বিতীয় বার আবার বাজ পড়ে। একই সমস্যা তৈরি হয়। তাই লাইন ঠিক হতে সময় লাগছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এলাকায় গ্রাহক ও বিদ্যুতের চাহিদার বাড়ায় বছর খানেক আগে চন্দ্রপুর থেকে সরিয়ে রাজনগরে একটি পৃথক সাব-স্টেশন তৈরি করা হয়। কিন্তু ইনপুট লাইন (সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ আসার পথ) মাত্র একটিই। ৩৩ হাজার ভোল্টের ওই লাইনটি সিউড়ি থেকে রাজনগর সাব-স্টেশনে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু জেলার অন্যান্য সাব-স্টেশন একাধিক ইনপুট লাইনে যুক্ত আছে। সে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন থেকে পরিষেবা দেওয়া হয়। তন্ময়বাবুর দাবি, “রাজনগরের সাব-স্টেশনে এখনও সেই পরিকাঠামো নেই। তবে, আরও কোনও ইনপুট লাইনের সঙ্গে এই সাব-স্টেশনটিকে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তখন আর সমস্যা হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy