শুক্রবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বাজতে শুরু করল পুরুলিয়া সদর থানার ফোন। ডিউটি অফিসার ফোন তুলতেই, ওপাশের কন্ঠ জানাল, একটি লাল গাড়িতে কোনও বালক বা কিশোরকে কোথাও জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে মনে হচ্ছে। গাড়িটিতে সন্দেহজনক কয়েক জন বসে রয়েছে। তাদের কারও মুখে মুখোশ। ফোন কেটে যায়।
গল্পের শুরুটা যতটা নাটকীয়, শেষটা অবশ্য ততটা নয়। রুদ্ধশ্বাস কোনও অপহরণ পর্ব ঠেকিয়ে বালক উদ্ধারের মতো ঘটনাও ঘটেনি। পুলিশের ঝুলিতে আদৌ ধরা পড়েনি কোনও অপহরণকারী।
যাই হোক, ফোনটা পাওয়ার পরেই সদর থানার পুলিশকর্মীরা দ্রুত বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন রাস্তায়। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় থাকা ভ্রাম্যমান টহলদারি গাড়িগুলিকে সতর্ক করে লাল রঙের গাড়ি দেখতে পেলেই থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ফোনে বলা হয়েছি, গাড়িটি শহরের দিকে আসছে। পুলিশকর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা সারলেনগাড়িটি ন’ডিহার দিক থেকে বাসস্ট্যান্ড হয়ে আসতে পারে। আবার বাসস্ট্যান্ড এড়িয়ে রাঁচি বা বোকারোর দিকে চলে যেতে পারে গাড়িটি। হাটের মোড় হয়ে রেল স্টেশনের দিকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না!
সাবধানের মার নেই। অতএব সম্ভাব্য সব রাস্তাতেই শুরু হয়ে গেল কড়া পুলিশি নজরদারি। একটু পরে হাটের মোড়ের দিকে লালরঙের গাড়িটিকে এগিয়ে আসতে দেখে পুলিশকর্মীরা রীতিমতো পজিশন নিয়ে ফেললেন। গাড়ি কাছে আসতেই হাত দেখিয়ে থামার নির্দেশ। গাড়ি অবশ্য একবারেই দাঁড়িয়ে পড়ল। এর পর নিয়মমাফিক কাগজপত্র, গন্তব্য, ভিতরে থাকা সওয়ারিদের নাম ঠিকানা জানার পর্ব। সওয়ারিদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তাঁরা কোথা থেকে আসছেন আর কোথায় যাবেন। সঙ্গে চালকের ঠিকুজি। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন পুরুলিয়া সদর থানার ওসি দেবাশিস পাহাড়ি। ফের একবার খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ সওয়ারিদের। নানা জায়গায় ফোনটোন করে নিশ্চিত হওয়ার পরে ছাড়া পেলেন গাড়ির আরোহীরা। তবে, গাড়ির মালিককে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, পইপই করে চালককে সে কথা বলে দিয়েছে পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে উইলকক্স রোডে একটি খামারবাড়িতে দোল উপলক্ষে রং খেলার আসর বসেছিল। সেই আসরে যোগ দিতে কয়েক জন একটি লালরঙের গাড়িতে করে শহরের দিকে আসছিলেন। সওয়ারিদের মধ্যে দু-এক জন মুখোশ পরেছিল। তারা বেশির ভাগই কিশোর। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “গাড়ির মধ্যেই হই হুল্লোড় করতে করতে তারা যাচ্ছিল। তা দেখেই হয়তো কেউ ফোন করেছিলেন থানায়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা দেখা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গাড়িতে ওরা মজা করছিল।” যে পরিবারের গাড়ি, তার সদস্য প্রবীরকুমার সাও বলেন, “উইলকক্স রোডে আমাদের একটি খামারবাড়ি রয়েছে। সেখানে রং খেলার আসর বসিয়েছিল আমাদের পরিবারের কিছু খুদে সদস্য। সঙ্গে তাদের বন্ধুবান্ধবেরাও ছিল। আমাদের লাল রঙের গাড়িতে করে রং খেলে ফিরছিল ওরা। পুলিশের সন্দেহ হওয়াতেই তারা গাড়ি আটকেছিল। চালককে সব জিজ্ঞেস করেছে। তার পর ছেড়ে দিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy