Advertisement
E-Paper

ফের জিতবেন, আশায় সিপিএম প্রার্থী

শাসক দলের বহু চর্চিত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের সাক্ষী এই এলাকা। শুক্রবার দুপুরে প্রচারের জন্য সেই পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতকেই বেছে নিলেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। সুকৌশলেই টেনে আনলেন নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষের হত্যার প্রসঙ্গও।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০০:৩৫
শুক্রবার বোলপুরে রামচন্দ্র ডোমের ভোট প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার বোলপুরে রামচন্দ্র ডোমের ভোট প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

শাসক দলের বহু চর্চিত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের সাক্ষী এই এলাকা। শুক্রবার দুপুরে প্রচারের জন্য সেই পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতকেই বেছে নিলেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। সুকৌশলেই টেনে আনলেন নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষের হত্যার প্রসঙ্গও। বললেন, “আলাদা মতামত থাকতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। তৃণমূলের সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের মাঝে পড়েই নৃশংস ভাবে খুন হতে হল ওই বৃদ্ধকে। কিন্তু কেন এমনটা হবে বলুন তো?”

এ দিন দুপুরে এলাকার বাম কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়ে প্রচার শুরু করেন রামচন্দ্রবাবু। ক’ দিন আগেই ওই কসবাতেই কর্মিসভা করে তেমন সাড়া পায়নি শাসক দল। এমনকী, যোগ দিতে দেখা যায়নি বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কাউকেই। কিন্তু এ দিন সিপিএম প্রার্থীকে কর্মী-সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান দেখা গিয়েছে। বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের (কেউ নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কেউ আবার ওই প্রার্থীদের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছিলেন) কেউ তখন বাড়ির উঠোনে, কেউ রাস্তার চায়ের দোকানে বসে রামচন্দ্রবাবুর প্রচার লক্ষ করে গেলেন। মুচকি হেসে তাঁদেরই এক জন বলছিলেন, “এই না হলে সিপিএম! দেখছেন, কোনও বিরোধ নেই। সকলে যেন এককাট্টা!”

বোলপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দিন কয়েক আগেই তাঁর কেন্দ্রের অন্তর্গত বীরভূমের এলাকাগুলিতে প্রচার শুরু করেছেন। তার আগে পৌঁছেছেন বর্ধমানের মঙ্গলকোট, আউসগ্রাম এলাকাতেও। বুধবারই এসেছিলেন বোলপুর শহরে। সেখানে কয়েকটি ওয়ার্ডে এবং শহর লাগোয়া বেশ কিছু গ্রামেও প্রচারে গিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই বোলপুর থানার দুর্গাপুর, ধান্যসড়া, শিমুলিয়া প্রভৃতি এলাকা ঘুরে ভোটের প্রচার করেন। দুপুর তিনটে নাগাদ পৌঁছন পাড়ুই থানার কসবায়। সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা কমিটি সদস্য তথা প্রাক্তন জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের সভাপতি গৌতম ঘোষ। পাল পাড়ার ফটিক মির্ধা, ব্রাহ্মণ পাড়ার জয়দেব দলুই, মুসলিম পাড়ার শেখ হেরোল, শেখ সাধু, শেখ অরমানরা লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে তাঁকে আগে ভাবে রাস্তা করে দিচ্ছিলেন। শতাধিক কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জোড় হাতে ‘দলকে জয়ী করুন, দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করুন’ আর্জি নিয়ে ওই এলাকায় ঘুরে বেড়ালেন রামচন্দ্রবাবু।

বেলা চারটে নাগাদ এসে থামলেন কসবার বাগদী পাড়ার অন্নপূর্ণা সঙ্ঘ লাগোয়া গোপাল বাগদীর বাড়ির সামনে। সেখানে থাকা প্লাস্টিক চেয়ার বসলেন সিপিএম প্রার্থী। তাঁকে ঘিরে তখন পুরুষ-মহিলা-শিশু নির্বিশেষে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। জনতার উদ্দেশ্যে রামবাবু বলেন, “অস্বীকার করছি না, বাম আন্দোলনে এখন বিপর্যয়ের সময়। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তনের সরকার সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য এই দু’টিকেই ভিত্তি করেছে। জনগণ এখন তাই পরিবর্তনেরও পরিবর্তন চাইছেন। আমরা আশাবাদী সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য মুছে আমজনতা আমাদেরই জয়ী করবেন।” তার জন্য দলীয় কর্মী-সমর্থকদের তিনি আরও সংগঠিত হওয়ার ডাক দেন। তাঁর সামনেই এলাকার উন্নয়ন নিয়ে দরবার করেন স্থানীয় মেনকা বাগদী, পুষ্প বাগদীরা। তাঁদের অভিযোগ, গত আড়াই বছরে কোনও উন্নয়নের কাজ হয়নি। রামচন্দ্রবাবুর মতোই তাঁরাও দাবি করেন, শাসক দলের সদিচ্ছার অভাবেই এমনটা হয়েছে। রাসু বাগদী, সোনামণি বাগদীরা আবার বলেন, এলাকার সমস্যা মেটানোর জন্য গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের মারধর করে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এলাকার মানুষ এ বার তার জবাব দেবেন।”

এ দিনই নির্বাচনের জন্য ‘এরিয়া ডোমিনেশনের’ কাজ শুরু করেছে পুলিশ। কসবা সিপিএমের প্রচারে তাই দেখা যায় র্যাফ ও কম্বাট বাহিনীকে। বীরভুমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “জেলার যে সমস্ত এলাকা কোনও না কোনও কারণে অতীতে অশান্ত ছিল বা অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে বলে পুলিশ মনে করছে, ওই সব এলাকায় আমরা ‘এরিয়া ডোমিনেশনে’র কাজ শুরু করেছি।” এ দিনই দুবরাজপুর, পাড়ুই প্রভৃতি থানা এলাকায় ওই শুরু হয়েছে।

Mahendra Jena Parui Ramchandra Dom
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy