Advertisement
E-Paper

ফের বাধা, কাজ বন্ধ রঘুনাথপুরে

ছাই পুকুরের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ। এরই মধ্যে সোমবার বন্ধ করে দেওয়া হল ওয়াটার করিডরের (জলের পাইপ লাইন) কাজও। কর্মসংস্থানের দাবিতে জমিহারাদের আন্দোলন ফের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে ডিভিসির রঘুনাথপুর তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের। এমনিতেই আর্থিক সঙ্কটে ভোগা এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার রঘুনাথপুরের এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বেসরকারি হাতে যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সংস্থার অন্দরেই।

নিজস্ব সংবাদদতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০২
ছাই পুকুর তৈরির কাজ বন্ধ। পড়ে রয়েছে মাটি কাটার যন্ত্র।—নিজস্ব চিত্র

ছাই পুকুর তৈরির কাজ বন্ধ। পড়ে রয়েছে মাটি কাটার যন্ত্র।—নিজস্ব চিত্র

ছাই পুকুরের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ। এরই মধ্যে সোমবার বন্ধ করে দেওয়া হল ওয়াটার করিডরের (জলের পাইপ লাইন) কাজও। কর্মসংস্থানের দাবিতে জমিহারাদের আন্দোলন ফের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে ডিভিসির রঘুনাথপুর তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের।

এমনিতেই আর্থিক সঙ্কটে ভোগা এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার রঘুনাথপুরের এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বেসরকারি হাতে যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সংস্থার অন্দরেই। তার পরে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের শেষ দিকে। ফের জমিহারাদের বাধায় প্রকল্পের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঙ্কট আরও বাড়ল বলে মনে করছে ডিভিসির এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আধিকারিকদের একাংশ। তবে পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জমিহারাদের নিয়ে ফের আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে প্রশাসন।

রঘুনাথপুরের ডিভিসির নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎ প্রকল্পে জমিহারাদের বাধায় বারবারই কাজ বন্ধ হয়েছে। ফলে উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু পিছিয়ে পড়েছে ডিভিসি। নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার জন্যেই ইতিমধ্যে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে এই প্রকল্পের। ডিভিসির একটি অংশ তাই চাইছে, আর্থিক সঙ্কটের কারণে রঘুনাথপুরের এই প্রকল্প নির্মাণে সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রের সাথে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে। ডিভিসির একটি সূত্রে খবর, সম্প্রতি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সাথে বৈঠকে ডিভিসি রঘুনাথপুর নিয়ে তাঁদের এই মনোভাব ব্যক্ত করেছে। তবে ডিভিসির প্রতি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের পরামর্শ, আপাতত সরকারি ক্ষেত্রের কোনও সংস্থার সাথেই রঘুনাথপুরের প্রকল্প রূপায়ণ করা হোক।

এই অবস্থায় টানা সাতদিন ধরে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের পাবড়া গ্রামের কাছে ছাই পুকুরের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্প রূপায়ণ ঘিরে ফের এক দফা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ছাই পুকুরের কাজে স্থানীয় জমিহারাদের কাজে নিয়োগের দাবিতে অন্দোলন শুরু করেছে পাবড়া ছাইপুকুর জমিহারা কমিটি নামের একটি সংগঠন। কমিটির নেতা স্বদেশ মিশ্রের অভিযোগ, “ঠিকাদার বাইরে থেকে শ্রমিক এনে কাজ করাচ্ছেন। ফলে জমিহারারা বঞ্চিত হচ্ছে।” এই কমিটির আরও অভিযোগ, আগে ১৫৫ জন জমিহারা ছাই পুকুর তৈরিতে মাসে ২৬ দিন কাজ পেলেও বর্তমানে তাঁদের মাসে সাতদিন কাজ দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাসে ২৬ দিনই কাজ দেওয়ার দাবিতে অনড় কমিটি।

বস্তুত গত দু’বছরে জমিহারাদের বাধায় ছাইপুকুরে ১৩ বার কাজ বন্ধ করা হয়েছে। ওই কাজের ঠিকা সংস্থাটির কর্মকর্তা বাপ্পাদিত্য চৌধুরী বলেন, “বাইরে থেকে শ্রমিক এনে কাজ করানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন। আসলে দু’টি ছাই পুকুরের মধ্যে একটিতে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ, অন্যটির ৫০ শতাংশ বাজ বাকি। এই অবস্থায় শ্রমিকদের বদলে মেশিন দিয়েই কাজ করানো হয়। তা সত্ত্বেও ক্ষতি স্বীকার করেও আমরা জনা ৭০ শ্রমিককে কাজে বহাল রেখেছি। পুরো বিষয়টি ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

এ দিকে গত ছ’মাস ধরে নির্বিঘ্নে নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ ও গুনিয়াড়া পঞ্চায়েত এলাকায় ওয়াটার করিডরের কাজ হয়েছে। কিন্তু এখানেও স্থানীয়দের কাজ দেওয়ার দাবি তুলে সেই কাজ সোমবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জমিহারাদের অভিযোগ, গত অগস্ট মাসে রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে আলোচনায় স্থির হয়েছিল, ছয় মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে মূল প্রকল্পে ওয়াটার করিডরে যাঁদের জমি গিয়েছে, তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে ডিভিসি। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও একজন জমিহারাও কাজ পাননি। উল্লেখ্য এই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় ওয়াটার করিডরের কাজ ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের দাবিতে আগে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল।

লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপির মধ্যস্থতায় সমস্যা মিটেছিল। দলের জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কখনই কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের পক্ষে নই। তাই স্থানীয় জমিহারাদের বুঝিয়ে কাজ ফের চালু করিয়েছিলাম। কিন্তু ডিভিসি কথা রাখেনি বলেই জমিহারারা কাজ বন্ধ করেছেন।.আমরা ফের জমিহারাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।” তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ডিভিসির আধিকারিকরা। ডিভিসি সূত্রের খবর, আর্থিক সঙ্কটের জন্য রঘুনাথপুরের এই প্রকল্পে নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজের শেষ দিকে বিভিন্ন ঠিকা সংস্থা কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে তাই শ্রমিকের চাহিদা নেই বলেই কাজ দেওয়া যাচ্ছে না।”

dvc raghunathpur thermal plant water corridor ash pond
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy