এ ভাবেই মাটিতে বসে ক্লাস করছে রামপুরহাট গার্লসের ছাত্রীরা। ছবি: অনির্বাণ সেন।
শিক্ষিকার জন্য চেয়ার-টেবিল রয়েছে। আর শিক্ষিকার সামনে সিমেন্টের মেঝেতে শতরঞ্চি পেতে ক্লাস করছে দুই শতাধিক ছাত্রী। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই এ ভাবেই দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস করে আসছে ছাত্রীরা। এই চিত্রটা রামপুরহাট গার্লস হাইস্কুলের। এই সেক্রেটারি খোদ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রামপুরহাট শহরে দু’টি গার্লস স্কুল রয়েছে। তার মধ্যে এই স্কুলটিতে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাড়ানো হয়। অন্যটিতে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণির ইংরেজি এবং বাংলা বিষয়ের ক্লাস এই ভাবে চলে। এই স্কুলে এ বছর এখনও পর্যন্ত ৩১৪ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। জায়গার অভাবে এখনও প্রায় ৭০ জন ছাত্রী ভর্তির জন্য রোজ স্কুলে এসে ঘুরে যাচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছায়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনে স্কুলে ২৭৫ জনের জায়গায় ৩১৪ জন ছাত্রী ভর্তি করানো হয়েছে। এর পরেও এখনও তালিকায় রয়েছে ৭০ জন। ১০০ জন ছাত্রীকে নতুন করে ভর্তির জন্য সরকারি অনুমোদন দরকার। দেখা যাক কী হয়।”
এ দিকে রামপুরহাট শহরের আর একটি গার্লস হাইস্কুলে কেন উচ্চ মাধ্যমিক চালু হচ্ছে না তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছায়াদেবী-সহ শহরের বাসিন্দারা। ছায়াদেবী বলেন, “শহরে আর একটি গার্লস স্কুল আছে। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক চালু হলে আমাদের উপর এত চাপ নিতে হত না।” শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “রামপুরহাট হাইস্কুল ফর গার্লস কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তাঁদের স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক চালু করার জন্য শিক্ষা দফতরে কোনও আবেদন করেননি। আবেদন করুক আর না করুক ওই স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক চালু করতেই হবে। তা না করলে ওই স্কুলে আরও চাপ আসছে। আর এত ছাত্রী একটি স্কুলে কী করেইবা নেওয়া যায়।” আশিসবাবু জানান, রামপুরহাট গার্লস হাইস্কুলে যে সমস্ত ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য আবেদন করেছে তাদের ভর্তির অনুমোদনের জন্য রামপুরহাট গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষকে উচ্চশিক্ষা দফতরে আবেদন করতে বলা হয়েছে। এ দিকে রামপুরহাট হাইস্কুল ফর গার্লস-এর সেক্রেটারি সুশোভন হাজরার পাল্টা দাবি, “আবেদন করা হয়নি তা ঠিক নয়। বামফ্রণ্ট সরকার থাকাকালীন দু’বার আবেদন করা হয়েছে। কিছু আইনি জটিলতা থাকার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক সে আমলে চালু হয়নি। নতুন করে আবেদন জানানো হবে।”
অন্য দিকে, বেঞ্চ না থাকায় মেঝেতে বসেই ক্লাস করতে হয় বলে স্বাভাবিক ভাবে ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। শীতের দিনে ঠান্ডাতে বসতে খুব কষ্ট হয় তাদের। আবার বর্ষার সময় স্যাঁতসেঁতে ঘরে ক্লাস করতে হয়। কিন্তু কেন এত দিন বেঞ্চ দেওয়া হয়নি? প্রধান শিক্ষিকা ছায়াদেবীর জবাব, “২৮৭১ জন ছাত্রী পড়ে। স্কুলের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ টাকায় ভবন নির্মাণ করে ক্লাস ঘর তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে সব হবে।” সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা আধিকারিক অনিন্দ্য মণ্ডল বলেন, “কোনও স্কুলে বেঞ্চ করার জন্য আলাদা করে টাকা দেওয়া হয় না। স্কুল নিজস্ব তহবিল থেকে বেঞ্চ তৈরি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাঁচিয়ে কোনও স্কুল বেঞ্চ নির্মাণ করতে পারে।”
আশিসবাবু অবশ্য বলেন, “সাংসদ বা বিধায়করা তাঁদের এলাকা উন্নয়ন খাতের টাকায় বেঞ্চ কেনার জন্য কোনও খরচ করতে পারেন না। জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি করতে বলেছেন।” এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা জানান, মৌখিক ভাবে সেক্রেটারি তাঁকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলে এ নিয়ে কোনও রেজিলিউশন করা হয়নি। যার জন্য এখনও বেঞ্চ তৈরির জন্য আবেদন করা হয়নি। অভিভাবকদের অভিযোগ, “রামপুরহাট গার্লস হাইস্কুলে বর্তমানে ৪১ জন শিক্ষিকা। অথচ পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন ঠিক মতো হয় না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে ৯৫০ জন পড়ুয়া থাকলে স্কুলে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা উচিত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই স্কুলে তা হয়নি। প্রধান শিক্ষিকার জবাব, “অভিযোগ সঠিক নয়। তবে কোথাও অসঙ্গতি থাকলে তা অবশ্যই দূর করা হবে। স্কুলে একজন কর্মচারি নিয়ে কাজ করতে হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy