প্রতারণার অভিযোগে ধরপাকড় চলছে। গ্রাম ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তাও দু'দিন ধরে আদিবাসী গ্রামে পড়ে থেকে ওড়িশার এক মহিলা একাংশ বাসিন্দার এসআইআরের ফর্ম পূরণ আটকে রেখেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার ফর্ম পূরণের শেষ দিন। মহিলার চ্যালেঞ্জ, ‘‘এসআইআর পশেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রাম ছাড়ব না। দেখব প্রশাসন কী ভাবে এখানে এসআইআর করায়!’’
পুলিশ স্পষ্ট করেছে, ‘সমাজবাদ অর্ন্তরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকার’ নামের যে সংগঠনের প্রতিনিধিরা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের গ্রামে এসে একাংশ আদিবাসীকে ভুল বুঝিয়ে এসআইআরে বিরত করছে, সেটি ভুয়ো সংগঠন। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত চলছে। তারপরেও দমে না গিয়ে ওই সংগঠনের নেত্রী ওড়িশা থেকে আসা গীতা মুর্মু কিসের জোরে রানিবাঁধের মুচিকাটা গ্রামে পড়ে আছেন, প্রশ্ন সেখানেই।
প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, ওই গ্রামের ডুংরিডি ও ভেদুয়াশোল পাড়ার ৬৬ জন বাসিন্দা এখনও এসআইআরের ফর্ম পূরণ করেননি। গীতা স্পষ্টই জানালেন, তিনি প্রায় সাত মাস মাঝি সরকারের হয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি নাকি এই রাজ্যের দায়িত্বেও রয়েছেন। গীতার বক্তব্য, ‘ওড়িশা থেকে সংগঠনের এক কর্মীকে বিনা দোষে বাঁকুড়া পুলিশ গ্রেফতার এনেছে। আমরা ওড়িশা বাদামপাহাড় থানায় তাঁর নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেছি।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘এই দেশ আসলে মাঝি সরকারের। ভারত সরকারের আওতায় আদিবাসীরা পড়ে না। তাই এসআইআর করার প্রশ্নও নেই। প্রশাসনকে এটাই বোঝাতে আমি এখানে এসেছি।’’গ্রামবাসী গীতাকে আগলে রেখেছেন। তাঁর জন্য বিশেষ রান্না হচ্ছে। ওই আদিবাসী মানুষজনের বক্তব্য, ‘‘মাঝি সরকারের পরিচয়পত্র বানিয়ে ফেলেছি। আর ভারত সরকার বা রাজ্য সরকারের পুলিশ-প্রশাসন আমাদের কিছু করতে পারবে না। বাস, ট্রেন, বিমানেও চড়ব বিনামূল্যে।’’
স্থানীয় রুদড়া পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে, জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনও রাজ্যের শাসক দলের। রানিবাঁধ বিধানসভার বিধায়ক খোদ রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি। তারপরেও আদিবাসীদের এমন ভুল বোঝানোর পরিস্থিতি তৈরি হল কী করে, প্রশ্ন উঠেছে। জানা যাচ্ছে, গত অক্টোবর থেকেই মাঝি সরকারের পরিচয়পত্রের জন্য ফর্ম পূরণ শুরু হয়েছিল। এসআইআরে বেঁকে বসার পরে বিষটি প্রকাশ্যে আসে।
বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এই ঘটনাতেই প্রমাণিত তৃণমূল নেতৃত্ব জনবিচ্ছিন্ন। পুলিশ প্রশাসনেরও প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তাই প্রতারণা চক্রের নেত্রী সদর্পে সরকারি কাজ আটকে পুলিশ-প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস পাচ্ছে।’’ রানিবাঁধের ওই গ্রামের জেলা পরিষদ সদস্যা বিভাবতী টুডুর বক্তব্য, ‘‘এলাকার কিছু লোক ওড়িশায় যাতায়াত করছে বলে খবর পেয়েছিলাম। তবে বিষয়টা এত দূর গড়াবে ভাবিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই গ্রামের মানুষকে বোঝাতে দফায় দফায় আমি গিয়েছি। ওই মহিলার সঙ্গেও কথা বলেছি। কিছু মানুষকে বোঝাতে পারলেও অনেককেই পারলাম না।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই আমাদের বুঝেসুঝে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।’’ মাঝি সরকারের নামে প্রতারণার অভিযোগে বিপিনবিহারী বেসরার পরে হুগলির পান্ডুয়ার বাসিন্দা বলাই সরেনকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার পুলিশ। বুধবার বলাইকে পুরুলিয়া আদালত দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায়।পুলিশ জানায়, বিপিন ও বলাই দু’জনেই মাঝি সরকারের ফর্ম পূরণ করিয়ে টাকা তুলছিল। সেই টাকায় ভাগ ছিল তাদের। বাকি টাকা পাঠানোহত ওড়িশায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)