Advertisement
E-Paper

বিদ্যুতের টাওয়ারে বাসন্তী, নামাতে কাকুতি গ্রামবাসীর

শাড়ি গুটিয়ে তরতরিয়ে কয়েকশো ফুট উঁচু বিদ্যুতের টাওয়ারে উঠে পড়েছিল বধূটি। প্রথমে ঘটনাটি কারও নজরে আসেনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই উঁচু থেকে আর্ত চিৎকার আসতেই লোকজন বেরিয়ে দেখেন, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের টাওয়ারে চড়ে বসেছে ওই বধূ! এক হাতে বিদ্যুতের একটি তার ধরে আছেন। সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার বাঁধগড় গ্রামের ওই বধূটিকে ওই খুঁটি থেকে নামাতে চার ঘণ্টা হিমসিম খেল পুলিশ দমকল ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৮
বিদ্যুতের তার ধরে বাসন্তী। সোমবার সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

বিদ্যুতের তার ধরে বাসন্তী। সোমবার সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

শাড়ি গুটিয়ে তরতরিয়ে কয়েকশো ফুট উঁচু বিদ্যুতের টাওয়ারে উঠে পড়েছিল বধূটি। প্রথমে ঘটনাটি কারও নজরে আসেনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই উঁচু থেকে আর্ত চিৎকার আসতেই লোকজন বেরিয়ে দেখেন, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের টাওয়ারে চড়ে বসেছে ওই বধূ! এক হাতে বিদ্যুতের একটি তার ধরে আছেন। সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার বাঁধগড় গ্রামের ওই বধূটিকে ওই খুঁটি থেকে নামাতে চার ঘণ্টা হিমসিম খেল পুলিশ দমকল ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসন্তী মাহাতো নামে বছর তিরিশের ওই মহিলার বাপের বাড়ি এই গ্রামেই। কয়েক বছর আগে পাড়ার রাহেড়ডি গ্রামে তাঁর বিয়ে হয়েছে। গত রবিবার বাবার সঙ্গে তিনি তিনি বাঁধগড়ে ফিরেছেন। কিন্তু কেন তিনি হঠাৎ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে চড়ে বসলেন তা অবশ্য তাঁর পরিজন বা পড়শিদেরও বোধগম্য হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উপরে উঠে চিৎকার করে ওই মহিলা কি সব বলছিল, নীচ থেকে ভাল করে বোঝা যাচ্ছিল না। বাসন্তীর বাবা তেজু মাহাতো বলেন, “পুজোয় মেয়েকে ঘরে নিয়ে এলাম। আগে কখনও সখনও একটু অস্বাভাবিক আচরণ করত। সে জন্য চিকিৎসাও চলছে। তবে কখনও এ ভাবে উঁচু টাওয়ারে ওঠার মতো ঘটনা ঘটায়নি।” তিনি যখন এ কথা বলছেন, তখন ঠা ঠা রোদের মধ্যে তাঁর মেয়ে ওই বিদ্যুতের খুঁটির মাথায় দাঁড়িয়ে সমানে চিৎকার করে যাচ্ছেন। কী কী হয় আতঙ্কে, নীচে কয়েকশো মানুষ দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছেন।

জনতার মধ্যে থেকে কেউ চিৎকার করে বলছেন, “নীচে নেমে এসো। কী হয়েছে বলো?” কেউ বলছেন, “কাল থেকে দুর্গা পুজো, এখন কেউ কি ওরকম করে? নীচে নেমে আয়।” কিন্তু টাওয়ারের মাথায় দাঁড়িয়ে বাসন্তীর সে সবে কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই। তিনি কখনও নীচে, কখনও উপরে তাকিয়ে হাত ছুঁড়ে কী সব বলে যাচ্ছিলেন। নীচে কার্যত অসহায় দাঁড়িয়ে বাবা তেজু মাহাতো, দাদা দেবেন মাহাতো।

খবর পেয়ে বাহিনী নিয়ে ততক্ষণে হাজির পুরুলিয়া মফস্সল থানার ওসি উত্তম মণ্ডল। সঙ্গে মহিলা পুলিশ কর্মীরাও রয়েছেন। তাঁরাও হাত নেড়ে, চিৎকার করে বাসন্তীকে নেমে আসার অনুরোধ করছিলেন। কে শোনে কার কথা! ঘণ্টাখানেক পরে ছুটে আসেন ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজেও বাসন্তীকে নেমে আসতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু সে সব শুনলে তো। সবারই আশঙ্কা, যদি মেয়েটা পা পিছলে পড়ে যায়! চলে আসেন দমকম কর্মীরাও।

বাসন্তীর বাড়ির লোকেরা জানান, বেলা ১টায় স্নান সেরে না খেয়েই বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে এসেছিল। তারপরেই চড়ে বসে ওই খুঁটিতে। এ দিকে ঘণ্টা চারেক ধরে রোদের মধ্যে মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি করলে যে কোনও লোকেরই পেটের মধ্যে ছুঁচোর ডন-বৈঠক শুরু করে দেওয়ার কথা। তাই পুলিশ ও দমকল কর্মীরা বাসন্তীকে নীচে নেমে জল ও খাবার খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু করেন। এতেই কাজ দেয়। বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ, খুঁটি ধরে আস্তে আস্তে নামতে থাকেন বাসন্তী। খাবার ও জল খাওয়ানো হল তাঁকে। তাঁকে ধরে নিয়ে পুলিশ কর্মীরা বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মনোহর গড়াই বলেন, “রুদ্ধশ্বাস নাটক। নামবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। ও নামতে সবাই হাঁফ ছেড়েছে।”

high tension electrical cables basanti purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy